ঈদের আগের দিন হাতে মেহেদি পরার চল বেশ প্রাচীন। মেহেদির পাতা তুলে তা বেটে হাতে লাগানো আমাদের পুরোনো রীতি। পরে ধীরে ধীরে টিউব পাওয়া যেতে থাকে ব্যবহারযোগ্য মেহেদি। এতে অবশ্য হাত রঙিন করার প্রক্রিয়া বেশ সহজ হয়ে যায়। এর ফলে হাতে আঁকা নকশার ধরনও পাল্টে যায় ধীরে ধীরে। এখন ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রাম স্ক্রল করলে বিভিন্ন স্টাইলে হাতে-পায়ে টিউব মেহেদি দিয়ে আঁকা নকশা চোখে পড়ে। বর্তমানে অর্নামেন্টাল, জ্যামিতিক, পদ্ম, ম্যান্ডেলা, লতা, বিন্দু, লেইস ইত্যাদি নকশা বেশি নজরে পড়ে।
তবে মেহেদির রঙে হাত রাঙালেই তো আর হবে না। নকশাও করতে হবে হাতের ধরন বুঝে। কারও হাতের তালু বেশ বড় আকারের। সেসব হাতে ভরাট নকশা সুন্দর দেখায়। আর আকারে ছোট হাতের তালুতে লতা-পাতার মতো লম্বা নকশায় মানাবে বেশ। এ ক্ষেত্রে হাতের আঙুলে নকশা করার সময় ভাবনায় রাখতে হবে সবগুলো আঙুলে নকশা আঁকবেন নাকি শুধু একটি বা দুটো আঙুলে আঁকবেন। এটা নির্ভর করবে নকশার ধরনের ওপর।
যদি নকশার ধরন হাতের কবজির কোনা থেকে লম্বা হয়ে তর্জনীর দিকে উঠে যায়, তাহলে একটি আঙুলের ভরাট নকশা ভালো লাগবে। বাকি আঙুলগুলোয় মেহেদি না পরলেও ভালো লাগবে। আর যদি করতেই হয় সে ক্ষেত্রে খুব হালকা কোনো নকশা করতে হবে। তবে বেশির ভাগ নারী হাত ভরে মেহেদি পরতেই ভালোবাসেন। সে ক্ষেত্রে কনুই থেকে আঙুল জুড়ে মেহেদি লাগালেই ভালো লাগবে।
যেভাবে মেহেদি পরতে পারেন, হাতের তালুতে বৃত্ত
এককথায় জঞ্জালমুক্ত মেহেদির নকশা এটি। একই সঙ্গে দেখতেও ভালো লাগে। হাতের তালুতে আঁকা বৃত্তের মাঝখানে ফুলের মোটিফ এবং বাইরে চার ধারে পাতার নকশা। কবজিতে লাইনিং থাকতে পারে। সঙ্গে আঙুলে হালকা নকশা থাকে।
গয়নায় অনুপ্রেরণা
হাতে গয়না পরতে যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা হাত পাঞ্জার আদলে হাতের ওপরের পিঠে মেহেদির নকশা করতে পারেন। অনেকে ব্রেসলেট, বাজু ও আংটির নকশাও করেন। মিনিমাল নকশার মধ্য়ে এগুলো একধরনের অভিজাত রুচিরও সন্নিবেশ ঘটায়।
ত্রিভুজাকৃতির নকশা
যাঁরা ডিসস্ট্রেসড জিনস ও ট্রেন্ডি টপস পরে ঘুরে বেড়াবেন ঈদের দিন, তাঁরা অনায়াসে হাতের পিঠে ত্রিভুজাকৃতির নকশা এঁকে নিতে পারেন। এ ধরনের নকশা আঁকাও সহজ, একই সঙ্গে ট্রেন্ডিও।
অন্যান্য
এখন লেইসের নকশায় অনেকে হাতে মেহেদি পরেন। সাধারণত হোয়াইট মেহেদি বা সাদা মেহেদিতে এ ধরনের নকশা প্রচলিত বহির্বিশ্বে। একটু তামাটে রঙা ত্বকে সাদা রঙের মেহেদিতে আঁকা লেইস নকশা বেশ জনপ্রিয়। হাতে ছাড়াও পায়ে এই নকশা করেন অনেকে। তবে মেহেদি পাতা থেকে তৈরি মেহেদি দিয়েও এই নকশা হাতে করলে ভালো লাগে দেখতে। হাতে ছাড়াও অনেকে ঘাড়ে, পায়ের গোড়ালির ওপরে, কোমরে, কাঁধে মেহেদি দিয়ে ট্যাটুর মতো নকশা আঁকেন। ইদানীং ট্রেন্ড সেটাররা এ ধরনের মেহেদি দিয়ে আঁকা ট্য়াটুর দিকেই ঝুঁকছেন।
পায়ে পরতে চাইলে
পায়ে পরার নকশা একটু ভিন্ন হয়। পায়ে আলতার মতো নকশা করা যেতে পারে। পায়ের চারদিকে লম্বা ধরনের বা লতা-পাতার নকশা এঁকে মাঝ বরাবর ম্যান্ডেলার মতো গোলাকার নকশায় ভরিয়ে নিলে ভালো লাগবে। আবার হাতের নকশার সঙ্গে মিল রেখে পায়ের এক পাশ বা দুই পাশে নকশা করলে জমকালো ভাব আসবে।
মেহেদির রং গাঢ় করার উপায়
একটি বাটিতে লেবুর রস ও পরিমাণমতো চিনি মিশিয়ে নিন। মেহেদি পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার পর তুলার বলের সাহায্যে এই মিশ্রণটি মেহেদির ওপর লাগিয়ে নিন। এবার শুকানোর জন্য অপেক্ষা করুন। আরেকটি উপায় হলো, বেশ কিছু লবঙ্গ একটি প্যানে ভালোমতো গরম করে নিন। তারপর ধোঁয়া উঠতে শুরু করলে হাত প্যানের ওপরে রাখুন। তাপ যতক্ষণ সহনীয় থাকবে ততক্ষণ হাত প্যানের ওপরে রাখুন। মেহেদির রং মন মতো হবে।