চাকরি জীবনে অনেকেরই মনে হয়, তাদের জন্য নির্ধারিত কর্মঘণ্টা অনেক বেশি। এর ফলে, কর্মক্ষেত্রে ক্লান্তি চলে আসে। তবে নতুন এক গবেষণায় ক্লান্তি দূর করার দুটি কার্যকর উপায় উঠে এসেছে। এর একটি হলো—নিয়মিত ক্ষুদ্র বিরতি (মাইক্রোব্রেক) নেওয়া এবং সুপারভাইজারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটি, ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটি এবং নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এই দুটি বিষয় মানা হলে, তা কর্মদিবসে বিকেল বেলায়ও কর্মক্ষমতা ধরে রাখা বা ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে কানাডা থেকে প্রকাশিত পিয়ার রিভিউড জার্নাল কন্টেম্পোরারি অ্যাকাউন্টিং রিসার্চে।
গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোব্রেক নেওয়া এবং সুপারভাইজারের সহযোগিতা পাওয়া দিনের শেষে ক্লান্তি কমায়। এর পাশাপাশি, এই দুটি বিষয় কর্মীর ঘুমের গুণগত মান এবং পরের দিনের কর্মশক্তিও বাড়ায়। এই দুই পদ্ধতি একত্রে প্রয়োগ করলে ক্লান্তি মোকাবিলায় সর্বাধিক কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়।
ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেসের গবেষক লিন্ডসে অ্যান্ডিওলা বলেন, ‘প্রথমত, মাইক্রোব্রেক হলো ক্লান্তি ব্যবস্থাপনার একটি সহজ এবং ব্যয়বহুল পদ্ধতি, বিশেষ করে কাজের চাপ বেশি থাকলে। দ্বিতীয়ত, সুপারভাইজারের সহযোগিতা ক্লান্তি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই দুই উপায় একত্রে ব্যবহার করলে ব্যস্ত মৌসুম বা উচ্চ চাপের সময় কাজ করা পেশাজীবীদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হতে পারে।’
গবেষকেরা প্রথমে ৪৪ জন অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাজের অভ্যাস সম্পর্কে একটি জরিপ চালান। এরপর ১৭৯ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে ক্লান্তি এবং মাইক্রোব্রেকের ওপর একটি নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষা পরিচালনা করেন। গবেষণায়, মাইক্রোব্রেক এবং নিয়মিত সুপারভাইজার সহযোগিতা—উভয়ই ক্লান্তি কমাতে কার্যকর প্রমাণিত হয়। তবে কর্মরত অ্যাকাউন্ট্যান্টদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিগুলোর সুফল বছরের ব্যস্ততম সময়েই বেশি প্রভাব ফেলেছে। এই বিষয়টি ইঙ্গিত করে যে, এগুলো উচ্চ চাপের সময় বেশি কার্যকর।
এ ছাড়া, পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাইক্রোব্রেক নেওয়া অডিটের নির্ভুলতাও বাড়ায়। অধিক চাপের সময় অ্যাকাউন্টিং কোম্পানিগুলোর নির্ভুলতার মান কমে যেতে পারে, যা এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালো করে।
গবেষকেরা বলেছেন, ‘পাবলিক অ্যাকাউন্ট্যান্টরা প্রায়ই সময়সীমার চাপ, দীর্ঘ কাজের সময় এবং অতিরিক্ত কাজের চাপে ভোগেন। এই কাজের চাপ স্বল্পমেয়াদে অডিটের গুণগত মানকে প্রভাবিত করতে পারে এবং দীর্ঘ মেয়াদে কর্মীদের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা বাড়ায়।’
কর্মীদের জন্য মাইক্রোব্রেক এক মিনিটের মতো ছোট হতে পারে। এটি হতে পারে একটি সংক্ষিপ্ত সংবাদ পড়া, এক কাপ কফি খাওয়া বা কয়েকটি স্ট্রেচিং করা। অন্যদিকে, সুপারভাইজারের সহযোগিতা হতে পারে কর্মীদের খোঁজখবর নেওয়া, সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া বা তাদের কাজের প্রশংসা করা।
যদিও কর্মীরা সুপারভাইজারের কার্যক্রমের ওপর প্রভাব রাখতে পারেন না, তবে তাঁরা ক্ষুদ্র বিরতি নিয়ে নিজ নিজ ক্লান্তি কমানোর উদ্যোগ নিতে পারেন। এই গবেষণায় মাইক্রোব্রেকের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়নি, তবে মাত্র এক মিনিটের বিরতিতেই ফল পাওয়া গেছে।
গবেষকেরা বলেন, ‘এই কৌশলগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের সুরক্ষা এবং কাজের মান উন্নত করতে পারে। এর ফলে আরও টেকসই ও উৎপাদনশীল কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব।’