Homeলাইফস্টাইলঅপার্থিব সুন্দর মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়ক

অপার্থিব সুন্দর মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়ক


মারিশ্যা। রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার এক দুর্গম ইউনিয়ন। এই জনপদে যখন-তখন উটকো ঝামেলা হাজির হয়ে যায়। তাতে বহু কিছুই ঘটে যেতে পারে। সিদ্ধান্ত হলো, সেখানকার মাঝিপাড়া সীমান্ত সড়ক ভ্রমণ করব।

দলেবলে সারা রাত গাড়িতে ঘুমিয়ে সকাল প্রায় ৭টায় মারিশ্যা পৌঁছানো গেল। স্থানীয় সাংবাদিক ও পর্যটনবান্ধব সজ্জন ব্যক্তি ওমর ফারুক সুমন আগেভাগেই আমাদের জন্য ইউনিয়ন বিশ্রামাগার ও মোটরবাইক প্রস্তুত রেখেছিলেন। বিশ্রামাগারে কিছুটা সময় কাটিয়ে বের হয়ে যাই আশপাশে ঘুরে দেখতে। স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতা হয়। ভ্রমণ মানে জানা, শেখা। ঘুরতে যাওয়া অঞ্চলের বসবাস করা মানুষের সংস্কৃতি জানাটাও ভ্রমণের অন্যতম অনুষঙ্গ। তাই শিখছি স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে। হঠাৎ মোবাইল ফোনে কল এল, বাঘাইছড়িতে দুই পক্ষের তুমুল লড়াই ও গোলাগুলি চলছে। সাবধানে থাকতে হবে। সেই লড়াইয়ের কারণে আমাদের ভাড়া করা মোটরসাইকেলগুলো আসতে দেরি করল। সকাল ৯টায় আসার কথা থাকলেও সেগুলো উপস্থিত হলো দুপুর প্রায় ১২টায়। দেরি না করে দে ছুট।

দ্রুতগতির বাইকে মাদ্রাসাপাড়া গ্রাম পেরিয়ে, মধ্যম বাঘাইছড়ি ছাড়িয়ে জিরো পয়েন্ট গিয়ে থামা হলো। কিছু একটা পেটে দিতে হবে মনে হতেই পাহাড়ি পাকা কলা পাওয়া গেল হাতের কাছে। গোগ্রাসে গিলে আবার বাইক ছোটানো হলো।

সেই বাইক গিয়ে থামল কচুছড়ি বিজিবি ক্যাম্প পার হয়ে ১৪ কিলোমিটার দূরে। থামল মানে, একেবারেই থেমে গেল। পথের সৌন্দর্য আমাদের থামিয়ে দিল।

চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। সেই পাহাড়ের ফাঁক গলে পথ চলে গেছে দূরে। পাহাড়ের ঢালুতে জুমঘর। লোভ সামলাতে না পেরে তরতর করে চৈত্রের প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সড়ক থেকে কয়েক শ ফুট নিচে নেমে যাই। গাছের ছায়ায় বসে সঙ্গে আনা মুড়ি আর চানাচুর তেল-লবণ ছাড়াই পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে মাখানো হলো। ক্ষুধার পেটে তেল-লবণ ছাড়া মুড়ি মাখা খেতে খারাপ লাগে না। ঝিরঝির বাতাসে মুড়ি খেতে খেতে জুমঘরের বাঁশের মাচাঙে শুয়ে পড়লাম। দৃষ্টি সীমানায় ঢেউখেলানো পাহাড় ছাড়া আর কিছু নেই। সে দৃশ্যের কথা লিখে বোঝানো মুশকিল। বেশ কিছুক্ষণ কাটিয়ে ‘কুত্তির’ ঠান্ডা পানি পান করে আবারও ছুটতে হলো। যতই এগোতে থাকি, ততই পথের প্রেমে মজে যাই। দেখতে দেখতে ১৭ কিলোমিটার পথ পার হয়ে এসেছি। এখানেও দাঁড়াতে হলো।

প্রকৃতি এখানে রূপবতী কিন্তু শব্দহীন। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা তাক করলেই একেকটা ফ্রেম একেবারে ছবি হয়ে যায়! ফ্রেম বাছব নাকি দেখব! বাইকচালক আবদুল লতিফ দক্ষ গাইডও বটে।

তিনি জানিয়ে দিলেন, যেতে হবে আরও প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে, মাঝিপাড়ায়। ডানে আর্মি আর বাঁয়ে বিজিবি ক্যাম্প। সামনে উদাস করা মিজো পাহাড়ের সারি কাঁটা তার দিয়ে আলাদা করা। এর মাঝেই উঁচু পাহাড় না কেটে জঙ্গল ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে পিচঢালা রাস্তা তৈরি হয়েছে সাজেকের উদয়পুর পর্যন্ত। বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে এই সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে বেশ দক্ষতার সঙ্গেই কাজ চলছে এখনো।

মাঝিপাড়া থেকে আরও কিছুটা ওপরের পাহাড়ে থাকা আর্মি ক্যাম্পের কাছাকাছি চলে যাই। সেখান থেকে মিজোরামের মোজাম গ্রামের বাজার স্পষ্ট দেখা যায়। আরও স্পষ্ট দেখা যায় দুর্গম মারিশ্যার নজরকাড়া প্রকৃতি। যত দূর চোখ যায়—শুধু পাহাড় আর পাহাড়। এ যেন পাহাড়েরই রাজ্য। মুগ্ধ নয়নে অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করবে। পর্যটকেরা সাধারণত মাঝিপাড়া পর্যন্তই ঘুরে ফিরে আসেন।

কিন্তু আমরা চললাম আরও সামনে, বড় হরিণার দিকে। সর্বনাশ! কিছুটা পথ যেতেই মনে হলো, আমরা আর আমাদের মাঝে নেই। এ যেন অ্যানিমেশনের মায়াবী জগৎ! স্থানীয়দের ভাষ্যমতে আমরা দাঁড়িয়ে আছি জিকজ্যাক পয়েন্টে। এখানে চলতে চলতে মনে হচ্ছে, আমরা মোটরবাইকসহ পাহাড়ের ভেতর ঢুকে যাচ্ছি। জিকজ্যাক পয়েন্টের সড়কটুকু সম্পূর্ণ ঢেউখেলানো পাহাড়ের মাঝে তৈরি করা হয়েছে। অনেক উঁচু থেকে বাইক নেমেই আবার উঁচুতে উঠতে হয়। সত্যিই অসাধারণ। এপাশটায় না এলে ভ্রমণের অপূর্ণতাই থেকে যেত।

ভাড়ায় চালিত বাইকারেরা এবার ফিরে যেতে চাইছেন। কিন্তু নেশা যে আমাদের তুঙ্গে। যেতে হবে আরও দূরে। যেমন ইচ্ছা তেমন বাস্তবায়ন। চলল গাড়ি সামনে। যেতে যেতে বরকল উপজেলার বড় হরিণায় চলে গেলাম। পিচঢালা পথ শেষ। সামনে চলছে নির্মাণকাজ। বাইক রেখে হাইকিং-ট্র্যাকিং শুরু। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে সুখ-দুঃখের আলাপ করি। নিরাপত্তার দোহাই তুলে বাইকাররা তাড়া দেন। ধরতে হয় ফিরতি পথ।

যাতায়াত

জেলা রাঙামাটি হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যাতায়াত সহজ। সে ক্ষেত্রে ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে খাগড়াছড়ি ও মারিশ্যা পর্যন্ত। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে সীমান্ত সড়ক ঘুরে আসা যাবে।

থাকা-খাওয়া

খাগড়াছড়ি জেলা শহর ও মারিশ্যায় বিভিন্ন মানের হোটেল, মোটেল এবং গেস্টহাউস রয়েছে। খাবারদাবারের জন্য অনেক রেস্টুরেন্টও রয়েছে সেখানে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত