Homeআওয়ামী লীগ৫ই আগস্টের পরবর্তী  গ্রেপ্তার সংস্কারে  মন্ত্রী, সাংসদ, উপদেষ্টা, আমলাদের মামলার বিবরণ

৫ই আগস্টের পরবর্তী  গ্রেপ্তার সংস্কারে  মন্ত্রী, সাংসদ, উপদেষ্টা, আমলাদের মামলার বিবরণ

জুলাই-আগস্টের সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর  শেখ হাসিনা সরকারের পাঁচজন প্রতিমন্ত্রী ও তিনজন উপমন্ত্রীসহ এ পর্যন্ত ২৭ জন মন্ত্রীসহ  তিনজন উপদেষ্টা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া কারাগারে আছেন সরকারের ৪৩ জন সংসদ সদস্য ও ১১ জন আমলা।

পুলিশের দুজন মহাপরিদর্শক (আইজিপি)সহ ২৮ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইসঙ্গে আপিল বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও পাঁচজন সাংবাদিকও গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।

গত ১৩ই আগস্ট প্রথম গ্রেপ্তার হন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

এরপর ১৫ই আগস্ট ঢাকার আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা দায়ের হয়। হত্যা, অপহরণ ও গুমের অভিযোগে শেখ হাসিনা, তাঁর মন্ত্রিসভা ও সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত  মামলা হচ্ছে।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, “জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় ছাত্র, সাধারণ জনতা, শিশু-কিশোরদের হত্যা করেছে। এসব হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং যত দ্রুত সম্ভব আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবে পুলিশ।”

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ৮৪৪ জন নিহত হয়েছেন এবং ১৩,২৫৮ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ এবং  আদালতের  সুত্রানুসারে, শুধু ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে  ৩১০টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি তাঁর মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে। তবে ঢাকার বাইরে শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলার সংখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।

গ্রেপ্তার হয়েছেন যেসকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও উপদেষ্টা

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতে,  সর্বশেষ গত ৩০শে জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক

নৌমন্ত্রী শাজাহান খান

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু

সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি

বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম

গণপূর্তমন্ত্রী প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান

সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি)

সাবেক =]তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি)

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার

রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন

প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক

গণপূর্তমন্ত্রী উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন

কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ

পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন

পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস

গ্রেপ্তার হওয়া মন্ত্রীদের মধ্যে কেবল সাবের হোসেন চৌধুরী ও এম এ মান্নান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, অন্যরা এখনো কারাগারে আছেন।

সূত্র অনুযায়ী, গ্রেপ্তার মন্ত্রীদের মধ্যে আদালত আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বিরুদ্ধে মোট ৫১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী

শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী

এর মধ্যে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক

বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার

আদালত প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

গ্রেপ্তার হওয়া তিন উপমন্ত্রী:

পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব

যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়

পরিকল্পনা উপমন্ত্রী শহীদুজ্জামান সরকার

গ্রেপ্তার সংসদ সদস্যগণ

গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের অন্তত ৩৮ জন সংসদ সদস্য গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে।

গ্রেপ্তার হওয়া সংসদ সদস্যদের তালিকা:

চিফ হুইপ, পটুয়াখালী-২ – আ স ম ফিরোজ

ঢাকা-৭ – হাজি সেলিম

হাজি সেলিমের ছেলে – সোলাইমান সেলিম

মাদারীপুর-৩ – আবদুস সোবহান গোলাপ

হবিগঞ্জ-৪ – সৈয়দ সায়েদুল হক

নেত্রকোনা-৫ – আহমদ হোসেন

কক্সবাজার-৪ – আবদুর রহমান বদি

চট্টগ্রাম-১১ – এম এ লতিফ

সিরাজগঞ্জ-৪ – তানভীর ইমাম

সিরাজগঞ্জ-৩ – আব্দুল আজিজ

ঢাকা-১০ – শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন

বরিশাল-২ – শাহে আলম তালুকদার

কুষ্টিয়া-৪ – সেলিম আলতাফ জর্জ

ঢাকা-১৩ – সাদেক খান

বগুড়া-৬ – রাগেবুল আহসান

রাজশাহী-৪ – এনামুল হক

রাজশাহী-৬ – রাহেনুল হক রায়হান

নরসিংদী-৩ – সিরাজুল ইসলাম

ভোলা-২ – আলী আজম মুকুল

সিরাজগঞ্জ-২ – জান্নাত আরা হেনরী

খুলনা-৬ – রশীদুজ্জামান মোড়ল

সিলেট-২ – ইয়াহিয়া চৌধুরী

সুনামগঞ্জ-৫ – মহিবুর রহমান মানিক

খুলনা-৪ – আব্দুস সালাম মুর্শেদী

ঠাকুরগাঁও-২ – দবিরুল ইসলাম

ঠাকুরগাঁও-২ – মাজহারুল ইসলাম

চট্টগ্রাম-১৫ – আবু রেজা মুহাম্মদ নদভী

বরগুনা-১ – ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ শম্ভু

ঝিনাইদহ-২ – তাহজীব আলম সিদ্দিকী

লক্ষ্মীপুর-১ – এম এ আউয়াল

চট্টগ্রাম-৬ – এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী

ঝিনাইদহ-১ – নায়েব আলী জোয়ার্দার

বরিশাল-৩ – গোলাম কিবরিয়া টিপু

জামালপুর-৫ – আবুল কালাম আজাদ

ঢাকা-৭ – মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন

রাজশাহী-৪ – আবুল কালাম আজাদ

রাজশাহী-৩ – আসাদুজ্জামান আসাদ

ঝালকাঠি-১ – শাহজাহান ওমর

গাইবান্ধা-২ – মাহবুব আরা বেগম গিনি

নোয়াখালী-৪ – একরামুল করিম চৌধুরী

কুমিল্লা-৮ – নাসিমুল আলম চৌধুরী

নীলফামারী-৩ – রানা মোহাম্মদ সোহেল

সংরক্ষিত মহিলা আসন – আহমেদ নাজমীন সুলতানা

সংরক্ষিত মহিলা আসন – মোসা. সাফিয়া খাতুন

গ্রেপ্তার আমলাবৃন্দ

৫ আগস্টের পর মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন অন্তত ১১ জন আমলা।

গ্রেপ্তার আমলাদের তালিকা:

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব – নজিবুর রহমান

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব – মো. মহিবুল হক

সমাজকল্যাণ ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব – মো. ইসমাইল হোসেন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব – আমিনুল ইসলাম খান

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব – মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব – মোস্তাফা কামাল উদ্দীন

নির্বাচন কমিশন সচিব – হেলালুদ্দীন আহমেদ

সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব – এ কে এম জি কিবরিয়া মজুমদার

যুব ও ক্রীড়াসচিব – মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব – শাহ কামাল

নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব – মো. জাহাংগীর আলম

গ্রেপ্তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাগণ

জুলাই-আগস্টে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদেরহত্যা মামলায় পুলিশের দুই মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) পুলিশের অন্তত ২৮ জন সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছেন।

গ্রেপ্তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাগণ:

আইজিপি – চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন

আইজিপি (সাবেক) – শহীদুল হক

ডিএমপি কমিশনার – আসাদুজ্জামান মিয়া

অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক – মশিউর রহমান

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার – আলেপ উদ্দিন

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক – মেজর (এনটিএমসি) মহাপরিচালক – মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান
চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান – রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মোহাম্মদ সোহায়েল
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা
পুলিশ ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা ও আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, গুম ও অপহরণের অভিযোগে ভুক্তভোগীরা মোট ২৭৬টি মামলা দায়ের করেছেন। অন্যদিকে, ঢাকা জেলার বিভিন্ন থানা ও আদালতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও অন্তত ২৭টি মামলা হয়েছে। অর্থাৎ, ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০৩টি, যার মধ্যে দুই শতাধিক মামলা সরাসরি হত্যার অভিযোগে করা হয়েছে।

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত