জাতীয় স্বাস্থ্য খাত সংস্কারের রূপরেখা ঘোষণা করল বিএনপি। যুক্তরাজ্যের জাতীয় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচসি) আদলে ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’ গড়ে তোলাই হবে এর লক্ষ্য। গতকাল গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংস্কারের এ রূপরেখা তুলে ধরেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি (নির্বাচিত হলে) সবার বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ইতিমধ্যে নিজেদের ঘোষিত সংস্কারের রূপরেখা অনুযায়ী উন্নত কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে প্রচলিত ব্যবস্থার আলোকে এ স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। বিএনপির এ স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা আজও নিশ্চিত হয়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষাও তেমন পরিকল্পিত নয়। দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জন করেনি। চিকিৎসাসেবার জন্য সাধারণ মানুষের বিদেশে যাওয়ার হার এখনো উঁচু। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সর্বজনীন ও জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন দলের প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে দারিদ্র্যবিমোচন না হওয়া পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আরও সম্প্রসারিত করবে। প্রাথমিক ও প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পর্যাপ্তসংখ্যক প্রশিক্ষিত নারী ও পুরুষ এবং পল্লিস্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবস্থা করা হবে। সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা, শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে মেয়াদের বিচারে তিন ধাপে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবে স্বল্পমেয়াদি (এক থেকে তিন বছর) পরিকল্পনায় গ্রামীণ স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার গুণগত মান উন্নয়ন এবং একে কার্যকর প্রাথমিক রেফারেন্স সেন্টার হিসেবে রূপান্তর করা, প্রয়োজনীয় বিশেষায়িত সেবা নিশ্চিত করা, পরিকল্পিত পরিবার ও জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের জিপি (জেনারেল প্র্যাকটিশনার) ব্যবস্থার আদলে প্রত্যেক নাগরিককে পর্যায়ক্রমে একজন এলাকাভিত্তিক নিবন্ধিত সরকারি চিকিৎসকের অধীনে রাষ্ট্রীয় খরচে সর্বোত্তম স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্যমান জেলা পর্যায়ের হাসপাতাল ও বিশেষায়িত স্তরের স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করা ও সঠিক রেফারেন্স ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হবে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টা হেলপলাইন, জরুরি চিকিৎসাসেবা, দুর্ঘটনা-পরবর্তী সেবা, দ্রুত স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্যসেবায় ন্যায়বিচার, রোগী ও সেবা প্রদানকারী উভয়ের জন্য সমতাভিত্তিক আইন প্রণয়ন, সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে চিকিৎসক ও রোগীর সম্পর্ক উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রস্তাব রয়েছে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায়।
‘মধ্যমেয়াদি’ (এক থেকে পাঁচ বছর) এবং ‘দীর্ঘমেয়াদি’ (১০ বছর পর্যন্ত) পরিকল্পনার মাধ্যমে গোটা স্বাস্থ্য খাতে আমূল পরিবর্তনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। স্বাস্থ্য খাতে নিজেদের সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের স্বাস্থ্য খাতে সংস্কারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আমাদের প্রস্তাব উপস্থাপন করছি। তবে আমরা আশা করি না যে, তাঁরা এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা রাখেন বা সে সময় পর্যন্ত তাঁরা থাকবেন।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা জাতির জন্য এ প্রস্তাবগুলো এজন্য উপস্থাপন করছি যে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি এসব প্রস্তাব গ্রহণ করে ভবিষ্যতে জনগণের যে সরকার আসবে তাঁরা সেগুলো বাস্তবায়ন করবে। আর জনগণ যদি বিএনপিকে পছন্দ করে আগামী নির্বাচনে সরকারে পাঠায়, তাহলে আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই, স্বাস্থ্য খাতের সংস্কারে আমাদের উপস্থাপিত সবকিছু বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ফরহাদ হালিম ডোনার, দলের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের সমন্বয়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।