রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হামলার শিকার হয়ে ‘ন্যায়বিচার পাননি’ দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে যে নাটকীয়তা, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নিরবতা এবং তাদের নানামুখি ষড়যন্ত্রের গন্ধ আমরা গত কয়েকদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি; তাতে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, আওয়ামী লীগের যে সংস্কৃতি ছিল, আর বর্তমান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের সংস্কৃতির মধ্যে তফাৎটা কোথায়?’
শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খানসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসানের ওপর হামলা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া বক্তব্যের জেরে সভায় উপস্থিত একদল লোক তার ওপর হামলা চালায়। পরে আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন।
সেদিন প্রসঙ্গ টেনে সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান বলেন, গত ৪ জানুয়ারি শহীদ মিনারে আমার ওপর যে অতর্কিত হামলা হয়েছে, এই হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমে হামলাকারীদের ছবি-ভিডিও প্রচার হয়েছে। হামলাকারীরা চিহ্নিত এবং তাদের গ্রেফতার করা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জন্য আইনগতভাবে দায়িত্ব। আমরা অত্যন্ত ব্যথিত ও লজ্জিত।
‘শেখ হাসিনার শাসনামলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ২১ বার হামলার শিকার হয়েছেন’, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে আমরা একটা হামলারও বিচার পাইনি। কিন্তু বিপ্লব-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা চিন্তাও করি না যে, আমাদের ওপর আবারও আক্রমণ হবে। তারপরও আমার ওপর এমন একটি আক্রমণ হয়েছে, এই হামলার অতি দ্রুত বিচার হবে; এটা আমরা আশা করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক আন্দোলনে ২ হাজার ছাত্র-জনতা জীবন দিয়েছে এ কারণে নয় যে, ফারুক হাসানের পা আপনারা আঘাত করে ভেঙে দেবেন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে কপালে ছুড়ি দিয়ে কুপিয়ে ২ ইঞ্চি জখম করবেন। লাখ লাখ ছাত্র-জনতা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে এ কারণে নয়। আমাদের চাপে পড়ে দুজন হামলাকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আজ আমরা ধিক্কার জানাই, কীভাবে এই হামলাকারী মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে জামিন পায়।’
আওয়ামী লীগের আমলের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, লোক দেখানো গ্রেফতারের পর আদালত থেকেই জামিন হয়ে যায়। আমরা একই ঘটনাগুলো হাসিনার আমলে দেখেছি। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর আক্রমণ করতো। এরপর প্রেস ব্রিফিংয়ে এসে বলতো যে- তারা নিজেরা নিজেরাই ধাক্কাধাক্কি করে আহত হয়েছে। তারপরও লোক দেখানোর জন্য যদি দুয়েকজনকে গ্রেফতার করা হতো, তারা একদিক দিয়ে ঢুকতো, অন্যদিক দিয়ে ফুলের মালা গলায় দিয়ে বেরিয়ে আসতো। একইভাবে আমার ওপর হামলাকারীরা আদালত থেকে ফুলের মালা গলায় দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। আসার পর তাদের দুধ দিয়ে গোসল করানো হয়েছে। বিপ্লব পরবর্তী এই বাংলাদেশে এর চেয়ে জঘন্য, লজ্জার ঘটনা আর আছে বলে আমার মনে হয় না। আমি জানি না, ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার লজ্জা পেয়েছেন কিনা, আমরা লজ্জা পেয়েছি।
আক্ষেপ করে ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা এই বিশ্ববরেণ্য, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকে প্রধান চেয়ারে বসিয়েছিলাম, আমাদের আশা ছিল তিনি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। তার মাধ্যমে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে, বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়বিচার পাবে। কিন্তু তিনি চেয়ারে বসার পরও আমরা যে ধরনের ঘটনাগুলো দেখতে পাচ্ছি, আসলে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার, ইউ আর নট ফিট ফর বাংলাদেশ।’
শহীদ মিনারে সেদিন হামলাকারীদের ছাত্র কিংবা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত না বলার আহ্বান জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, ‘এই হামলাকারীরা শুধু সন্ত্রাসী। এই সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জামিন দেওয়া হয়েছে। তা না হলে তারা ৬ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে জামিন পায়?’
হামলাকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় না আনলে, গণ অধিকার পরিষদ যা করার তা করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ফারুক হাসান।