Homeরাজনীতিবিএনপির কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে

বিএনপির কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে


বিবিসি বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কথাবার্তায় মিল’ খুঁজে পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিএনপির ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ দাবিকে ‘এক–এগারোর’ পুনরাবৃত্তি ডেকে আনার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। নাহিদ ইসলাম আরও বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ। বিএনপি কেন তা মনে করছে না, তা স্পষ্ট করা উচিত।

এর আগে গত বুধবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, সরকার নিরপেক্ষ না থাকলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দরকার হবে।

মূলত এখান থেকেই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য চলছে। সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর প্রতিক্রিয়ার পরও পাল্টাপাল্টি প্রতিক্রিয়া অব্যাহত।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা মির্জা আব্বাস এক–এগারোর পুনরাবৃত্তির দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, বিএনপিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক–এগারোতে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থানের সাদৃশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির নেতারা। রুহুল কবির রিজভী সরকারকে ‘গড়িমসি’র অভিযোগ এনে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার কথার প্রতিধ্বনি করছে।

এর জবাবে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, নির্বাচন ও সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন এবং ধৈর্য ধরে ঐকমত্যে পৌঁছানো উচিত। সংঘাত এড়িয়ে একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন তিনি। নাহিদ এও বলেছেন যে, তিনি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বের হয়ে যাবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে আরেকটা এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত হিসেবে ফেসবুক পোস্টে করেন তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

এ প্রসঙ্গে নাহিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এক এগারো এবং মাইনাস টু–এর আলাপটা কিন্তু সর্বপ্রথম বিএনপিই রাজনীতির মাঠে এনেছে কিছুদিন আগে।’

অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি ও অংশীজনদের সমর্থনেই সরকার গঠন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বিএনপি মহাসচিবের ‘নিরপেক্ষতা’ সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেন।

নাহিদের ভাষায়, এই সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বা সরাতে, দেশি–বিদেশি চক্রান্তের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক অবস্থানের সঙ্গেও সাদৃশ্য দেখছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সে কিন্তু স্ট্যাটাস দিয়েছে যে, এটা অবৈধ ও অনির্বাচিত সরকার, একটা নিরপেক্ষ সরকার লাগবে, এর আন্ডারে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। সো একই টোনে আমরা যখন কথা বলতে দেখছি, এটা কিন্তু একটা সন্দেহের তৈরি করে।’

আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজ থেকে শুক্রবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার’ উল্লেখ করে এই সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না এবং পরবর্তী নির্বাচন ‘একটি নতুন (তত্ত্বাবধায়ক) সরকারের অধীনে হতে হবে’, আরাফাতকে উদ্ধৃত করে এমন পোস্ট দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে নাহিদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি না যে এটা তারা (বিএনপি) ওই উদ্দেশ্য থেকে বলেছে, কিন্তু তাদের কথার টোনটা কিন্তু আওয়ামী লীগের সেই টোনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।’

নাহিদ বলেন, ‘বিচার কার্যক্রম, সংস্কার, ও নির্বাচন এসবগুলোই বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার হলেও ‘বিএনপি কেন জানি মনে করে এই সরকারটা হয়েছে কেবল একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’

আর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে তো আমরা নিরপেক্ষই মনে করছি। বিএনপি কেন মনে করছে না নিরপেক্ষ আচরণ, বিএনপির এটা স্পষ্ট করা উচিত।’

নির্বাচনের সময় এগিয়ে এলে এসব বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলা সম্ভব বা কোনো অভিযোগ থাকলে নিরপেক্ষতার স্বার্থে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সেটা তখন সরকার বিবেচনায় নিতে পারবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

নাহিদ বলেন, ‘প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বা সাংবিধানিক পদে যদি বিএনপিপন্থী লোকজন থাকে, সেটাও নিরপেক্ষতা লাগবে কিনা, তাহলে সেটাও বিবেচনা করতে হবে। কিন্তু এখন তো এটার সময় আসেনি।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য বিবিসির সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এই সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারলে তবেই নির্বাচন পরিচালনা পর্যন্ত থাকবে। তা না হলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে। তবে এই সরকারের ‘নিরপেক্ষতা’ এখনো কোনো প্রশ্ন নেই বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন না তুললেও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা নানা সময় নানা কথা বলেছেন। সর্বশেষ শুক্রবারও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘যখন শুনি আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, এ যেন মনে হয় শেখ হাসিনার কথারই প্রতিধ্বনি। কারণ, শেখ হাসিনা বলতেন আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র।’

মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘অনেকে বলেন বিএনপি শুধু নির্বাচন-নির্বাচন করে। আরে ভাই নির্বাচন-নির্বাচন করি না। খামাখা এসমস্ত আজেবাজে কথা আপনারা বইলেন না।’

‘দ্রুত নির্বাচন’ দেওয়ার কথা বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিদিনই বলা হচ্ছে। আগামী জুলাই–আগস্টেও নির্বাচন করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ নিয়ে অবশ্য নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচনের যে সম্ভাব্য সময়সীমা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদকাল এবং নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। সে পর্যন্ত ধৈর্য রেখে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সামনে এগোনো প্রয়োজন।

নাহিদ বলেন, ‘যখন গুম বা জুলাই গণহত্যার বিচার কার্যক্রম এগোনো হচ্ছে এবং সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে, হয়তো সামনের মাসেই হয়তো আলোচনা, নেগোসিয়েশন, বারগেনিং (দর-কষাকষি) শুরু হবে, বিএনপির বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কারের আলাপগুলোতে মনোযোগী হওয়া উচিত, বিচার কার্যক্রমে সহযোগিতা করা উচিত, সেসময় তারা বলছে, এ সরকারের চেয়ে নিরপেক্ষ একটা সরকার প্রয়োজন।’

এইভাবে কথার লড়াই চললেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এবং বিএনপির নেতারা বরাবর সংঘাত বা বিভেদ সৃষ্টি না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলছেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত