আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি জানিয়েছে, সরকারের সামনে এর কোনও বিকল্প নেই। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ঢাকা সমাবেশে’ সিপিবির নেতারা এ কথা বলেন।
‘জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন; গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা; নিত্যপণ্যের দাম কমানো; জান-মালের নিরাপত্তা; শোষণ-নিপীড়ন-বৈষম্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থা’ বদলের লক্ষ্যে এ সমাবেশ করে সিপিবি।
সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেন, সরকারের সংস্কার প্রস্তাবের উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে, এটি ইতিবাচক অগ্রগতি।
দলের সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেরি না করে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা— এর কোনও বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের ওপর ভরসা রাখতে হবে। তা না করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চাইলে নানা অপশক্তি সুযোগ নেবে।
তাই নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা, নিত্যপণ্যের দাম কমানো এবং জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান প্রিন্স।
অন্তর্বর্তী সরকার নানা কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়— অভিযোগ করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, ‘কেউ যদি মনে করেন একটু উল্টিয়ে দিয়েছি, ক্ষমতায় অনেক দিন থাকি। থাকতে কি পারবেন? নানা ধরনের ছলে বলে কৌশলে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করতে চায়। আমরা বলতে চাই— ভোট জনগণ দিতে পারেনি, ভয়ের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছিল। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গিয়েছিল, এসব কারণে মানুষ বিক্ষুব্ধ ছিল। এ জন্য হাসিনাকে দেশছাড়া করা হয়েছিল। আর আপনি যদি সংস্কারের ট্যাবলেটের কথা বলে জিনিসপত্রের দাম কমাতে না পারেন। জনজীবনে শান্তি দিতে না পারেন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-আইএমএফের কথা শোনেন। তেলের দাম, গ্যাসের দাম কমাতে না পারেন। নতুন করে ভ্যাট বসিয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ান। তাহলে আপনি তো একই পথে চলছেন।’
সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী বয়ান মিথ্যা ও কুৎসিত। তারা সেটাকে ব্যবহার করেছে লুটপাটের জন্য। আওয়ামী লীগের বয়ানের কবর চাই। কিন্তু সেই কারণে যদি কেউ মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিতে চান, তাহলে মনে রাখবেন আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দিইনি।’
তিনি বলেন, ‘জামায়াত মাঠে নেমেছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দলিল হয়েছিলো— সেখানে আত্মসমর্পণকারীরা লিখেছিলো, ‘আমরা পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও অক্সিলারি ফোর্স— রাজাকার, আলবদর, জামায়াতসহ রাজনৈতিক অক্সিলারি ফোর্স।’
সমাবেশ থেকে জানানো হয়, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করবে সিপিবি। ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ কর্মসূচি পালিত হবে। এই সময়ে দেশের অন্তত হাজার কিলোমিটারজুড়ে পদযাত্রা করা হবে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি সমাবেশ করলেও ঢাকা প্রথমবারের মতো বড় আয়োজন করলো সিপিবি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সমাবেশ সারাদেশের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ শেষে একটি মিছিলও করেন নেতাকর্মীরা।