Homeরাজনীতিনাহিদের পদত্যাগ, যোগ দিচ্ছেন নতুন দলে

নাহিদের পদত্যাগ, যোগ দিচ্ছেন নতুন দলে


রাজপথে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মো. নাহিদ ইসলাম। ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া নতুন দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত নাম চূড়ান্ত না হওয়া এ দলের আত্মপ্রকাশকে কেন্দ্র করে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নেতা-কর্মীরা। দলের নেতারা বলেছেন, নাহিদ ইসলামের পদত্যাগ দল গঠন প্রক্রিয়ারই অংশ। ফলে দলের বাকি থাকা সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করা ত্বরান্বিত হবে।

গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে পদত্যাগপত্র জমা দেন মো. নাহিদ ইসলাম। পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি। ফলে আমি আমার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া সমীচীন বলে মনে করছি।’

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনসহ সরকারের যতগুলো কমিটিতে তিনি ছিলেন তার সব কটি থেকে পদত্যাগের কথাও জানান নাহিদ ইসলাম।

পদত্যাগের পর যমুনার সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় নতুন দলে যোগ দেওয়ার জন্য পদত্যাগ কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ। নতুন যে রাজনৈতিক শক্তি বা দল গঠন হচ্ছে, সেখানে অংশগ্রহণ করতে আমার অভিপ্রায় আছে। জনগণের সঙ্গে মিশে আবারও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য মাঠে থেকে কাজ করার লক্ষ্যে সরকার থেকে পদত্যাগ করেছি।’

দলে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহের কথা নিশ্চিত করলেও পদের ব্যাপারে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান নাহিদ। নতুন দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলটির ঘোষণা ২৮ ফেব্রুয়ারি। সেদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেদিন জানা যাবে।’

তবে নতুন দলের উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত অন্য নেতারা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করেছেন, নাহিদই সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বায়ক হতে যাচ্ছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে দেশব্যাপী পরিচিতি পান মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।

সরকারে অভিজ্ঞতা নিয়ে বক্তব্য

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দুজন (মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) এবং পরে আরেকজন (মাহফুজ আলম) অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেন। এ বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘তখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করাটা আমাদের কাছে যৌক্তিক বলে মনে হয়েছিল। গত সাড়ে ৬ মাস সরকার কাজ করেছে, হয়তো আশানুরূপ ফলাফল এখনো পায়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে, সরকার স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে।’

গত সাড়ে ৬ মাসে কাজ করার চেষ্টা করেছেন জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘দুটি মন্ত্রণালয়ের বাইরেও আমাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে কাজের চেষ্টা করেছি, তার ফলাফল হয়তো সামনে জনগণ পাবে। ৬ মাস খুবই কম সময়, আমার কাজ জনগণ মূল্যায়ন করবে।’

সীমাবদ্ধতার বিষয়ে তিনি বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল। আন্দোলনের পর পুলিশের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি রয়েছে।

নতুন দলের শেষ প্রস্তুতি

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সমমনা নাগরিক সমাজের নতুন দলটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে শতাধিক সদস্যের প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। প্রস্তুতি কমিটি অনুষ্ঠানের ধরন, শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, উপস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছে। নেতারা জানিয়েছেন, দলের নাম, বিশদ সাংগঠনিক কাঠামো, নেতৃত্ব, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ইত্যাদি চূড়ান্ত করতে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

দল গঠনের প্রক্রিয়ায় যুক্ত জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক সদস্য গতকাল জানিয়েছেন, দলের নাম এবং নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। তবে প্রাথমিকভাবে ১০১ থেকে ১৫১ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। এই কমিটির আহ্বায়ক ছাড়া শীর্ষ অন্যান্য পদ নিয়ে আলোচনা এখনো চলমান। ‘নেতৃত্বের সমন্বয়ের লক্ষ্যে’ কমিটির বিভিন্ন ধরনের বিন্যাস নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নামের প্রসঙ্গে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, প্রায় ৩০টির মতো নাম নিয়ে আলোচনা রয়েছে। কমিটির অধিকাংশ সদস্য দলের নামে ‘নাগরিক’ শব্দটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।

এদিকে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার প্রস্তাব থাকলেও তাঁর দলে থাকা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে নেতৃত্ব-সংক্রান্ত আলোচনাকে কেন্দ্র করে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব রাফে সালমান রিফাতসহ নাগরিক কমিটিতে থাকা অন্যান্য সাবেক শিবিরনেতার সঙ্গে মূল নেতৃত্বের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। নতুন দল ঘোষণার পর কয়েকজন জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকেও পদত্যাগ করতে পারেন।

বিএনপিসহ কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে গত সোমবার জুনায়েদ ও রিফাতের চীন সফরে যাওয়া নিয়ে নাগরিক কমিটি জানিয়েছে, এই সফরে কেউ কমিটির প্রতিনিধিত্ব করছেন না। চীনের ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে প্রতিনিধিদলটি ওই সফরে গেছে। জুনায়েদ ও রিফাত উভয়েই জানিয়েছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে চীনে যাওয়া প্রতিনিধিদলটিতে যুক্ত হয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নাগরিক কমিটির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছেন, নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের ওপর দলের চূড়ান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নির্ভর করছিল। পদত্যাগের পর এখন এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত