জাতীয় নাগরিক পার্টির নাম ঘোষণা করেছেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ইসমাইল হোসেন রাব্বির বোন মিম আক্তার। তিনি প্রথমে দলের নাম ঘোষণা করেন। পরে আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব হিসেবে আখতার হোসেনের নাম ঘোষণা করেন। পরে আংশিক কমিটি পড়ে শোনান সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।
মানিকমিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ ভবনের পাশের সড়কে পূর্বমুখী স্টেজ করা হয়। স্টেজের পেছনে ছিল ডিজিটাল বোর্ড। সামনের প্রায় দুই হাজার চেয়ার দেওয়া হয় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নিহত ও আহতদের পরিবারে সদস্য এবং আমন্ত্রিত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা বসেন। এরপরেই নতুন রাজনৈতিক দলের কর্মী, সমর্থকেরা অবস্থান করেন।
রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহামচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা আকবর খান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন্দ, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের নেতা আহমেদ আবদুল কাদের, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজী, ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আজহারুল ইসলাম, এবি পার্টির নেতা দিদারুল আলম প্রমুখ।
কূটনীতিবিদদের মধ্যে ঢাকায় ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস রেন্ডাল, পাকিস্তান হাইকমিশনের কাউন্সেলর কামরান ধাঙ্গালও এসেছেন।
দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির কর্মী-সমর্থকেরা উপস্থিত হতে থাকেন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত মানুষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকেন। এরপরই বিভিন্ন জেলা হতে আগত জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করে, পরে নেতা-কর্মীদের অবস্থান খেজুরবাগান মোড় পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। মিছিলে আগতদের অধিকাংশই ছিলেন তরুণ-তরুণী। তবে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষকেও দেখা যায়।
বিকেল চারটা ১৫ মিনিট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের আত্মপ্রকাশের কর্মসূচি শুরু হয়। শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত, গীতা, বাইবেল, ত্রিপিটকসহ ধর্মগ্রন্থ পাঠ করা হয়। সাড়ে চারটার দিকে জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়।
মিরপুর থেকে আসা মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিড়ে জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক বন্ধুবস্তের সূচনা হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তে নিজেকে সামিল করতে এসেছি।’
আবু ইউসুফ মাসুদ বলেন, ‘দেশে তরুণদের মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে মানুষের যেই আকাঙ্খা তার বাস্তবায়ন হোক সেটাই চাই।’
মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে বসে কথা হয় অটোরিকশা ব্যবসায়ী মধ্যবয়সী আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ দেখতেই একাই উপস্থিত হয়েছেন। নতুন রাজনৈতিক দলের প্রত্যাশার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি নতুন রাজনৈতিক দল দুর্নীতিমুক্ত দেশ, সুশাসনের দেওয়ার জন্য কাজ করবে। আর তাদের রাজনীতি হওয়া উচিত ক্ষমতার জন্য নয়, ন্যায়ের জন্য। এজেন্ডা নিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারলে তাঁরা সফল হবেই।’