তেল-গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর অর্থনৈতিক দর্শনের কারণে দেশে বৈষম্য বেড়েছে। এ দর্শনে নির্ভরশীল কাঠামো রেখে দেশে বৈষম্য কমবে না বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন তিনি।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সাপ্তাহিক একতা আয়োজিত ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ কোন পথে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর ভিত্তি করে ৭২-এর সংবিধান রচিত হয়েছে। কিন্তু এটা সংস্কার করা যাবে না, ব্যাপারটা তা নয়। এ সংবিধানে সমস্যা আছে। এ সংবিধানে ক্রমাগত বৈষম্য বেড়েছে। লুণ্ঠন, স্বৈরাচারের ভিত্তি হয়ে উঠেছে এ সংবিধান। ব্যক্তি ও জাতিগত নিরাপত্তা ক্রমাগত উপেক্ষা করা হয়েছে এ সংবিধানে।
গোলটেবিল আলোচনায় ‘রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনি সংস্কার’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতিসংঘের উন্নয়ন গবেষণার সাবেক প্রধান ও এশীয় প্রবৃদ্ধি গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা নতুন করে লেখার প্রয়োজন আছে কিনা সন্দেহ আছে। তবে পরিমার্জন করতে হলে ২০২৪-এ জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে প্রকাশিত গণতন্ত্র, সাম্য, এবং মানবিক মর্যাদার জন্ম-জনআকাঙ্খার কথা নিশ্চয়ই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের ত্যাগ ও আকাঙ্ক্ষার স্মরণ করাও যথার্থ হবে। প্রস্তাবনায় মুক্তিযুদ্ধ ও প্রজাতন্ত্র শব্দাবলী প্রতিস্থাপনের প্রয়াস অপ্রয়োজনীয় ও অবাঞ্ছনীয়।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় মূলনীতিগুলো প্রতিস্থাপনের সুপারিশটি পরিপক্ব নয়। প্রস্তাবিত পাঁচটি মূলনীতি— সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ, গণতন্ত্র এগুলোর মধ্যে যৌক্তিক এবং ঐতিহাসিক গ্রন্থন অনুপস্থিত। সুতরাং এ নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন। বৈষম্যবিরোধী গণঅভ্যুত্থানের পটভূমিতে সংবিধান পরিমার্জনের উদ্যোগ গ্রহণকারী কমিশন কেন ২(ক) ধারা বাতিল করার সুপারিশ প্রদানে অপারগ হলো তা বোধগম্য নয়।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আরও বলেন, সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন সংসদ এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অন্তর্বর্তী সরকারের সুপারিশ করেছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে পুনরায় সুপ্রিম কোর্টের রাজনীতিকরণের বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। যদি আনুপাতিক নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রত্যাশিত শুভ পরিবর্তন ঘটে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা দৃঢ় এবং নিশ্চিত হতে পারে এবং তখন নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রয়োজনীয়তা নাও থাকতে পারে।
সভায় ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও আর্থ-সামাজিক সংস্কার’ শীর্ষক আরেকটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর চেয়ারম্যান ও সাপ্তাহিক একতার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ।
তিনি বলেন, শুধু ভালো নীতি প্রণয়ন নয়, তার বাস্তবায়নের জন্য সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আর্থিক ও জ্বালানি খাত, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় জরুরি নীতিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন।
সাপ্তাহিক একতার সম্পাদক আফরোজান নাহারের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. মোস্তাফিজুর রহমান, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, ডাকসুর সাবেক জিএস ডা. মুশতাক হোসেন, সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি কমরেড মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান প্রমুখ।