Homeরাজনীতিআগামী নির্বাচন সহজ নয়, জনগণ ম্যাটারস: তারেক রহমান

আগামী নির্বাচন সহজ নয়, জনগণ ম্যাটারস: তারেক রহমান


‘আগামী নির্বাচন বিএনপির জন্য এত সহজ নয়, জনগণ ম্যাটারস’ এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তারেক রহমান। তিনি বলেন,  ‘আমি আজকে গত কয়েক মাস ধরে বলছি, সামনের নির্বাচন এত সহজ নয়… আপনারা যত সহজ ভাবছেন। নিজের মনে যতই বড়াই করুন, আরে বিএনপির তো শাখা-প্রশাখা একদম গ্রাম পর্যন্ত আছে… অন্যদের কি আছে? তাই তো বড়াই করছেন… নো। থাকতে পারে আপনার শাখা-প্রশাখা… আমাদের নেতাকর্মীরা তৈরি করেছেন সেই শাখা-প্রশাখা… গ্রাম পর্যন্ত দলকে নিয়ে গেছে, ওয়ার্ডে ওয়োর্ডে দলকে নিয়ে গেছে।’

রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিএনপির আলোচনা সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই আহ্বান জানান। রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়ার কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা।

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘কিন্তু তারপরেও জনগণ ম্যাটারস, জনগণ ম্যাটারস। সেই জনগণ হচ্ছে আমাদের শক্তি, জনগণ হচ্ছে আমাদের সমর্থন, জনগণ হচ্ছে আমাদের শক্তি। জনগণ সঙ্গে না থাকলে… জনগণ ৫ আগস্ট বুঝিয়ে দিয়েছে। কাজেই আমরা যদি ভুল করি, জনগণ আবার কোনও একটা কিছু বুঝিয়ে দেবে… তখন কিন্তু পস্তাতে হবে। তখন কিন্তু হায় হুতাশ করতে হবে’, বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান দৃঢ়তার কণ্ঠে বলেন, ‘এখনও সময় আছে… আসুন, আসুন, আসুন, আমরা জনগণের পাশে থাকি, জনগণের সাথে থাকি।’

তিনি বলেন, ‘যারা এমন কিছু করবে, যা আপনাকে-আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, যা আমার দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, আমাদের দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে… আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলবো, আমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। আজকে শহীদ জিয়ার ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে যদি শহীদ জিয়াকে সত্যিকারভাবে আমাদের স্মরণ করতে হয়, যদি শহীদ জিয়াকে সত্যিকারভাবে সন্মান জানাতে হয়… আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তার জন্য দোয়া করছি— সুস্থতার জন্য। তবে দেশনেত্রী সবচাইতে খুশি হবেন যখন দেখবেন, জনগণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপির প্রতি… বিষয়টি খালেদা জিয়ার সৈনিক হিসেবে আপনাদের উদ্দেশে বলা দরকার…।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কে ছোট নেতা, কে গ্রামের নেতা, কে ইউনিয়নের নেতা, কে বড় নেতা, কে বিভাগীয় নেতা, কে কেন্দ্রীয় নেতা বিষয়টা এটি নয়। বিষয়টি হচ্ছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদেরকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে।’

‘আমাদেরকে এমনভাবে দাঁড়াতে হবে যাতে জনগণ বুঝে যেন আমরা তাদের সাথে আছি, জনগণ বুঝে যেন আমরা তাদের পাশে আছি। জনগণ বুঝে যে জনগণ যেভাবে চায়, আমরা সেভাবেই আছি… জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা সেভাবে তাদের পাশে আছি…। আজকে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের শপথ, এই হোক আজকে আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

তারেক রহমান বলেন, ‘রাষ্ট্রের সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে যেখানে নির্ধারিত হবে সেখানে… সেটি জাতীয় সংসদ হোক, সেটি পৌর সভা হোক, সেটি ইউনিয়ন পরিষদ হোক যেটিই হোক না কেন, অর্থাৎ জবাবদিহি…ভোটই একমাত্র, ভোটার একমাত্র… জবাবদিহি রাষ্ট্রের সমাজের সব স্তরে যদি আমরা জবাবদিহি তৈরি করতে পারি, তাহলে ধীরে ধীরে আমরা এগোতে সক্ষম হবো।’

বিএনপির নেতাকর্মীদের ১৭ বছরের নির্যাতন-নিপীড়ন, মামলা-কারাভোগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা মোটামুটি একটা গড় হিসাবে জানি, বিএনপির ৬০ লাখ  নেতাকর্মীর নামে বিভিন্ন মিথ্যা-গায়েবি মামলা আছে। শুধু মাত্র জুলাই-আগস্ট মাসে যে আন্দোলন জনগণে যে আন্দোলন, সেখানে বিএনপিরই প্রায় পাঁচশ’র মতো নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। শত হাজারের মতো নেতাকর্মী বিভিন্নভাবে জখম হয়েছেন। আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা যারা অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন— ওই মোটর সাইকেলের বহরের যারা, তারা কি অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছে? অবশ্যই নয়।’

‘মানুষ হিসেবে হয়তো আমরা বিভ্রান্ত হতেই পারি, কিন্তু যে পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে এই মুহূর্তে আজকে যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি— সহকর্মীবৃন্দ, আমি বিনীতভাবে আপনাদের কাছে করজোরে অনুরোধ করবো… এই আলোচনায় শুধু নয়, সমগ্র বাংলাদেশে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার যত কর্মী-সৈনিক আছেন, আপনাদের কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো, দয়া করে ওই মোটর সাইকেলওয়ালাদেরকে ভিড় করতে দেবেন না…। দয়া করে আপনারা শহীদ জিয়াউর রহমানের জানাজার চিত্রটা মনে করবেন এবং দয়া করে আপনারা বিভ্রান্তিকর কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘সবাই বলে যে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, বিভিন্ন আলোচকরাও বলেন, যারা বিএনপি করেন না… দেশে একটি স্বাভাবিক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের সর্বোচ্চ সম্ভাবনা আছে সরকার গঠনের। আমি আপনাদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই, মোটরসাইকেলওয়ালাদের তাদের নিজ স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বা আমাদের কিছু নেতাকর্মী বিভ্রান্ত হয়ে যদি এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যেখানে অন্য কেউ সরকারন গঠন করলো। তখন কি আপনি মনে করেন আপনি ভালো থাকতে পারবেন? বিএনপির নেতাকর্মীরা কি ভালো থাকতে পারবে?’

এই সময়ে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশন মিলনায়তনে কর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন ‘না’।

‘কারা চলে যাবে কী চলে আসবে আমরা জানি না। তবে তা আমাদের কারও জন্য ভালো হবে না। কোনও কারণে যদি অন্য কেউ সরকার গঠন করে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনার এতটুকু চিন্তা এতটুকু সেন্স থাকতে হবে, অন্য কেউ যদি সরকার গঠন করে বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে হোক, আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে হোক, সেটি কি দেশ ও জাতির জন্য ভালো হবে?’

নেতাকর্মীরা আবারও সমন্বরে বলেন, ‘না’।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে চাই যে, আপনারা দৃঢ়ভাবে না বললেন— সেটা বুঝে শুনে বলেছেন। আপনারা যদি বুঝেশুনে না বলে থাকেন, তাহলে সঠিকই বলেছেন। তাই যদি ঠিক হয় এখনও আামাদের কাছে সময় আছে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর, এখনও আমাদের কাছে সময় আছে মানুষ যেভাবে চায় সেভাবে চলার জন্য। দিন শেষে কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনাকে এই জনগণের কাছে, এই মানুষটার কাছে, এই ভোটারটার কাছে যেতে হবে।’

‘দুদিন আগে আমি এক ব্যক্তির টকশো দেখছিলাম… সেই আলোচক কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন যে, এখনও বুঝে উঠতে পারছি না যে, স্বৈরাচার পালিয়ে গিয়েছে তারা আবার মাথাচাড়া দেবার চেষ্টা করছেন। করতেই পারে তারা। কিন্তু তারা যদি ভোটের মাঠে নামেন, কী চেহারায় মানুষের সামনে হাজির হবে… এই জুলাই-আগস্ট মাসে ২ হাজার মানুষকে যে হত্যা করেছে, প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষকে জখম করেছে, ইউনিসেফের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রায় ৬৪ জন শিশুকে তারা হত্যা করেছে… সেই জবাব কিন্তু তাদেরকে মানুষের কাছে দিতেই হবে।’

বিএনপির নেতাকর্মীদেরও জনগণের কাছে জবাব দিতে হবে উল্লেখ করে তারেক বলেন, ‘আমরা যদি সেদিন আসা পর্যন্ত আমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনও কিছু করেন, তখন জবাব আপনাকেও দিতে হবে… যখন আপনি ভোটের  সময়ে মানুষের কাছে যাবেন, তখন জবাব দিতে হবে… তাই না!’

‘ওই সময়ে সে যদি বলে ওই মিঞা এই লোক এসে আমার সাথে এই ব্যবহার করেছে বা আমার প্রতি এই অন্যায়-অবিচার করেছে, তোমার দলের কর্মী… তখন আপনি যদি বলেন, সে আমার কেউ না। তাতে কি ওই লোক মেনে নেবে। মেনে নেবে না। আমাদের সামনে পরিষ্কার উদাহরণ আছে জনগণ যখন ক্ষিপ্ত হয়, জনগণ কীভাবে স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। এখনও এসব এই ধারা জ্বলজ্বল করছে। দিনের শেষে জনগণই সব। আমরা সবাই সেই জনগণের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছি, সমর্থন পেতে হলে ভালোভাবে মানুষ সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে, কেন আপনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে চোখ বন্ধ করে রাখবেন?’

তারেক রহমান বলেন, ‘নিজেকে যত বড় মনে করি না কেন, জনগণ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নাম বলবো না কিছু কিছু রাজনৈতিক শক্তি যেই হোক না কেন, ছোট-বড় হোক না কেন, তারা বিভিন্নভাবে আমাদের বিপক্ষে এই মোটরসাইকেলওয়ালাদের কিছু কাজ কর্মের কারণে আমাদের নেতা-কর্মীদের যুক্ত করে, কিছু কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে। আমাদেরকে এই ব্যাপারে সর্তক ও শক্ত হতে হবে…।’ 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্র দলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া কবি আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মামুন আহমেদ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত