জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি ৪৭ থেকে ৫২, ৭১ থেকে ২৪ একই সূত্রে গাঁথা। এই বাংলাদেশে ২৪ এর স্পিরিটকে ধারণ করে ৫২, ৭১ দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে আগামীর বাংলাদেশ তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে গড়বে। এটাই হচ্ছে আজ আমাদের শপথ।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রথম প্রহর রাত ১টা ৩৫ মিনিটে জাতীয় নাগরিক কমিটির (জানাক) আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়া হয়। এরপরে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, আমরা আমাদের মহান শহীদ দিবসে জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে মনে করি সেই ১৯৫২ সালে আমাদের পূর্বসূরিরা ভাষার দাবিতে রাজপথে নেমেছিল। তাদেরও বাধা দেওয়া হয়েছিল, প্রতিরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু যৌক্তিক দাবিতে লড়াই করা যখন আমাদের রক্তে, তখন রক্ত দিয়ে জীবন দিয়ে আমরা আমাদের ভাষার দাবি আদায় করে নিয়েছি। একইভাবে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যখন রাজপথে নেমেছে তখন আবারও আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু যৌক্তিক দাবিতে আমাদের পূর্বসূরিদের মতো আমরা রক্ত দিয়েছি, জীবন দিয়েছি, স্বৈরাচারকে বাংলাদেশ থেকে উৎখাত করেছি। খুনি হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে, আমরা আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করে নিয়েছি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, আমরা বায়ান্ন সালে ভাষার দাবিতে লড়াই করেছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। আমরা সরকারকে আহ্বান জানাবো, বাংলাদেশের মাটিতে যতগুলো ভাষা রয়েছে, সব জাতিগোষ্ঠী এবং ভাষাগুলোকে সংরক্ষণ, অধিকার দেওয়ার, শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার জন্য বাংলাদেশে যত দূতাবাস আছে, সেখানে বাংলা হাউজ কৃষ্টি কালচার চালু করার। প্রত্যেকটি দেশে যদি আমরা বাংলা হাউজ চালু করতে পারি, বিশ্ববাসীকে আমরা জানান দিতে পারবো, বাংলাদেশের মানুষের আশা, মনন সম্পর্কে জানাতে পারবো। যেই ভাষার জন্য আমাদের ভাই-বোনেরা শহীদ হয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, বাংলাদেশের বাংলা ভাষাকে সরকারি বিল-পত্র থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় একটি সুন্দর পরিক্রমায় নিয়ে আসার জন্য। আমরা আশঙ্কা দেখতে পাচ্ছি, গত ৫৩ বছরে ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে যতগুলো ভাষার প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবগুলোকে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষার অসংখ্য সম্পদ আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন। তাদের কথা, কবিতাগুলোকে সংরক্ষণ করার জন্য।
জানাক এর সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। আমরা খেয়াল করেছি, এই ভাষার মাসকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের তারুণ্যের হাত ধরে এক নতুন ভাষা নির্মাণ হয়েছে। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে রাজনীতি নির্মাণের ভাষা যখন তৈরি হয়েছে, তখন আমরা সারা দেশের মানুষের কাছে আবেদন জানাবো, বায়ান্ন, একাত্তর, সাতচল্লিশ কিংবা চব্বিশ- প্রত্যেক আন্দোলনে, প্রত্যেক সংগ্রামের যে আকাঙ্ক্ষা, সেই আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাবো। বাংলাদেশে কোনও হানাহানি, মারামারি থাকবে না। বায়ান্ন, একাত্তর, চব্বিশের চেতনাকে ধারণ করে, সুন্দর, সাম্য, সমতা, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের বাংলাদেশ আমরা বিনির্মাণ করতে পারবো। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এ আমাদের চাওয়া।