Homeরাজনীতিআওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনার আহ্বান

আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় আনার আহ্বান


প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে লিখিতভাবে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ চিঠি দেওয়া হয়।

‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ছয় মাস, বিরাজমান রাষ্ট্র পরিস্থিতি বিষয়ে পরামর্শ’ শীর্ষক চিঠিতে বিএনপি মহাসচিব লিখেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উসকানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য-মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে অতিসম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকগুলো ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করে যাচ্ছে, এবং প্রতিবেশী একটি রাষ্ট্রের সহায়তায় দেশের বাইরে থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এই তৎপরতা চালিয়েই যাবে। সুতরাং গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা দরকার।’

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদেরকে আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে, ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হচ্ছে।

‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দুঃশাসন পতন হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান বিজয়ী হয়েছে এবং সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে জনগণের বিপুল সমর্থন ও প্রত্যাশার উপর দাঁড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারও ছয় মাস পার করেছে। কিন্তু জনপ্রত্যাশা বা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা কতটুকু এর মধ্যে পূরণ হয়েছে তা একটি বিশাল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে জনমনে।’

ফখরুল লিখেন, বিএনপি মনে করে জনগণের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সরকার মুন্সিয়ানা দেখাতে পারছে না। ফলে জনগণের আশা-ভরসা, প্রত্যাশা দ্রুত ম্রিয়মাণ হয়ে যাচ্ছে।

চিঠিতে বলা হয়, ফ্যাসিবাদ উত্তর রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে নানা প্রস্তাব আর মতামত উঠে এসেছে সংস্কার কমিশনের রিপোর্টের মাধ্যমে, যার মূল ভিত্তিটা রচনা করেছে বিএনপি ৩১ দফা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের অনেক আগে ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই। কিন্তু গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবগুলো গৃহীত এবং বাস্তবায়ন করা আবশ্যক। জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী সংস্কার প্রস্তাবগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য একটি নির্বাচিত সংসদই কেবল উপযুক্ত ফোরাম।

চিঠিতে ফখরুল উল্লেখ করেন, এখন অগ্রাধিকার হচ্ছে, নির্বাচনমুখী অতিআবশ্যকীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের পছন্দের একটি দক্ষ, শক্তিশালী ও কার্যকর সরকার প্রতিষ্ঠা করা। যে নির্বাচিত সরকার সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে দেশ ও দেশের জনগণের নিরাপত্তা বিধান করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হবে।

‘যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দুটোই একই সাথে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি “চার্টার অব রিফর্ম’ তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে। তাই, আমরা অবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য সুনির্দিষ্ট রোড ম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জনআকাঙ্খাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দে‌ওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে।’

 

সিটি করপোরেশন ও উপজেলা পরিষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি

মির্জা ফখরুল উপদেষ্টাকে দেওয়া চিঠিতে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার সময়ে জাতীয় সংসদের মতোই স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনেই কারচুপি ও অনাচারের আশ্রয় নিয়ে পতিত স্বৈরাচার দলীয় লোকদের বিজয়ী করেছে। এসব ব্যক্তিরা গোপনে এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রকাশ্যেই বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করছে, যাতে সরকারের শাস্তি ও উন্নয়ন প্রয়াস ব্যর্থ হয়। অবিলম্বে সিটি করপোরেশন ও উপজেলার মতো ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিতে হবে। মনে রাখা প্রয়োজন যে, প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা বিজয়ের জন্যই জরুরি।’

জনমনে সংশয় আছে

অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও কোনও উপদেষ্টা ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত রয়েছে মর্মে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে, বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ এ প্রক্রিয়ায় প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করার নানা প্রকার লক্ষণ ক্রমেই প্রকাশ পাচ্ছে যা দেশ ও গণতন্ত্রের জন্যে মোটেই সুখকর নয়। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী যথাযথ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যে কোনও দলের আত্মপ্রকাশকে আমরা স্বাগত জানাবো।’

তিনি বলেন, ‘অধঃস্তন আদালতে গায়েবি মামলায় রাতের বেলা কোর্ট বসিয়ে যে সমস্ত বিচারকরা বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সাজা প্রদান করেছেন তাদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদেরকে বিচার-ব্যবস্থায় বহাল রেখে স্বাধীন বিচার বিভাগ বাস্তবায়ন করা জনগণের প্রত্যাশার বিরুদ্ধে।’

‘পরিশেষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন, অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করুন, দ্রুত নির্বাচনি রোড ম্যাপ প্রদান করুন, প্রশাসনের সর্বস্তরে পতিত ফ্যাসিবাদের দোসর মুক্ত করুন।’ বলেন ফখরুল।

বিএনপির মহাসচিব লিখেন, ‘আপনার এবং আপনার সরকারের প্রতি আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত