কুমিল্লায় যৌথবাহিনী তুলে নেওয়ার পরদিন যুবদল নেতা তৌহিদুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবি করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার রাতে দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এই ঘটনায় জড়িত সেনা সদস্যদের বিচার দাবি করা হয়। আজ শনিবার সকালে এ নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনিও এ ঘটনায় বিচার দাবি করেছেন
গতকাল রাতে বিএনপির ফেসবুক পেজে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, ‘এই নৃশংস বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সেনাবাহিনীর সকল সদস্যের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’
এর আগে কুমিল্লায় যৌথ বাহিনী তুলে নেওয়ার পর হাসপাতালে তৌহিদুর রহমানের লাশ পেয়েছে তাঁর পরিবার। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টায় তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তবে কখন তাঁর মৃত্যু হয়েছে সে তথ্য জানা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতার মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছেন তাঁর ভাই আবুল কালাম।
তৌহিদুর রহমান কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের পাঁচথুবী গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন।
তৌহিদের ভাই আবুল কালাম বলেন, আমার বাবা চার দিন আগে মারা গেছে। আমরা শোকে আচ্ছন্ন। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর ৩টি গাড়ি ও একটি লাল রঙের গাড়ি আমাদের বাড়িতে আসে। তৌহিদুল ইসলামের কাছে অস্ত্র আছে—এমন অভিযোগে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমার ভাই কখনো অস্ত্র আনতে পারে না। তার সম্পর্কে আমাদের পুরো এলাকা খুব ভালো করে জানে। আমরা বারবার বলার পরও তারা নিয়ে যায় আমার ভাইকে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ আমাদের জানায়, তাকে গোমতী পাড়ের গোমতী বিলাশ নামক স্থান থেকে তারা উদ্ধার করেছে। সে নাকি হাসপাতালে আছে। আমরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি তার লাশ। তার শরীরের বেদম মারের আঘাতের চিহ্ন।
পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, তৌহিদুল চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রোববার তাঁর বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন। আজ বাবার কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে তাঁর স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছে।
তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার বলেন, ‘আমার স্বামীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। কেন আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হলো। আমার চারটা ছোট মেয়ে এতিম হলো। আমি ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করছি। আমি এ হত্যার বিচার চাই।’
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আজ (গতকাল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ তৌহিদুল ইসলামকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে দেখা যায়, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত রয়েছে। আমরা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিনুল ইসলাম বলেন, আজ (গতকাল) রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি, কোনো অভিযোগও আসেনি।