সাব্বির খান
“আন্দোলনে যত পুলিশ মারা গেছে তার দায় শেখ হাসিনারঃ নাহিদ ইসলাম”- শিরোনামে একটা রিপোর্ট দেখলাম, যার লিঙ্ক কমেন্টে দেওয়া হলো।
এই প্রথম তথাকথিত উপদেষ্টা সরকারের পক্ষ থেকে বাচাল নাহিদ ইসলাম স্বীকার করে নিলো যে, ৫ আগষ্টের পর থেকে হাজার হাজার পুলিশ নিহত হয়েছে, ভাষান্তরে হত্যা করা হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জরিপে বলেছে যে, একই সময়ের মধ্যে অন্তত ১৯ হাজার আওয়ামী নেতা-কর্মিকে আসামী করা হয়েছে। কিভাবে পুলিশ এবং আওয়ামীদের হত্যা করা হয়েছে, তা সারা দেশবাসী দেখেছে, এবং সেব্যাপারে তর্কের কোন অবকাশ নেই। ফইন্নি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এমন কোন “নবী-পয়গম্বর” নয় যে, তার কথা বেদবাক্যের মত এবং শেষ কথা। তাঁর কথাগুলো যে, “ঠাকুর ঘরে কে রে… আমি কলা খাই না”-র মত পাগলের প্রলাপ, তা বোঝার জন্য কাউকে আর এক ‘উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের মত পিএইচডি’ করতে হবে না।
সে আরো বলেছে যে, “৫ আগস্ট দুপুর পর্যন্ত আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার ওপর স্নাইপার দিয়ে গুলি চালানো হয়েছে।” অথচ এই স্নাইপার যে আমেরিকার ছিলো এবং এগুলো যে সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার করে থাকে, যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ইউক্রেনেও ব্যবহার হতে দেখা গেছে এবং এপ্রসঙ্গে আমার ওয়ালেই বেশকিছু দিন আগে একটা ভিডিও পোষ্ট করেছিলাম। সুতরাং উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়ে কোন লাভ হবে নারে বালক-বাছুর।
সে আরো বলেছে, “বর্তমানে গণমাধ্যম যে স্বাধীনতা উপভোগ করছে তা এর আগে বাংলাদেশে কখনো এরকম চর্চা হয়েছে সেই ইতিহাস আমার জানা নেই।” একটা বাছুরের জন্ম হলো মাত্র সেদিন। সে কতটুকুই বা জানবে। যাইহোক, তাঁর অজ্ঞতার দায় না নিয়ে শুধু বলা যায় যে, যে বাছুর মেধাবীরা কোটা আন্দোলনে শরীক হয়েছিলো, তাঁদের জ্ঞানগর্ভের ব্যাপারে দেশবাদী ইতিমধ্যে জানতে শুরু করেছে। বিচারটা দেশবাসীই করুক।
সে আবার বলছে, “‘বেশ কিছু গণমাধ্যম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের নিহত হিসেবে উল্লেখ করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সব প্রজ্ঞাপনে তাদেরকে শহীদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবাসী তাদেরকে শহীদ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে; সেখানে গণমাধ্যম তাদের শহীদ বলতে কার্পণ্য করছে।” একটা বাছুর কিভাবে বুঝবে যে, “শহীদের” ডেফিনিশন বা সংজ্ঞা কি? তোদের মত অন্তর্বর্তী বাছুরের দল একটা প্রজ্ঞাপন জারি করে তিলকে তাল বললেই মহল্লার খালাম্মারা তালের পিঠা বানানো শুরু করবে? বিষয়টা কি এতই সস্তা?
বাছুরটা আরো বললো যে, “এই গণ-অভ্যুত্থান রক্তের মাধ্যমে ঘটেছে, রক্ত দিয়েই নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক না কেন, এই ইতিহাস মুছে যাওয়ার নয়।” যদি তা-ই হয়, তাহলে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পরে একাত্তরে রক্ত দিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিলো, সে ইতিহাস তোরা কিভাবে মুছে ফেলবিরে আহাম্মকের দল? গাঁজা সেবনের পরিমান কি বেশি হয়ে গিয়েছিলো নাকি ভেজাল গাঁজা সেবন করে বক্তৃতা দিয়েছিলি?
নাহিদ বলে যে, “আমরা স্বাধীন গণমাধ্যমের কথা বলছি; সেই গণমাধ্যমের মধ্যথেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিতাড়িত করে জনগণের সামনে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই। ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম ছাড়া নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হবে না।” আরে উল্লুক, তুই কি জানিস ‘ফ্যাসিবাদ’-এর মানে কি? না জানলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তাকা। ফ্যাসিবাদের মর্মার্থ ফকফকে পরিস্কার হয়ে যাবে।
সর্বশেষে নাহিদ বচনঃ “আমি টাইম ম্যাগাজিনকে বলেছিলাম শেখ হাসিনা একজন সাইকোপ্যাথ ও রক্তচোষা, তাই প্রমাণিত হলো। আমরা প্রথমে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই একটা আন্দোলন করছিলাম। সর্বপ্রথম সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ করে। আমরা বারবার আমাদের দাবি মেনে নেয়ার কথা বলেছি কিন্তু তারা আমাদের বন্দুকের সামনে দাঁড় করিয়েছে। আপনারা দেখেছেন কিভাবে আমাদের গুম করা হয়েছে এবং তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।”
মিথ্যাচারিতার একটা লিমিট থাকে, কিন্তু ফ্যাসিবাদের এই বাছুরটা যেন সব লিমিট ক্রস করে সমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে। যে ইস্যু নিয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করেছিলো, সে ইস্যুতে সরকার সমর্থিত সর্ব মহল থেকে সমর্থন দেওয়া হয়েছিলো, সরকার মেনেও নিয়েছিলো, গেজেটের মাধ্যমে আদালতের রায়কে প্রকাশ করেছিলো। কিন্তু যে সুপ্ত ইচ্ছা এবং ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলো প্রায় বছর দুয়েক আগে এবং এই আন্দোলনের উছিলায় যে স্টেপ বাই স্টেপ সরকার পতনের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলো, সে ইতিহাস আজ সবার জানা। কিভাবে এই ইতর বাছুরগুলো সেদিন বিভিন্ন স্তরের মানুষকে ঠকিয়ে, মিথ্যা বলে ব্যবহার করে এক দফার দিকে এগিয়েছিলো এবং তাতে কোন কোন রাজনৈতিক দল এবং বিদেশী মদদ কাজ করেছিলো, তাকি আজ কারো অজানা? তারপরেও এই বাছুরকুল দেদারছে মিথ্যার জাবর কেটে যাচ্ছে, যদিও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে বলে মনে হয় না।
যাইহোক, সব শুরুই একটা শেষ থাকে, এমনকি সব শেষেরও একটা শুরু থাকে। বাংলার মানুষ সেই দু’টোর জন্যই অপেক্ষায় আছে। বাছুরদের শুভ নিদ্রা কামনা করছি!
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
সাব্বির খান এর ফেসবুক পোস্ট