Homeবিনোদনশিল্পী বাছাইয়েও ভিউ হয়ে উঠছে মানদণ্ড

শিল্পী বাছাইয়েও ভিউ হয়ে উঠছে মানদণ্ড


অভিনয়জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ হলো। কেমন ছিল এই জার্নি?

এতটা সময় পার করেছি, বুঝতেই পারিনি। অনেক স্মুথ ছিল জার্নিটা। সব সময় দর্শকের সাপোর্ট পেয়েছি, পরিবারের সাপোর্ট পেয়েছি; বিশেষ করে আমার মায়ের কথা বলতে হয়। তিনি ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। তাঁর আদর্শেই চলার চেষ্টা করেছি। মায়ের প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ। সহকর্মী, নির্মাতা ও কলাকুশলীদের সমর্থন পেয়েছি। আমি থিয়েটার করা শিল্পী নই। যা শিখেছি তাদের কাছ থেকেই। নিজেকে আমি পরিচালকের শিল্পী ভাবতে পছন্দ করি। তাদের গাইডের কারণেই আমার চলার পথ আরও মসৃণ হয়েছে।

শিশুশিল্পী হিসেবে শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেই গল্পটা শুনতে চাই।

একদম ছোটবেলায় নাচ দিয়ে সংস্কৃতিচর্চা শুরু। অভিনয় শুরু হয় নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায়। সেখানে নাচের পাশাপাশি অভিনয় ক্যাটাগরিতে অংশ নিই। আমার বাবার বন্ধু ম হামিদ তখন টেলিভিশনের প্রযোজক। ওনার থিয়েটার দল থেকে এডওয়ার্ড বাড়ই নামে একজনকে পাঠান। উনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পোস্টমাস্টার’-এর রতন চরিত্রের একক অভিনয়টুকু শেখান। অভিনয় করে আমি তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছিলাম, কিন্তু সেটাই আমার কাছে প্রথম পুরস্কারের মতো ছিল। এরপর বিটিভি থেকে একটি ধারাবাহিক নাটকের জন্য ডাকা হয়। ইমদাদুল হক মিলনের লেখা এবং আলাউদ্দিন আহমেদের পরিচালনায় ‘বারো রকম মানুষ’ নাটকে বৈচি চরিত্রে অভিনয় করি। নাটকটি ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। অনেকে আমাকে বৈচি নামে ডাকা শুরু করে। মানুষজন চিনতে পারছে, সেটা ভালো লাগলেও তখনো অভিনয়ের প্রতি আমার ভালো লাগা তৈরি হয়নি। নাচটাই আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল। এ ছাড়া তখন আমি স্কুলে পড়ি, তাই অভিনয়ে নিয়মিত হইনি।

নিয়মিত হলেন কীভাবে?

অভিনয়ে আসার পেছনেও ছিল নাচের প্রতি ভালোবাসা। নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পাওয়াটা কঠিন ছিল। ছোটবেলায় বড় বড় অনেক প্রোগ্রাম করেছি, কিন্তু একটু বড় হয়ে দেখলাম, যাঁরা মডেলিং বা অভিনয় করেন, তাঁদেরকেই বিশেষ দিনের অনুষ্ঠানে সলো পারফরম্যান্সের জন্য ডাকা হয়। অনেকে আমাকে বলত অভিনয় বা মডেলিং করতে। তাই সিদ্ধান্ত নিই মডেলিং করার। এরপর নাটকে এলাম। প্রথম অভিনয় করি মোহন খানের ‘দূরের মানুষ’ ধারাবাহিকে। কিন্তু প্রথম প্রচারিত হয় রেজানুর রহমানের ‘ছায়াকায়া’। ১৯৯৯ সাল থেকে অভিনয় শুরু। টিভিতে প্রচার শুরু ২০০০ সালে থেকে। শুরুতে কিছুটা অনিয়মিত হলেও ২০০৪ সাল থেকে নিয়মিত অভিনয় করি।

ক্যারিয়ারের ২৫ বছরে এসে নিজেকে কতটুকু সন্তুষ্ট মনে হয়?

আমি শুরু থেকে একজন শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করেছি, এখনো করে যাচ্ছি। আমার কাছে জীবনে দুটি জিনিসের প্রয়োজন বেশি—সম্মান ও ভালোবাসা। শিল্পী হিসেবে সেটা আমি পেয়েছি। পছন্দের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় কাজ করতে পেরেছি, সেটাই বড় সন্তুষ্টির জায়গা। আমি সব সময় পজিটিভ থাকার চেষ্টা করি। অনেক কিছুর প্রয়োজন আমার হয় না কখনোই। আমার পরিবার আমাকে নিয়ে খুশি। তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করে, তাতেই আমি সন্তুষ্ট। যেদিন আমার ২৫ বছর পূর্তির নিউজ হলো, সেদিন অনেকে কমেন্ট করেছিল, মিডিয়ার সবচেয়ে লক্ষ্মী মেয়ে। সব সময় এ রকম একটা ট্যাগ আমাকে দেওয়া হয়। এটা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। সবার ভালোবাসা পাওয়া খুব কঠিন, সেই সৌভাগ্য আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন।

নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

কোনো অপ্রাপ্তি আছে?

আমি ভিন্ন ধরনের অনেক চরিত্রে অভিনয় করতে চেয়েছিলাম। সেগুলো এখনো করা হয়ে ওঠেনি। যদি পরিচালকেরা আমাকে সে ধরনের চরিত্রে ভাবেন, তাহলে ক্যারিয়ারে আরও প্রাপ্তি যোগ হবে।

অভিনীত কোন চরিত্রটি এখনো আপনার মনে দাগ কাটে?

সাহিত্যের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে। কাজী নজরুল ইসলামের অনেকগুলো কাজ করা হয়েছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা চরিত্রে অভিনয় করেছি। এই সময়ে আমার অভিনীত একটি চরিত্র নিয়ে অনেকে বলছে। বকুলপুর ধারাবাহিকের দিবা চরিত্র। এই ধারাবাহিকে পাঁচ বছর কাজ করেছি। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে ৫ বছর একটি ধারাবাহিকে কাজ করেছি, এটা তো বিশাল ব্যাপার। শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও জনপ্রিয় হয়েছে ধারাবাহিকটি।

ওটিটিতে কাজ করছেন না কেন?

কারণটা নির্মাতারা জানেন। প্রায় সময় এই প্রশ্ন শুনতে হয়। ওটিটির প্রস্তাব যে একেবারে আসেনি তা নয়। দু-একটা প্রস্তাব এসেছিল, কিন্তু গল্প সেভাবে টানেনি। এমন একটি কাজ দিয়ে ওটিটিতে আসতে চাই, যে গল্প ও চরিত্র আমার ভালো লাগবে।

এ মুহূর্তে আমাদের শোবিজ ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা কেমন?

শোবিজ ইন্ডাস্ট্রি এখন নিম্নগামী। ভালো গল্পের অভাব, ভালো লেখকদের কাজ কম। যাঁরা আগে ভালো নাটক লিখতেন, তাঁদের কাছ থেকে গল্প নেওয়া হয় না। গল্প এখন খাওয়ার জিনিস। যে ধরনের গল্প দর্শক খায়, সেটা নিয়েই কাজ হয়। আগে পরিবারকেন্দ্রিক গল্প নিয়ে অনেক কাজ হতো। আমি মনে করি, এখনো এমন কাজের প্রয়োজন আছে। অনেকে বলে, নাটক দেখে শেখার কিছু নেই, এখানে জ্ঞান দিতে আসিনি। কিন্তু আমি মনে করি, নাটক থেকে শেখার অনেক বিষয় আছে। এখান থেকে ভাষাচর্চা যেমন হয়, তেমনি কার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে, সেটাও শেখা যায়। নাটককে বলা হয় সমাজবদলের হাতিয়ার। এখনো সেটাই হওয়া উচিত।

এখন কাজের ক্ষেত্রেও ভিউ, ভাইরাল প্রভাব ফেলছে। এ বিষয়ে আপনার কী মন্তব্য?

অনলাইনে নাটক আসার পর প্রচারের ব্যাপকতা বেড়েছে। আমি যে সময় কাজ শুরু করেছি, তখন এমনটা ছিল না। তখন ইউটিউবের ব্যাপারটা থাকলে অনেক দর্শক আমাদের কাজ দেখতে পারত। বাংলা নাটক আরও ছড়িয়ে যেত। তখনকার কাজগুলোতে মূল্যবোধের যে বিষয় ছিল, সেটা এখন নেই। এখন সব শর্টকাট হয়ে গেছে। তাই স্বল্প সময়ে হাসি বা আনন্দের কিছু দেখতেই পছন্দ করছে সবাই। এখন হালকা বিষয়ের ভিউ বেশি। ভিউর বিচারে কনটেন্ট নির্মিত হচ্ছে। কী দিলে ভিউ বেশি হবে, সবার মাথায় সেই চিন্তা। মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও একই বিষয়। শিল্পী বাছাইয়েও ভিউ হয়ে উঠছে মানদণ্ড। যার যত ভিউ, তার তত কাজ। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। ঘুরেফিরে সব একই চেহারা। তাই শিল্পীদের কাজ কমে গেছে, গুণী অনেক শিল্পী হারিয়ে যাচ্ছেন।

নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

নাদিয়া আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

নৃত্যশিল্পী হিসেবে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে বলুন।

ছোটবেলায় মা আমাকে শিশু একাডেমিতে নাচের ক্লাসে ভর্তি করান। আমার গুরু ছিলেন প্রয়াত হাবিবুল চৌধুরী। খুব ছোট থাকতেই জাতীয় শিশু পুরস্কার পাই। সেখান থেকে ১৯৮৯ সালে শিশু প্রতিনিধিদলের হয়ে চীনে রাষ্ট্রীয় সফরের জন্য নির্বাচিত হই। এরপর আরও কয়েকটি দেশে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। পরে বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে সাত বছরের একটি ডিপ্লোমা করি। রেজাল্ট ছিল ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। এরপর শিবলী মহম্মদ, শামীম আরা নিপার কাছে শিখেছি। দীপা খন্দকারের কাছে ফোক শিখেছি, তামান্না রহমানের কাছে মণিপুরি, বেলায়েত হোসেনের কাছে ভরতনাট্যম শিখেছি। আরও অনেকের কাছে শেখা হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে লিখনের সঙ্গে আমার একটা জুটি তৈরি হয়। সে সময় নাচের জুটির প্রচলন ছিল। শেখা, পারফর্ম, বিদেশ সফর মিলিয়ে চলেছে আমার নৃত্যের ক্যারিয়ার। নাচের কারণেই তো আমার অভিনয়ে আসা।

নৃত্যকে পেশা হিসেবে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি কি তৈরি হয়েছে?

আমাদের দেশে অসংখ্য নৃত্যশিল্পী আছেন। আমার সিনিয়র অনেকে শুধু নৃত্যকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। কোনো অনুষ্ঠান কিন্তু নাচ ছাড়া চলে না। তবে অভিনয়শিল্পটা যেভাবে পেশাদারির সঙ্গে এগিয়ে গেছে, নাচের ক্ষেত্রে অতটা হয়নি।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত