নব্বইয়ের দশকের বলিউড নায়িকা মমতা কুলকার্নি সন্ন্যাস জীবন নিয়ে ইতিমধ্যেই নেটিজেনদের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। যদিও এখন তার নাম ‘মা মমতা নন্দ গিরি’। তবে লাস্যময়ী এই অভিনেত্রীর জীবনের বেশ কিছু বিষয়ে ভক্ত মহলে জল্পনা-কল্পনা এখনো রয়েছে। মমতা কি বিয়ে করেছেন, কেন অভিনয় ছাড়লেন, কেনইবা এক যুগেরও বেশি সময় ভারত ছেড়ে ছিলেন? বিভিন্ন সময়ে এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মমতা।
গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে আধ্যাত্মিক যাত্রা শুরু করেছেন এই অভিনেত্রী। পৃথিবীর তথাকথিত সম্পর্ক ত্যাগের প্রতীক হিসেবে তিনি নিজের পিণ্ড দান করেছেন। ‘মহামন্ডলেশ্বর’ উপাধিতে সম্মানিত করা হয়েছে মমতাকে। লাবণ্যময়তা ধরে রাখাসহ, চমকপ্রদ পোশাকের বদলে নিয়েছেন গেরুয়া বেশ। হিজড়াদের প্রতিষ্ঠিত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বৃহত্তম আখড়া মহাকুম্ভের কিন্নরে সন্ন্যাস নিয়েছেন মমতা।
মমতা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ব্যক্তিগত জীবন
১৯৭২ সালে জন্মগ্রহণ করা মমতা কুলকার্নির কখনো বিয়ে করেননি। বছরের পর বছর ধরে, ভিকি গোস্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গুঞ্জন ছিল। গণমাধ্যমে কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল যে, তাঁরা বিবাহিত। কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলোকে একদমই পাত্তা না দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
গত বছর ইন্ডিয়া টাইমসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সেগুলোকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে জানিয়েছেন। মমতা বলেন, ‘মানুষদের উচিত এমন কাউকে নিয়ে নেতিবাচক কথা না বলা, যাদের সম্পর্কে তাঁরা কিছুই জানে না। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি- আমাকে ও ভিকি গোস্বামীকে নিয়ে যে গুজব উঠেছে, তা পুরোপুরি মিথ্যা। আমি কাউকে বিয়ে করিনি, কারণ আমি কখনো সেই সময় পাইনি।’
ওই সাক্ষাৎকারেই মমতা বলেছিলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি- কেউ যেন ‘স্বামী’ বা ‘স্ত্রী’ এই ধরনের উপাধি আমার সঙ্গে যুক্ত না করে। আমি জানি না এসব ভিত্তিহীন, গুজব নিয়ে আর কী বলতে পারি। অনেকেই আমাকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু আমার এমন কিছু করার কোনো ইচ্ছা নেই।’
অভিনয় জীবনের শুরু
১৯৯১ সালে তামিল সিনেমা ‘নানবারগল’ দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে মমতা কুলকার্নির। শোভা চন্দ্রশেখর পরিচালিত এই সিনেমায় মমতা নীরাজের বিপরীতে অভিনয় করেন। মজার ব্যাপার হলো- ‘নানবারগল’ পরবর্তীতে হিন্দিতে ‘মেরা দিল তেরে লিয়ে’ নামে রিমেক করা হয়। সেখানেও মমতা কুলকার্নি অভিনয় করেন এবং ওই সিনেমার মাধ্যমেই বলিউডে মমতার পদার্পণ।
মমতা কুলকার্নির সেরা পাঁচ সিনেমা
তীরঙ্গা
মমতা কুলকার্নির আইকনিক দেশপ্রেমের সিনেমা ছিল ‘তীরঙ্গা’। এটির পরিচালক ছিলেন মেহুল কুমার। সিনেমাটিতে রাজ কুমার এবং নানাপাটেকার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং মমতা কুলকার্নি সহায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
করন অর্জুন
বলিউড সুপারস্টার সালমান খান ও শাহরুখ খানের যৌথ সিনেমা ‘করন অর্জুন’ এ অভিনয় করেছেন মমতা। শাহরুখ খানের সহ অভিনেত্রী হিসেবে বিন্দিয়া চরিত্রে দাপুটে চরিত্রে ছিলেন মমতা।
কাভি তুম কাভি হাম
এটি ছিল মমতা কুলকার্নির শেষ হিন্দি সিনেমা। চরুওহাস শিদোরে, অঞ্জন শ্রীবাস্তব এবং বিজয়েন্দ্র ঘাটগে রূপ দত্ত নায়েকের পরিচালনায় সিনেমায় অভিনয় করেছেন।
আশিক আওয়ারা
এই রোমান্টিক ড্রামা ছিল মমতা কুলকার্নির বলিউডে ব্রেকথ্রো ছবি। উমেশ মেহরা পরিচালিত এই সিনেমায় সাইফ আলী খানও ছিলেন।
বাজি
অশোক গাওরেকারের পরিচালনায় এই সিনেমায় প্রধান চরিত্রে ছিলেন আমির খান। মমতা কুলকার্নি অভিনয় করেছিলেন আমির খানের প্রেমিকা রাজেশ্বরী চরিত্রে। তাদের অনবদ্য রসায়ন এই সিনেমাটিতে এক অনন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল।
শেষ ছবি
দশকের পর দশক সফল সিনেমার পর ২০০৩ সালে মমতা কুলকার্নি অভিনয় থেকে বিদায় নেন। তাঁর শেষ উপস্থিতি ছিল বাংলা সিনেমা ‘শেষ বংশধর’এ। অভিজিৎ সেন পরিচালিত ওই সিনেমায় অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যানার্জি, রণিত রায়, অনুরাধা রায়, চিন্ময় রায় এবং ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
কেন অভিনয় ছেড়েছিলেন মমতা কুলকার্নি
সিনেমা বা অভিনয় থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে আইএএনএসে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন মমতা কুলকার্নি। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভারত ছেড়ে যাওয়ার কারণ ছিল আধ্যাত্মিকতা। ১৯৯৬ সালে আমি আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহী হতে শুরু করি। সেই সময়ে আমি গুরু গগন গিরি মহারাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। তাঁর আসার পর আধ্যাত্মিকতার প্রতি আমার আগ্রহ বাড়ে। তাঁর পরবর্তী সময়ে আমার তপস্যা শুরু হয়। তবে, আমি মনে করি বলিউড আমাকে নাম এবং খ্যাতি দিয়েছে, পর আমি বলিউডও ত্যাগ করি।’
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, ‘২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আমি তপস্যা চালিয়ে গিয়েছিলাম। আমি বেশ কিছু বছর দুবাইয়ে ছিলাম। সেখানে আমি একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাটে থাকতাম এবং ১২ বছর ধরে ব্রহ্মচর্য পালন করতাম।’