Homeবিনোদনঈদের সিনেমার ব্যবসায় খুশি সবাই

ঈদের সিনেমার ব্যবসায় খুশি সবাই


ঢাকাই সিনেমা এখন ঈদকেন্দ্রিক। সারা বছর খালি থাকলেও ঈদের সময় দর্শকে মুখর হয়ে ওঠে হলগুলো। তবে গত কয়েক বছর রোজার ঈদের সিনেমাগুলোতে আশানুরূপ সাফল্য মেলেনি। ‘প্রিয়তমা’, ‘পরাণ’, ‘তুফান’-এর মতো ব্যবসাসফল সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে কোরবানির ঈদে। এবার সেই খরা বুঝি কাটল। রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া ছয় সিনেমার চারটিই দারুণ ব্যবসা করছে। প্রথম দিন থেকে হলে ভিড় বেড়েছে দর্শকের। মুক্তির সাত দিন পেরিয়ে গেলেও সিনেপ্লেক্সগুলোতে এখনো চলছে টিকিটের টানাটানি। সিঙ্গেল স্ক্রিনেও দেখা যাচ্ছে লম্বা সারি।

এবার রোজার ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘বরবাদ’, ‘অন্তরাত্মা’, ‘জংলি’, ‘দাগি’, ‘চক্কর ৩০২’ ও ‘জ্বীন থ্রি’। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক হলে মুক্তি পেয়েছে শাকিব খান অভিনীত বরবাদ। সিঙ্গেল স্ক্রিন ও মাল্টিপ্লেক্স মিলিয়ে ১২০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। হলের সংখ্যায় এরপরেই ছিল শাকিবের আরেক সিনেমা অন্তরাত্মা। তবে মুক্তির পর তা আলো ছড়াতে পারেনি। দুই দিন পরেই সিনেপ্লেক্স থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় অন্তরাত্মা। বাকিগুলো চলছে দাপট নিয়ে। আর তাতেই প্রযোজকদের পাশাপাশি হাসি ফুটেছে হলমালিকদের মুখে।

বরবাদ দিয়ে প্রযোজক হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে রিয়েল এনার্জি প্রোডাকশন। প্রথম সিনেমার সাফল্যে খুশি প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার শেহরিন আক্তার সুমি। তিনি বলেন, ‘জানতাম, বরবাদ ভালো চলবে। তবে এত সাড়া পাব ভাবিনি। অধিকাংশ হল নতুন রেন্টাল দিয়ে সপ্তাহ বাড়িয়ে নিচ্ছে। মাল্টিপ্লেক্সেও টিকিট নিয়ে কাড়াকাড়ি। লেট নাইট শোর ব্যবস্থা করা হয়েছে অনেক জায়গায়। মুক্তির সাত দিন পরেও দর্শকের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। আমার ধারণা, কোরবানির ঈদ পর্যন্ত বরবাদ চলবে। তবে সারা দেশে আরও হল বাড়ানো উচিত। হল না থাকায় বাইরে থেকে অনেক দর্শক সিনেমা দেখতে ঢাকায় আসছেন। ঢাকার বাইরে হলের সংখ্যা বাড়ানো গেলে দর্শকের জন্য সুবিধা হয়।’

ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে দাগির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আলফা আইয়ের কর্ণধার শাহরিয়ার শাকিল বলেন, ‘প্রতিদিনই দাগি হাউসফুল যাচ্ছে। সব সিনেপ্লেক্সেই দাপট দেখাচ্ছে দাগি। ঈদের ছুটির সময় দর্শক সিনেমা দেখবেন, এমন ধারণা আগেই করেছিলাম। তবে ছুটির পর দর্শক উপস্থিতি নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ছুটির পরেও হাউসফুল যাচ্ছে। এমনকি বেলা ১১টার শো এবং রাতের শেষ শোতেও টিকিট শেষ হয়ে যাচ্ছে। অফিস-আদালত খোলার পরেও মানুষ সিনেমা দেখছেন। আগামী কয়েক দিনের টিকিটও শেষের দিকে। এটা আমাদের জন্য দারুণ অনুভূতি।’

সরকারি অনুদানে চক্কর ৩০২ বানিয়েছেন শরাফ আহমেদ জীবন। সিনেমার সহপ্রযোজকও তিনি। দর্শকের আগ্রহে সন্তুষ্ট হলেও সিনেমার শো নিয়ে কিছুটা আক্ষেপ আছে তাঁর। জীবন বলেন, ‘সিনেমা বানিয়েছি দর্শকের জন্য। যাঁদের দেখছেন, তাঁরা ভালো বলছেন, এটাই তো সার্থকতা। ব্যাপকভাবে প্রচার করতে পারিনি। শুরু থেকে আমরা বলেছি, চক্করের প্রমোশন করবেন দর্শক। সেটাই কিন্তু হচ্ছে। প্রথম দিন থেকে তাঁরা চক্করের প্রশংসা করছেন। তবে দর্শক রিয়েকশন অনুযায়ী আমাদের শোর সংখ্যা যতটা হওয়া উচিত, ততটা নেই। শুরুতে যতটা শো পেয়েছিলাম, এখন তা নেই। আরও দুটি বিষয় বলব, যে পরিমাণ সিনেমা আমরা রিলিজ দিয়েছি, সেই পরিমাণ হল আমাদের নেই। দ্বিতীয় বাস্তবতা হচ্ছে, ঈদে এতগুলো সিনেমা আসায় সঠিকভাবে ডিস্ট্রিবিউট করা মাল্টিপ্লেক্সগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের সিনেমাটি যখন দর্শক দেখতে চাচ্ছেন, তখন কর্তৃপক্ষের উচিত, সেটা দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে নেবেন।’

সিনেপ্লেক্সে কম শো পেলেও দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় সন্তুষ্ট জংলি সিনেমার প্রযোজক জাহিদ হোসেন অভি। তিনি মনে করেন, সামনে আরও বেশি শো পাবে জংলি, সেই সঙ্গে আগামী সপ্তাহ থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিনেও প্রদর্শনী বাড়বে। অভি বলেন, ‘জংলি ফ্যামিলি অডিয়েন্সের সিনেমা। অবশ্যই কমার্শিয়াল সিনেমা; পাশাপাশি সামাজিক বেশ কিছু মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেছি। জংলির সব শো হাউসফুল যাওয়ায় আমরা খুশি। দর্শকের প্রতিক্রিয়ায় আমরা অভিভূত। তাঁরা তাঁদের ভালো লাগার কথা জানাচ্ছেন। যেহেতু অনেক সিনেমার চাপ, তাই হয়তো আমাদের সবগুলো শো মনমতো সময়ে পাইনি। তবে দর্শকের রেসপন্সের কারণে ইতিমধ্যে শোর সংখ্যা বেড়েছে। জংলিকে আমরা লম্বা রেসের ঘোড়া বলতে পারি। যেখানে অন্যান্য সিনেমার শো কমছে, সেখানে আমাদেরটা বাড়ছে। হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে, সামনে শোর সংখ্যা বাড়বে। আগামী সপ্তাহ থেকে সিঙ্গেল স্ক্রিনের সংখ্যাও বাড়বে।’

টেকনিক্যাল কারণে সিঙ্গেল স্ক্রিনে জ্বীন থ্রি মুক্তি দিতে পারেনি জাজ মাল্টিমিডিয়া। ডিসিপি রেডি করতে দেরি হওয়ায় মাল্টিপ্লেক্সেও শোর সংখ্যায় পিছিয়ে পড়েছে সিনেমাটির। তবে যে কয়টি শো পেয়েছে, বেশির ভাগ হাউসফুল যাচ্ছে বলে দাবি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানটির।

এবার ঈদের সিনেমা নতুন করে আশা দেখাচ্ছে উল্লেখ করে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘ঈদের সিনেমা নিয়ে হলমালিকেরা সন্তুষ্ট। প্রায় সব প্রেক্ষাগৃহ হাউসফুল যাচ্ছে। বরবাদ, জ্বীন থ্রি, দাগি, জংলি, চক্কর—প্রতিটি সিনেমাই দর্শক দেখার চেষ্টা করছে। আমরা আনন্দিত। শিল্পী-কলাকুশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাঁরা হলে দর্শকের কাছে গিয়েছেন। সিনেমা নিয়ে কথা বলেছেন। সব মিলিয়ে একটা উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা হলমালিকেরা প্রযোজকদের অনুরোধ করব, নতুন নতুন সিনেমা তৈরি করুন, এই আমেজটা ধরে রাখুন। নতুন ভাবনা তৈরি করুন, ভালো গল্প উপহার দিন, দর্শক অবশ্যই হলে যাবে।’

ধারাবাহিকভাবে ভালো সিনেমা মুক্তি পেলে হলের সংখ্যা বাড়ার আশাবাদ এই প্রযোজকের। উজ্জ্বল বলেন, ‘সিনেমার ব্যবসা নিয়ে নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম। অনেকে এই ব্যবসা থেকে সরে গেছেন, অনেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এই ঈদে যে সাড়া পেয়েছি, তাতে হলমালিকেরা নতুন করে উজ্জীবিত হয়েছেন। যে হলগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তাঁরা তাঁদের হলগুলো সংস্কার করে পুনরায় চালুর ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে আবারও আমাদের হলের সংখ্যা বাড়তে থাকবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত