অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী কাজ করছেন একাধারে মঞ্চ, টেলিভিশন, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনে। আরণ্যক নাট্যদলে দুই যুগের বেশি কাজ করার পাশাপাশি শূন্য রেপার্টরি থিয়েটারের ব্যানারে ‘লালজমিন’, ‘রঙিন চরকি’র পর এবার মঞ্চে আনছেন নিজের লেখা নাটক ‘আত্মজয়’। অভিনেত্রীর সঙ্গে সার্বিক বিষয়ে আলাপচারিতায় তৌফিক মেসবাহ
বর্তমানে কী কী কাজ করছেন?
‘রিকশা গার্ল’ মুক্তি পেল। বর্তমানে একটি সিরিয়ালে কাজ করছি। কায়সার আহমেদের ‘গোলমাল’। এটি করোনার সময় থেকে করে যাচ্ছি। বাকি সিরিয়ালগুলো ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর সিরিয়াল করতে ভালো লাগে না। কারণ কোনো স্ক্রিপ্ট থাকে না, শিডিউল থাকে না, কী কাজ তার ধারণা থাকে না, পরিকল্পিত না হওয়ায় রাত ১২-১টায় শেষ হয়, যা এ বয়সে এসে পেরে উঠি না। এখন মূলত ওয়েব ফিল্ম ও একক নাটক করছি। মাবরুর রশিদ বান্নাহ, রুবেল আনুশ, রাফাত মজুমদার রিংকু এদের কাজ করলাম। এ ছাড়া ভিকি জাহেদের একটা ওয়েব ফিল্ম করলাম, খুব ভালো একটি কাজ হবে আশা করছি।
বাংলা নাটকের ঐতিহ্য হারানোর কারণ কী?
এটার কারণ মূলত দর্শকের মানসিকতা বদলে গেছে। সবাই মোবাইল ফোনের স্ক্রলিংয়ের মধ্যে থাকে। এক সেকেন্ড ভালো লাগলে থেকে যায়, নয়তো অন্যদিকে। কেন যেন এখন জীবনবোধ নিয়ে কাজ দেখতে চায় না। সারাক্ষণ বিনোদন চায়। যদিও আমরা বিনোদনের জন্য কাজ করি; তবুও সমাজ জীবনের সংগতি-অসংগতি, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কাজ একেবারেই কম হচ্ছে। এখন অধিকাংশই হালকা বিষয় নিয়ে কাজ দেখতে চায়, হাসতে চায়। এখন ঠুনকো বিষয়ে রিল দেখে মিলিয়ন মানুষ। একজন অভিনেতা তার জীবনে অনেক ভালো অভিনয় করলেও সবচেয়ে বাজে সংলাপ দিয়ে যে অভিনয় করেছে, সেটাই রিল হয়ে প্রচুর মানুষ দেখছে। এভাবেই কাজের মান কমে গেছে। যদিও এর মধ্যে বেশকিছু ভালো কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে ওটিটিতে। তবে ভালো গল্পের প্রচারটা একটু কম হয়। হালকা, ফানি, খোঁচাখুঁচি, গালাগালের ভিড়ে ভালো কাজ একটু আড়াল হয়ে যায়।
ভিউ বাণিজ্য এর জন্য কতটুকু দায়ী?
ভিউ বাণিজ্য ভয়ংকর একটা বিষয়। একজন শিল্পীকে কাস্টিং করবার ক্ষেত্রে তার অভিনয় দক্ষতা, সৌন্দর্য, সামর্থ্য বিবেচনা করা হয় না, বরং মাপ করা হয় তার ভিউ কতটা আছে। এখন টিকটক করে রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে মিডিয়াতে এসে বড় অঙ্কের সম্মানী নিচ্ছে। অন্যদিকে সারা জীবন যারা অভিনয় নিয়ে সাধনা করে এসেছে, তাদের সম্মানী সে তুলনায় একেবারে নগণ্য। এ ভিউ বাণিজ্যের সংস্কৃতি শিল্প ও শিল্পীকে কতখানি বাঁচাবে এটাই প্রশ্ন।
রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে মিডিয়ায় আসাকে কীভাবে দেখছেন?
আগে আমরা যারা থিয়েটার থেকে মিডিয়াতে গিয়েছি, তারা এখনো অনেকেই টিকে আছি। আমৃত্যু অভিনয়ের সঙ্গে থাকব। কিন্তু দক্ষতা অর্জন ছাড়া সহজে যারা ঝড়ের গতিতে আসছে তারা ঝড়ের গতিতেই হারিয়ে যাবে। মধ্য দিয়ে তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে; কিন্তু সংস্কৃতির বারোটা বাজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অযোগ্যরা দীর্ঘদিন টিকে থাকতে পারবে না। শুধু থিয়েটার নয়, অন্য মাধ্যম থেকেও আসতে পারে। তবে তার যদি শেখার আগ্রহ থাকে তবে ভালো করবে। অনেকেই চেষ্টার দ্বারা মানোন্নয়ন করছে। শেখার প্রচেষ্টা যার মধ্যে থাকবে সে টিকে থাকবে, এগিয়ে যাবে।
‘আত্মজয়’ সম্পর্কে জানতে চাই
এত বছর থিয়েটারের অভিজ্ঞতা থেকে একটু চেষ্টা করেছি। এর আগে টুকটাক লিখতাম। নাট্যকার মান্নান হীরা আমাকে লিখতে উৎসাহিত করত। আমি সবসময় সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। চারপাশে আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ায় সবার উৎসাহে ‘আত্মজয়’ নাটকটি লেখা। যারা আত্মহত্যা প্রবণতা নিয়ে আছে তাদের সামনে যদি নাটকটি মঞ্চায়ন করা যায়, তবে হয়তো জীবনের দিকে ফিরে আসবে। জীবনটা যে অনেক সুন্দর, মৃত্যুই যে সমাধান নয়—এ উপলব্ধি হবে। নাটকটির মহড়া চলছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ জেলা ঝিনাইদহে প্রথম শোয়ের মাধ্যমে নাটকটির যাত্রা শুরু হবে। নির্দেশনায় আছেন শামীম সাগর এবং অভিনয়ে আমার সঙ্গে আছেন মৌ, আনুশকা, সানি, রকি।
‘রঙিন চরকি’ ও ‘লালজমিন’ সম্পর্কে জানতে চাই
‘রঙিন চরকি’ প্রয়াত মান্নান হীরার শেষ নাটক। নির্দেশনায় ছিলেন সাজিদুর রহমান। পৃথিবীর তাবৎ আলো জ্বাললেও নারীর জীবনের অন্ধকার কাটে না, এটিই নাটকের বিষয়। নাটকটির ৩টি প্রদর্শনী হয়েছে। আর মান্নান হীরা রচিত ও সুদীপ চক্রবর্তী নির্দেশিত মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধোত্তর এক নারীর সংগ্রামী জীবনের নাট্য প্রকাশ ‘লালজমিন’। একজন বীরাঙ্গনার গল্প। এরই মধ্যে দেশের ৬৪ জেলাসহ দেশ-বিদেশ মিলে ৩৪০টি প্রদর্শনী হয়েছে।