অবসকিওরের নতুন অ্যালবাম ‘রিইনকার্নেশন’ কবে আসবে?
আগামী ২৬ মার্চ বিশ্বজুড়ে রিলিজ হচ্ছে ‘রিইনকার্নেশন’। এটা আসলে কম্পাইলেশন। চার দশকের দীর্ঘ যাত্রায় আমাদের ১৩টি অ্যালবাম বের হয়েছে। সেখান থেকে বাছাই করে ১০টি গান নিয়ে সাজানো হয়েছে অ্যালবামটি। প্রতিটি গান নতুনভাবে রেকর্ডিং, কম্পোজিশন করা হয়েছে। প্রোডাকশনেও থাকছে আধুনিকতার ছাপ। শ্রোতারা হাইরাইজ সাউন্ডে গানগুলো শোনার সুযোগ পাবেন। সব মিলিয়ে এই অ্যালবাম নব্বইয়ের দশকের শ্রোতাদের তো বটেই, নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদেরও মুগ্ধ করবে। রিইনকার্নেশন এক কথায় পুরোনো স্মৃতি আর নতুন আবেগের মেলবন্ধন। এই অ্যালবাম ব্যান্ডের জন্য এক নতুন যাত্রার শুরু, যেখানে তারা তাদের অতীতকে রোমন্থন করছে আর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
অ্যালবাম প্রকাশ ছাড়া চার দশকপূর্তি উপলক্ষে অবসকিওরের আর কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
অবসকিওরের স্পন্সর খোঁজার সময় নেই। চার দশকপূর্তি নিয়ে বড় একটা অনুষ্ঠান করতে গেলে স্পন্সর লাগে। সেটার পেছনে দৌড়ানোর সময় নেই। সুতরাং আমরা আমাদের গান নিয়েই আছি, গানেই থাকব। আর বর্তমান সময়ে মিউজিক কেন, কোনো কিছুই তো ঠিকমতো হচ্ছে না। এই অ্যালবামের কাজ আগেই শেষ হয়েছে বিধায় প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি। এই গানগুলো নিয়েই হয়তো ভাইনাল অ্যালবাম প্রকাশ পাবে এই বছরের শেষ নাগাদ।
অবসকিওরের চার দশকের পথচলাটা কেমন ছিল?
সত্যি বলতে, কখন যে সময় চলে গেল টেরই পেলাম না। মিউজিক ভালোবাসলে সময়টা বোঝা যায় না। আমাদের যে চার দশক হয়ে যাচ্ছে, সেটা ওইভাবে কখনো হিসাব করা হয়নি। কাজ করছি, নতুন কিছু করার চেষ্টা করছি। তবে চার দশক স্পর্শ করা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তির। এ কারণে বছরটি স্মরণীয় করে রাখতেই আমাদের অ্যালবামের পরিকল্পনা। চার দশকের জার্নি নিয়ে যদি বলি, দীর্ঘ এ সফরে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। তবে আমাদের মূল চালিকাশক্তি ছিল গান। সব সময় আমাদের উৎসাহ জুগিয়েছে শ্রোতাদের ভালোবাসা। ১৯৮৫ সালে খুলনায় অবসকিওরের যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমি ছাড়া সেই সময়ের কেউ নেই এখন। সবাই নতুন সদস্য। দীর্ঘ এই পথচলায় প্রচুর সদস্য পরিবর্তন হয়েছে, আমাদের দুজন সদস্য মারা গেছেন। সেই অধ্যায়টাও পেরিয়ে এসেছি আমরা। এখন যে লাইনআপটা আছে, সেটা গত ১০ বছর ধরে কাজ করছে।
যে স্বপ্ন নিয়ে অবসকিওরের যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেটা কতখানি পূরণ হয়েছে?
আমাদের গান মানুষ শুনবে, এটাই ছিল স্বপ্ন। ১৯৮৬ সালে প্রথম অ্যালবাম প্রকাশের পর শ্রোতাদের সেই ফিডব্যাক পেয়েছিলাম। বাংলাদেশের মানুষ আমাদের যে পরিমাণ ভালোবাসা দিয়েছেন, তার প্রতিদান দেওয়ার ক্ষমতা নেই। গান দিয়েই সেই প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আপনারা যখন শুরু করেছিলেন সে সময় অডিও ক্যাসেটের যুগ। সময়ের বিবর্তনে এখন গান প্রকাশ পাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে। এই পরিবর্তনটা কীভাবে দেখেন?
শুধু এই পরিবর্তন নয়, সামনের দিকে এগোতে হলে সব ধরনের পরিবর্তনকে অ্যাডাপ্ট করতে হবে। সবকিছুর ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে যে পরিবর্তন হয়েছে সেটারও ভালো ও খারাপ দিক আছে। আমি যেটা মিস করি সেটা হলো সলিড একটা জিনিস হাতে পাওয়া। একটি সিডি অথবা ক্যাসেট হাতে পেলাম, উল্টে-পাল্টে দেখলাম, ক্যাসেটের কাভার পড়লাম; সেটার আলাদা মজা ছিল। এই বিষয়গুলো খুব মিস করি। এখন স্ট্রিমিং মিডিয়াতেই গান প্রকাশ হচ্ছে। বিদেশি শিল্পীরাও তাঁদের গানগুলো সিঙ্গেলস অথবা অ্যালবাম আকারে স্ট্রিমিং মিডিয়াতে দিচ্ছেন। পাশাপাশি ভাইনাল ফিরে এসেছে। বড় তারকাদের অ্যালবামগুলো ভাইনাল আকারে আসছে। সেই জন্যই আমাদের ভাইনাল নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা। সেটা মোটামুটি কমপ্লিট করেছি, এই বছরের শেষেই হয়তো প্রকাশ করতে পারব। সব মিলিয়ে আমার মনে হয় গান শোনা মানুষের জন্য এখন অনেক সহজ হয়েছে।
অবসকিওরের মতো দেশের বেশির ভাগ জনপ্রিয় ব্যান্ড ঢাকার বাইরে থেকে উঠে এসেছে। এখন ঢাকার বাইরে ব্যান্ডসংগীতের অবস্থা কেমন দেখছেন?
ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরেই ব্যান্ডচর্চা বেশি হচ্ছে। সবার চেষ্টা আছে, প্রতিভাও আছে। সময়টা ভালো নয় বলে কোনো কিছুই হয়তো জানতে পারছি না কিংবা আমাদের সামনে আসছে না।