মাইকেল জ্যাকসনের একমাত্র কন্যা, প্যারিস জ্যাকসন, দীর্ঘ ২০ বছর পর নীরবতা ভেঙে তাঁর বাবার সঙ্গে কাটানো সময় এবং তাঁর বর্তমান জীবন নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন এক সাক্ষাৎকারে।
২০০৯ সালে বাবা মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যু পর থেকে প্যারিস অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। তবে বর্তমানে তিনি নিজের সংগীত ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে ব্যস্ত। ছোটবেলা থেকেই তিনি তাঁর বাবার জনপ্রিয়তা ও বিতর্কের ছায়ায় বড় হয়েছেন।
তাঁর বাবা ‘পপের রাজা’ মাইকেল জ্যাকসনও ছোটবেলায়ই সংগীত জগতে প্রবেশ করেছিলেন। এরপর তিনি সারা পৃথিবী মাতালেও, জীবনে অনেক কঠিন সময় পার করেছেন। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যুর সময় পুরো বিশ্ব শোকে কাতর হয়েছিল। তবে তাঁর মৃত্যুর পরও মিডিয়ার নজর থেকে তাঁর পরিবার মুক্তি পায়নি। বিশেষ করে, তার সন্তানেরা সব সময়ই পাপারাজ্জিদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন।
১৯৯৮ সালের ৩ এপ্রিল ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া প্যারিস তাঁর ভাইদের সঙ্গে ছয় বছর বয়স পর্যন্ত হোম স্কুলিং করেছেন। মাইকেল তাঁর সন্তানদের ব্যক্তিগত জীবন রক্ষা করতে খুব সচেতন ছিলেন। তাই তিনি প্রায় সময়ই ক্যামেরার সামনে পড়ে গেলে সন্তানদের লুকিয়ে ফেলতেন কিংবা মুখ ঢেকে দিতেন।
সুপারমডেল নাওমি ক্যাম্পবেলের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকারে প্যারিস জানান, তাঁর বাবা চেয়েছিলেন তাঁরা যেন শুধুমাত্র বিলাসবহুল জীবনই না দেখেন, বরং বাস্তবতার সঙ্গেও পরিচিত হন। প্যারিস বলেন, ‘আমরা শুধু পাঁচ তারকা হোটেলই দেখিনি, আমরা গরিব দেশগুলোর পরিস্থিতিও দেখেছি।’
বাবাকে হারানোর পর
২০০৯ সালের ২৫ জুন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান মাইকেল জ্যাকসন। প্যারিস তখন মাত্র ১১ বছর বয়সী ছিলেন। বাবার স্মরণসভায় পুরো বিশ্বের সামনে এসে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ছিলেন পৃথিবীর সেরা বাবা। আমি তাঁকে অনেক ভালোবাসি।’
তারপর থেকে প্যারিস ও তাঁর ভাইয়েরা তাঁদের দাদি ক্যাথরিন জ্যাকসনের তত্ত্বাবধানে বড় হয়েছেন। কৈশোরকালে তিনি নানা মানসিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছেন, হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রল ও সাইবার বুলিং তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। একসময় তিনি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। পরে থেরাপির মাধ্যমে তিনি জীবনের নতুন অর্থ খুঁজে পান।
২০১৫ সালে স্কুল থেকে এক বছর আগেই গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন প্যারিস। এরপর নিজেকে সংগীত ও মডেলিং জগতে প্রতিষ্ঠিত করতে শুরু করেন। তিনি রোলিং স্টোন, ভোগসহ অনেক বিখ্যাত ম্যাগাজিনের কাভারে ছিলেন। ২০২০ সালে তাঁর প্রথম অ্যালবাম ইন্ডি-ফোক ঘরানার ‘উইলটেড’ প্রকাশিত হয়। তাঁর সংগীত বাবার মতো পপ কিংবা আরএনবি ঘরানার না হলেও, মাইকেলের প্রভাব যে তাঁর ওপর রয়েছে, তা তিনি স্বীকার করেন।
প্যারিস তাঁর শরীরে ৫০ টিরও বেশি ট্যাটু করিয়েছেন। এর মধ্যে ৯টি তাঁর বাবার স্মৃতিতে উৎসর্গ করা। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় আমার বাবাকে অনুভব করি, যেন তিনি এখনো আমার সঙ্গেই আছেন।’
নিজের কঠিন অতীত পেছনে ফেলে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় গড়তে। মাইকেল জ্যাকসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে নয়, বরং একজন স্বতন্ত্র শিল্পী ও সংগ্রামী মানুষ হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
যারা বাবা-মাকে হারানোর কষ্ট অনুভব করেছেন, তাঁরা প্যারিসের যাত্রার সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করতে পারেন। তবে তিনি শুধু একজন তারকার কন্যা নন, বরং নিজের শক্তি ও প্রতিভার মাধ্যমেই তিনি নিজের পরিচয় গড়ে তুলছেন।