তাঁরা জানিয়েছেন, আন্ডারগ্রাউন্ড জেলের জানালাহীন প্রকোষ্ঠে তাঁদের দীর্ঘ দিন থাকতে হয়েছিল। সেখানে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় হাত এবং চোখ বেঁধে। যখন তাঁদের ছাড়া হয়েছে, তখনও একই ভাবে নিয়ে আসা হয়। যারা সেখানে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাই ভেবেছিলেন সেই অন্ধকার থেকে তাঁদের যেন মুক্তি হবে না।
নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, অগস্ট মাসে হাসিনা দেশ ছাড়ার পরেই প্রকাশ্যে আসেন মীর আহমদ কাসেম আরমান এবং আরও দুইজন ব্যক্তি । তাঁরা দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন ওই গোপন কারাগারে। পেশায় আইনজীবী আরমান, মুক্তি পাওয়ার পরে জানিয়েছেন, তিনি যেন তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুধুমাত্র একবার দেখা করতে পারেন সেই প্রার্থনাই করতেন।
সেখানের বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাসিনার বিরোধিতা যারা করেছিলেন তাঁদের অনেককেই হত্যা করা হয়েছে এবং বাকিদের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড মিলিটারি ডিটেনশন সেন্টারে ‘ রাখা হয়েছিল। সেই কারাগারের কোড-নাম ছিল ‘হাউস অফ মিররস’ বা ‘আয়নাঘর’। এখন সেখানের অনেকেই সেই গোপন ডেরার গল্প প্রকাশ্যে এনেছেন। তাঁরা যে কথা সামনে এনেছেন তা একটি নির্মম ইতিহাস। তাঁদের দাবি, সেখানে দীর্ঘমেয়াদী বন্দিদের আটকে রাখার ভার ন্যস্ত হয়েছিল সামরিক গোয়েন্দা শাখার উপর। মানবাধিকার সংস্থাগুলির দাবি, ২০০৯ থেকে এখন পর্যন্ত ৭০০ জনেরও বেশি লোককে জোর করে ‘গুম করা হয়েছে’।
ওই প্রতিবেদন অনুসারে, আয়নাঘরে যারা কাটিয়ে এসেছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, সেখানে তাঁদের অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেতে হয়েছে। মাটির নিচের ঘরের একটা ছোট ঘুলঘুলি দিয়ে যারা বাইরের আলো দেখার চেষ্টা করেছেন তাদের ভোগ করতে হয়েছে আরও যন্ত্রণা। তাঁরা জানান, আয়নাঘরের লক্ষ্য ছিল বন্দিদের শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করা। সেখানে কেউ কারোর সঙ্গে কথাও বলতে পারতেন না।
তাঁদের একজন বলেন, ‘এমন কোনও ভাষা নেই যা দিয়ে আমি আমার অপমান ও যন্ত্রণা বর্ণনা করতে পারব।’ যদিও কাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না এবং আয়নাঘরে রাখা হয়েছিল তা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস।