Homeবিদেশী গণমাধ্যমে বাংলাদেশBangladesh Protest,সাম্প্রদায়িক মুষ্টিমেয়, সংখ্যালঘুরা তবু টার্গেট হচ্ছেন কেন - bangladesh protest communal...

Bangladesh Protest,সাম্প্রদায়িক মুষ্টিমেয়, সংখ্যালঘুরা তবু টার্গেট হচ্ছেন কেন – bangladesh protest communal handful the minorities still being targeted


কেউ যদি আমাদের উৎখাত করে শান্তিতে থাকার চেষ্টা করে, তা হলে এই দেশটাও আফগানিস্তান কিংবা সিরিয়া হয়ে যাবে। যেখানে গণতান্ত্রিক শক্তি বলে কিছু থাকবে না, পুরোটাই সাম্প্রদায়িকতার অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে—শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদিঘি মাঠে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে এ ভাবেই ‘হুঁশিয়ারি’ দিতে শোনা গিয়েছিল মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে। কাকে হুঁশিয়ারি? তাতে লাভ কী? ফোনে ‘এই সময়’-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে খানিকটা অভিমানীই শোনাল চিন্ময়কৃষ্ণর গলা।বললেন, ‘সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিয়ে গত ৫৩ বছরে সব শাসককেই উদাসীন থাকতে দেখেছি। কাজ যা হয়েছে, সবই লোকদেখানো। বাস্তবে এ দেশে হিন্দুদের জন্যে কেউ কোনও রক্ষাকবচ দেয়নি। প্রথমে সবাই আশ্বাস দেয়, তার পর সবাই চুপ করে যায়।’ তাঁর সংযোজন, ‘এ দেশের বেশিরভাগ মানুষই অসাম্প্রদায়িক। সাম্প্রদায়িক হিংসা যারা ছড়াচ্ছে, তারা মুষ্টিমেয়। তবু এদের রোখা যাচ্ছে না। কারণ, এদের আটকানোর সদিচ্ছাটাই নেই কারও। হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় কারও আন্তরিকতা নেই। ইউরোপ, চিন-জাপানের চাপ এড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত খ্রিস্টান, বৌদ্ধদের ২-৩ গুণ ক্ষতিপূরণ পাইয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এ দেশে অ্যান্টি-ইন্ডিয়া প্রচার এত বেশি যে, কোনও শাসকদলই যেন ভারতের তরফে কোনও চাপ অনুভব করে না। হিন্দুরা অসহায়।’

হিন্দু-নিপীড়ন নিয়ে ফোনের ও পারে একই সুরে সরব ‘বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’-এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্রকুমার নাথও। তাঁর কথায়, ‘যত বার সরকার বদল হয়েছে বাংলাদশে, তত বারই আগে-পরে টার্গেট হয়েছেন সংখ্যালঘুরা। এই ইতিহাস আগাগোড়া। আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি আমরা। ২০০১-এ সংখ্যালঘুদের উপরে হামলা নিয়ে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কমিশনের রিপোর্টও বাস্তবায়িত হয়নি। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।’

কিন্তু পড়ে পড়ে মার খাওয়াটা যদি ‘ট্র্যাডিশন’ হয়, তা হলে শুক্রবার লালদিঘি চত্বরে লক্ষাধিক মানুষ জড়ো হলেন কী ভাবে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সাম্প্রতিক কালে গোটা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের এত বড় সমাবেশ কখনও হয়নি। এই বিপুল সমাবেশের ব্যাখ্যায় চিন্ময়কৃষ্ণর বক্তব্য, ‘খুন-ধর্ষণ-লুটপাট, তোলাবাজি, অপহরণ, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া কিংবা মন্দির-বাজারে হামলার ঘটনা বহু বার ঘটেছে। গত ৫৩ বছরে এ দেশে হওয়া হিন্দু নির্যাতন বা খুন-ধর্ষণের কোনও বিচার হয়নি। কিন্তু এ বার যে ভাবে বেছে বেছে হিন্দুদের চাকরি থেকে সরানো হচ্ছে, গত ৫৩ বছরে তা ঘটেনি। জীবন-জীবিকা বিপন্ন বলেই এত হিন্দু পথে নেমেছেন।’ বিচারহীন সংস্কৃতিতে গোটা বাংলাদেশের ঐতিহ্য-ইতিহাস বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় সব সম্প্রদায়ের সাধু-সন্তরাও একজোট হয়েছেন বলে দাবি চিন্ময়কৃষ্ণর। তাঁর কথায়, ‘আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। মহাভারতের পিতামহ ভীষ্মের মতো দীর্ঘ জীবনের চেয়ে কীর্তিমান অভিমন্যুর মতো কীর্তিবাহী স্বল্পায়ু ঢের ভালো।’

শুক্রবার লালদিঘির সমাবেশে যোগ দিতে চট্টগ্রাম ও তার আশেপাশের ১৫টি উপজেলা থেকে সামিল হয়েছিলেন বিভিন্ন জীবিকার সঙ্গে যুক্ত সংখ্যালঘুরা। সমাবেশ থেকে স্লোগান ওঠে—‘আমার মাটি, আমার মা, বাংলা ছেড়ে যাব না’, কিংবা ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়? বাংলা কি তোর বাপ-দাদার!’ সংখ্যালঘু নির্যাতন বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠন, দোষীদের শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণের মতো ৮ দফা দাবি পূরণ না হলে ঢাকা অভিমুখে লং মার্চ, আরও কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় সমাবেশ থেকে। চিন্ময়কৃষ্ণর কথায়, ‘শুধু সংখ্যালঘু পরিচয়ের কারণে প্রশিক্ষণাধীন পুলিশের ৯৩ জন এসআই-কে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেটেরেনারি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বেছে বেছে হিন্দুদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আমরা নীরব থাকব না।’

৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক আগে এবং তার পরের বেশ কয়েকটি দিন বাংলাদেশ থেকেই খবর হয়েছিল যে, সে দেশের হিন্দু শিক্ষক-অধ্যাপকদের চাপ দিয়ে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। সংখ্যাটা অন্তত ৫০ বলে জানা গিয়েছিল সেপ্টেম্বরে। অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরেও পরিস্থিতির বিশেষ বদল হয়নি বলে দাবি অনেকের। কোপে এ বার পুলিশও। অভিযোগ, তলে তলে পুলিশ বাহিনীতেও ইসলামিকরণের চেষ্টা চলছে।

রাষ্ট্রপতি অপসারণ: এখনও মত মেলেনি বিএনপির

সূত্রের খবর, আচমকা শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে রাজশাহির সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ৪০তম ক্যাডেট-২০২৩ ব্যাচের ৭০৪ জনের মধ্যে ২৫২ জন এসআই-কে চাকরি থেকে সরানো হয়েছে গত সপ্তাহে। অভিযোগ, এঁরা নাকি অ্যাকাডেমির ব্রেকফাস্টের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এই ২৫২ জনের মধ্যে থেকে বিশেষ সূত্রে যে ৯৩ জনের নাম-নম্বর পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে দু’জন খ্রিস্টান ও দু’জন বৌদ্ধ—বাকিরা সব হিন্দু। ক্লাসে হইচই করার ‘অপরাধে’ গত ২১ ও ২৪ অক্টোবর দু’দফায় ওই ব্যাচেরই আরও ৫৯ জনকে শোকজ় করা হয়েছে! সূত্রের দাবি—চাকরি খোয়ানো সবাই আওয়ামি লিগ সরকারের আমলে নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। এঁদের প্রত্যেকেরই প্রশিক্ষণ পর্ব ছিল প্রায় শেষের মুখে।

গত মাসে বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতন প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘এর মধ্যে অনেক রং চড়ানো ঘটনা আছে। সব সত্যি না। আর তা ছাড়া এ সব নির্যাতন-নিপীড়নের ঘটনা সাম্প্রদায়িক নয়, রাজনৈতিক।’ কিন্তু তা-ই বা হবে কেন? এই ‘স্বাধীনতা’ই কি চেয়েছিল বাংলাদেশ? ফোনে ‘এই সময়’-কে চিন্ময়কৃষ্ণ বলেন, ‘সব দলকে পাশে নিয়ে পথে নামা ছাত্র আন্দোলনকে আমরা পরিবর্তনের বাতিঘর হিসেবেই ধরেছিলাম।

মনে করেছিলাম, এ বার নিশ্চিত পরিবর্তনের সুবাতাস আসবে। সংখ্যালঘুদের স্বার্থে সদর্থক ভূমিকা নেবেন বলে মুহাম্মদ ইউনূসের কাছেও অনেক আশা করেছিলাম। কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাইনি। আমাদের আট দফা দাবির মধ্যে যে সংখ্যালঘু কমিশন গড়ার দাবি রয়েছে, সেটা তো সকালে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিকেলেই বাস্তবায়িত করা যায়! চাইলে এর মধ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রকও কি তৈরি করা যেত না?’



Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত