গত ৫ অগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পরে এই পালা বদলের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামি বড়সড় ক্ষোভের মুখে পড়ল। বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে জামায়াতের আমিরের বেফাঁস মন্তব্যের জেরে এই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশেই। প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন বাংলাদেশের সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের উত্তরসূরিরা। তাঁদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতিও দেওয়া হয়েছে।কী বলেছিলেন জামায়াতের আমির?
দেশে বর্তমান আবহে সংবিধান পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান সম্প্রতি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান ভারতের মাটিতে বসে রচনা করা হয়েছিল। তাই এই সংবিধান জন্মভূমি হিসেবে বাংলাদেশকে পায়নি।‘ তিনি নতুন সংবিধান রচনার দাবি জানিয়ে বলেছিলেন, দরকার হলে বিদেশের বিশেষজ্ঞদের ডেকে এনে বাংলাদেশের উপযোগী সংবিধান তৈরি করা হোক।
এর পরেই শনিবার বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের পরিবারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধান স্বাধীন সার্বভৌম এই দেশের মাটিতেই রচনা করা হয়েছে। আর সংবিধান প্রণয়ন কমিটির মধ্যে এখনও চারজন জীবিত রয়েছেন।তাঁরা হলেন- ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও আবদুল মুত্তাকিম চৌধুরী।’
খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে এই বিবৃতি দিয়েছেন ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন (সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের মেয়ে), তানিয়া আমীর (সংবিধান প্রণেতা আমীর–উল ইসলামের মেয়ে), নাসরিন ইসলাম (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত প্রফেসর নুরুল ইসলাম চৌধুরীর মেয়ে), মইনুর রহমান (প্রয়াত সংবিধান প্রণেতা হাফেজ হাবীবুর রহমানের ছেলে), মাসুদ আকন্দ (সংবিধানপ্রণেতা প্রয়াত এ কে মোশারফ হোসেন আকন্দের ছেলে), নাসরিন (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত অধ্যাপক মো. খোরশেদ আলমের মেয়ে), চিকিৎসক মইনুল ইসলাম চৌধুরী (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত প্রফেসর ইসলাম চৌধুরী ছেলে), আনিসুর রহমান (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত শেখ আবদুর রহমানের ছেলে), দেওয়ান আফতাবুল আলম (সংবিধান প্রণেতা প্রয়াত দেওয়ান আবুল আব্বাসের ছেলে)।
বাংলাদেশ সংবিধান খসড়া প্রণয়ন কমিটির পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও দর্শনকে ধারণ করে লাখো শহিদের রক্তে লিখিত বাংলাদেশের সংবিধান। বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করে। বাংলাদেশের জন্য সংবিধান প্রণয়ন ছিল গণপরিষদের একমাত্র কাজ। এই আদেশ জারির মধ্য দিয়ে সংবিধান রচনার আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হয়।’
বিবৃতিতে খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা আরও বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গণপরিষদের সংসদীয় দলের নেতা নির্বাচন করা হয়। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সংবিধান খসড়া কমিটির সদস্যরা দিনরাত পরিশ্রম করে জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে রচনা করেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের সংবিধান। দীর্ঘ সময় ধরে আলাপ-আলোচনা ও তর্কবিতর্কের পরে ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে সংবিধান বিল গণপরিষদে পাশ হয়। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রথম বিজয় দিবসে সংবিধান কার্যকর হয়।