বিরোধের সূত্রপাত ১৯৯৭ সালে। ওই সময়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ-ক্রয় চুক্তি সই করেছিল বিদ্যুৎ সংস্থা। পরে ১৯৯৯ সালে প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। সে বছরই ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্সের (আইসিসি) ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগ দায়ের করে ‘স্মিথ কো-জেনারেশন’। তার মীমাংসা না হওয়ায় ২০০৬ সালে ইউএস-কোর্টে ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা করে ওই বিদ্যুৎ সংস্থা।
এ দিকে, খবরটি প্রচারিত হওয়ার পরই স্টেটসে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজ়ল আনসারি শনিবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে পরোয়ানা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান। আনসারি সেখানে বলেন — ১৯৯৯ সালে আওয়ামি লিগ সরকারের একটি চুক্তি বাতিলের দায়ে স্মিথ কো-জেনারেশন ক্ষতিপূরণ দাবি করে স্টেটসের আদালতে মামলা করে। ১৯৯৭ সালে ওই সংস্থা তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি বিদ্যুৎ-ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি বার্জ-মাউন্টেড বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। তার প্রায় ২৫ বছর বাদে এই মামলায় এক্তিয়ার বহির্ভূত ভাবেই রায় দিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি সার্কিট আদালত। যা পরদিন, শুক্রবার আদালত স্থগিত করে দেয়। বিষয়টির সাময়িক অবসান ঘটেছে।
বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ‘দ্য ডেইলি স্টার’ লিখেছে — গত ২১ অক্টোবর আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্কের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে ওয়াশিংটন ডিসিতে যান বাংলাদেশের অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে এই টিমে আছেন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর-সহ সাত জন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্তা।
জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় ইউএস-কোর্টে আপিল করেছে বাংলাদেশ। সেখানে বলা হয়েছে — যে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁরা দু’জনেই উচ্চস্তরের বাংলাদেশি কূটনীতিক ও আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্কের কর্মকর্তা। ইউএস ফৌজদারি এবং দেওয়ানি মামলা থেকে তাঁরা দায়মুক্ত। আপিলে আরও বলা হয়েছে যে, বিচারক নিকোলসের আদালতের রায় এক্তিয়ার বহির্ভূত ও গ্রেপ্তারির প্রয়োগ অযোগ্য।
মামলায় সালেহউদ্দিন ও মনসুরকে বাংলাদেশের অর্থায়নের ‘দু’জন সিনিয়র নেতা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তির জন্য তাঁদের জবানবন্দির প্রয়োজন আছে বলেও জানানো হয়। অন্য দিকে, সংবাদমাধ্যম ‘ল ৩৬০’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে — এই ঘটনায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন ও গভর্নর মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা মন্তব্য করতে রাজি হননি। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও মন্তব্য করতে চাননি।
গণমাধ্যমটি আরও লিখেছে যে, বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, ওয়াশিংটনে বাংলাদেশি কূটনীতিক ডিএম সালাউদ্দিন এবং বিদেশ মন্ত্রকের মহা-পরিচালক (উত্তর আমেরিকা) খন্দকার মাসুদুল আলমের সঙ্গেও তারা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে। কিন্তু কেউ এ বিষয়ে মন্তব্যে করেননি। গণমাধ্যমটির তরফে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দুই শীর্ষ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরা অবশ্য জানান, বিষয়টি তাঁদের জানা নেই। এ দিকে ওই সংস্থা ইউএস কোর্টকে জানায় — সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য গত বুধবার আদালতে হাজির হওয়ার কথা ছিল সালেহউদ্দিন ও মনসুরের। কিন্তু তাঁরা হাজির হননি।
সালেহউদ্দিন ও মনসুর, দু’জনেই আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাঙ্কের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে ওয়াশিংটন গিয়েছেন এ সপ্তাহে। এই প্রেক্ষাপটে ওই বিদ্যুৎ সংস্থার বক্তব্য, জবানবন্দি নেওয়ার একমাত্র সুযোগ হতে পারে তাঁদের এই সফর।