যারা জানেন তাদের জন্য না। যারা জানেন না তাদের জন্য বলা; সময়ের প্রতিশ্রুতিশীল কণ্ঠশিল্পী টিনা রাসেলের শুরুটা হয়েছে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে। ২০১৯ সালে কিংবদন্তির অকাল প্রয়াণ হয়েছেন বটে, তবে তার কথা-সুর এখনও তুমুল বাজে।
তেমনই এক অনবদ্য সৃষ্টি আবিষ্কৃত হলো দীর্ঘ ৯ বছর পর! যার অন্যতম সাক্ষী হলেন টিনা রাসেল।
২০১৬ সালে ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ‘অঙ্গার’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার সফল এই ছবিটির অন্যতম প্রযোজক জাজ মাল্টিমিডিয়া। সিনেমাটির জন্য আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল তৈরি করেন ‘তুমি নদী প্রেমের নদী’ নামের একটি গান। ২০১৬ সালে ছবিটি মুক্তি পেলেও গানটি আলাদা করে প্রকাশ হয়নি ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে।
সিনেমা মুক্তির ৮ বছর পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর সেই গানটি জাজ মাল্টিমিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা হয়। যেখানে সিনেমা ও গানের সব পরিচয় ঠিক থাকলেও শিল্পীর নাম ‘অপরিচিত’ লেখা ছিল! গানটি প্রকাশের পরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। মন্তব্যের ঘরে যেমন প্রশংসা জোটে, তেমনি সবারই প্রশ্ন থাকে- কে এই অসাধারণ গানের কণ্ঠশিল্পী? কেন তার নাম নেই। অনেককেই আবার অনুমান করে অনেক শিল্পীর নাম বলতেও দেখা গেছে।
এভাবে ১০ দিন অতিক্রম করার পর, গানের মূল শিল্পী টিনা রাসেলের কাছে খবর আসে জাজ মাল্টিমিডিয়ার পক্ষ থেকে। বলা হয় গানটি শুনে জানানোর জন্য এটি কি তার গাওয়া?
এ প্রসঙ্গে টিনা রাসেল বলেন, ‘লিংকটা পাঠানোর পরই আমি একটু বিরক্ত হলাম। কারণ না শুনেই বলে দিতে পারি ওটা আমার গাওয়া নয়। আমি গাইলে তো জানতামই! পরে গানটা শুনে তো আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম! এরপর ইউটিউবের মন্তব্যের ঘরে গিয়ে দেখতে থাকলাম মানুষের প্রেডিকশন। সেখানে আমি মন্তব্য করলাম, এটা আসলে আমার গাওয়া। এরপর জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান আব্দুল আজিজ ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো। তাকেও বললাম। সঙ্গে সঙ্গে গানটির ডেসক্রিপশন আপডেট করা হলো।’
টিনা রাসেল জানান, এই গানটির কথা তিনি বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলেন। অথচ তিনি বরাবরই আফসোস করে আসছিলেন, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে যদি সিনেমায় আরও কিছু গান করতে পারতেন, তবে আরও সমৃদ্ধ হতে পারতেন। তাহলে কেমন করে এই গানটি এত বছর অন্তরালে ছিল। এমনকি প্রকাশের পরেও অন্তত ১০ দিন অপ্রকাশিত ছিল শিল্পীর নাম!
জবাবে টিনা রাসেল বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক। কাকু বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই এমনটা হতো না। ধরুন আমি তো গান করেছি কাকুর নির্দেশে। কখনও জিজ্ঞেসও করিনি এটা কীসের জন্য বা কোন সিনেমার জন্য। কিংবা কবে রিলিজ হবে। আবার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সরাসরি যোগাযোগ করতো কাকুর সঙ্গে। অর্থাৎ আমাদের মাঝে বটগাছ ছিলেন বুলবুল কাকু। তিনি না থাকাতেই এই অবস্থা।’
এই শিল্পী জানান, ‘তুমি নদী, প্রেমের নদী’ গানটি রেকর্ড হয়েছে ২০১৫ সালে। তখন কাছাকাছি সময়ে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা-সুরে টিনা রাসেল অন্তত ৪০টি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। মূলত সেই কারণে এই গানটির কথা ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি।
তার ভাষায়, ‘আমার মনে পড়ে, তখন ওয়ালটনের একটি প্রজেক্টের জন্য কাকু টানা গান তৈরি করছিলেন। অন্তত ৪০টি গানে তখন কণ্ঠ দিয়েছিলাম। ফলে এই গানটির কথা আলাদা করে মনে রাখতে পারিনি। এত বছর পর গানটি খুঁজে পেয়ে জাস্ট কেঁদে ফেলেছিলাম। মনে হলো আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম।’
গানটির সূত্র ধরে টিনা রাসেল আরও বলেন, ‘একজন গানের মানুষের জীবনে কিছু কাঙ্ক্ষিত গান আসে, অনেক সময় নানা জটিলতায় ওই গানগুলো সঠিক সময়ে প্রাণ পায় না। বুলবুল কাকুর করা আমার গাওয়া বেশ কিছু ফিল্মের গানের মধ্যে এই গানটা অন্যতম। কাকু বেঁচে না থাকায় এই গানের মূল শিল্পী (আমি) বেঁচে থেকেও অনেকটা নিখোঁজ ছিল! জাজ মাল্টিমিডিয়া কর্তৃপক্ষ শিল্পীর নাম খুঁজে বের করতে যথেষ্ট শ্রম দিয়েছে! আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি। শ্রদ্ধা জানাই বুলবুল কাকুর প্রতি।’ ‘অঙ্গার’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন কলকাতার ওম এবং ঢাকার জলি।
বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে টিনা রাসেল ব্যস্ত রয়েছেন তার একক ক্যারিয়ার নিয়ে। নিয়মিতই প্রকাশ করছেন স্বনামধন্য সংগীত পরিচালকদের সুরে নতুন গান ও ভিডিও। সঙ্গে স্টেজ ব্যস্ততাও রয়েছে। এছাড়াও কাজ করছেন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে।