যুক্তরাষ্ট্রে মারা যাওয়া কথিত ব্যক্তির বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে অভিনব কায়দায় প্রতারণার মামলায় প্রতারক চক্রের আরেক সক্রিয় সদস্য পান্না বেগমকে (৪১) গ্রেফতার করেছে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বনশ্রীর এক মডেল এজেন্সির অফিস থেকে প্রতারক চক্রের এক সদস্য আজিজ মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকালে ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান এ তথ্য জানান।
তালেবুর রহমান জানান, বিপুল পরিমাণ ডলারের লোভ দেখিয়ে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন প্রতারণা করে আসছিল। গত ১২ অক্টোবর নিউ মার্কেট থানায় প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। ওই মামলায় বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে পান্নাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আদায় করা ৬ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৬টি অ্যাকাউন্টের চেকের পাতা, ৩টি ভিসা কার্ড, ৪টি মোবাইল ফোন, ৮টি সিমকার্ড, পান্না ইন্টারন্যাশনাল নামক ভুয়া এজেন্সির ৮টি ভিজিটিং কার্ড, একটি রাবার স্ট্যাম্প, একটি সিলপ্যাড ও একটি হাতব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
নিউ মার্কেট থানা সূত্র জানায়, পাঁচ মিলিয়ন ডলারের লোভ দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগে ভুক্তভোগী মো. নুরুজ্জামান গত ১২ অক্টোবর নিউ মার্কেট থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘আন্না হ্যারিশন’ নামক ফেসবুক আইডি থেকে নুরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাদীকে জানানো হয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকা অবস্থায় মারা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাইনস ব্যাংকে বেলটনের বিমার পাঁচ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। বাদীকে ওই মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার জন্য বলে এবং অ্যালাইনস ব্যাংক ম্যানেজারের আরেকটি হোয়াটস অ্যাপ নাম্বার দেয় তারা। আন্না হ্যারিশন তার বানানো মেসেজ সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে দিতে বলে। তারপর বাদীকে এক আইন উপদেষ্টার নাম্বার দিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কথিত ওই আইন উপদেষ্টা বিমার টাকা পাওয়ার জন্য বাদীকে ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পাঠাতে বলে। পরবর্তী সময়ে আন্না হ্যারিশন ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধের একটি পেমেন্ট স্লিপ বাদীকে প্রদান করে।
কথিত ব্যাংক ম্যানেজার পরে বিমার ৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটি শিপিং কোম্পানির কাছে দুটি লাগেজ দিয়েছে বলে বাদীকে জানায় এবং প্রমাণস্বরূপ একটি ভিডিও দেখায়। ব্যাংক ম্যানেজার বিমা ও ডেলিভারি খরচ বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী ডাচ বাংলা ব্যাংকের উত্তরা শাখার একটি অ্যাকাউন্টে তা জমা দেন। এরপর গত ৩ অক্টোবর একটি নাম্বার থেকে অজ্ঞাতনামা একজন ফোন করে নিজেকে ঢাকা বিমানবন্দরের কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দেন এবং বাদীর দুটি লাগেজ কাস্টমসে আটকে আছে বলে জানান। লাগেজ দুটি ছাড়াতে চার লাখ সাত হাজার টাকা দেওয়ার কথা বললে বাদী ইসলামী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে সেই টাকা দেন। এরপর বাদী কথিত ওই কাস্টমস কর্মকর্তার কথামতো আয়কর ও ট্যাক্স বাবদ আরও ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ইসলামী ব্যাংকের আরেকটি অ্যাকাউন্টে প্রদান করেন। এরপরও তারা বাদীর কাছে আরও ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা চায়। এতে সন্দেহ হলে তিনি বিমানবন্দর কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন এটি প্রতারক চক্রের কাজ। এভাবে প্রতারক চক্রটি বাদীর সব মিলিয়ে ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
থানা সূত্র আরও জানায়, প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতারক চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য পান্না বেগমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে পান্না জানান, তারা প্রতারণা করার জন্য ‘আন্না হ্যারিশন’ নামে ফেক ফেসবুক আইডি পরিচালনা করতো। নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে ভিকটিমদের ফোন করে টাকা চাইতো। এভাবে তারা দীর্ঘদিন অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
পান্নার বিরুদ্ধে নিউ মার্কেট থানায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেফতারেও অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানায় ডিএমপির এই কর্মকর্তা।