বাস্তবতা বড় নির্মম
২০১১ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। তার পর থেকে ঝিনাইদহে গ্রামের বাড়িতেই আছি। সারা দিন রাজহাঁস, মুরগি আর গরুর দেখাশোনা, শাকসবজির খেতের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সংসারের নানা কাজ শেষ করে সন্ধ্যা সাতটার দিকে শোলার কাজ নিয়ে বসি। রাত দুইটা–তিনটা পর্যন্তও কাজ করি। সেসব জিনিস নিয়ে বিভিন্ন মেলায় যাই। এই জয়নুল মেলাতেও প্রতিবছর আসি।
এই ৭০ বছরের জীবনে অর্জন কম নয়। নানা সম্মাননাও পেয়েছি। বিসিকের শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পীর পুরস্কারসহ প্রায় কুড়িটির মতো পুরস্কার পেয়েছি। ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক পুরস্কার (ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফটস কাউন্সিল এশিয়া প্যাসিফিক রিজিয়নের ‘ক্রাফট মাস্টার অ্যাওয়ার্ড’) পেয়েছি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় জাপানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে নিজের হাতের কাজ প্রদর্শন করেছি। বিদেশিদের কাছে এ দেশের হস্তশিল্পের কদর কতটা, তা উপলব্ধি করেছি। সেই কারণেই বিমানবন্দরের কাছে আমার মতো শিল্পীদের জন্য একটি বিক্রয়কেন্দ্র করে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। তবে সেই চাওয়া পূরণ হয়নি।
আমাদের তিন সন্তান। বড় মেয়ে গৃহিণী, ছোট মেয়ে প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ছেলেটার শোলাশিল্পে আগ্রহ ছিল, কিন্তু জীবিকা হিসেবে শোলাশিল্পের মূল্যায়ন নেই বলে কাজটা সে ছেড়ে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ কৃষি
গবেষণা কাউন্সিলে কেরানির চাকরি করে। আমিও আর চাপাচাপি করিনি। আসলে বাস্তবতা বড় নির্মম!
পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় কাজটাকে পুরোপুরিভাবে জীবিকা হিসেবে নেওয়ার সুযোগ কম। আমি নিজেই শখের শিল্পী হিসেবেই কাজ করে যাচ্ছি।