Homeদেশের গণমাধ্যমেসৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কিছু এলাকায় ঈদুল ফিতর উদযাপিত

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কিছু এলাকায় ঈদুল ফিতর উদযাপিত


সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের কয়েকটি স্থানে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। রবিবার সকালে ওই সব এলাকার মানুষ ঈদের জামাতে নিয়েছেন। এ বিষয়ে জানাচ্ছেন বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিনিধিরা।

চট্টগ্রাম

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিবারের মতো এবারও চট্টগ্রামের শতাধিক গ্রামে আজ রবিবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। সাতকানিয়ার মির্জাখীল দরবার শরিফ এবং চন্দনাইশের জাঁহাগিরি শাহ সুফি মমতাজিয়া দরবার শরিফের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে একই দিন রোজা শুরু করেন; সেই অনুযায়ী একই দিন ঈদুল ফিতর উদযাপন করেন।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সকাল ৯টায় মির্জাখীল দরবার শরিফের খানকাহ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইমামতি করেন হজরত ইমামুল আরেফীন মাওলানা মুহাম্মদ মকছুদুর রহমান। নামাজ শেষে দেশ ও জাতি এবং বিশ্বের মুসলমানদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।

ঈদুল ফিতর উদযাপনের বিষয়ে মির্জাখীল দরবার শরিফের দায়িত্বশীল মোহাম্মদ মছউদুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করে থাকি। এরই ধারাবাহিকতায় রমজান পালন শেষে আজ (রবিবার) ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে ।’

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘আমরা হানাফি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে নিকটবর্তী সময়ের কম ব্যবধান, আমাদের পূর্বের দেশগুলোতে চন্দ্র দর্শন বিবেচনায়, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রাঘিমাংশ ও অক্ষাংশের হিসেবে চাঁদের অবস্থান এবং মক্কা-মদিনায় তথা আরব বিশ্বে চাঁদ দেখার খবর বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে জেনে একই দিন রোজা শুরু করি; একই দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করে আসছি।’

মির্জাখীল দরবার শরিফের তথ্যমতে, চন্দনাইশ পৌরসভার বুলার তালুক, হরিনার পাড়া, ফকির পাড়া, সর্বল কাজী বাড়ি, চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর, হারলা, বাইনজুরি, কানাইমাদারি, সাতবাড়িয়া, বরকল, ধোপাছড়ি, দোহাজারী, জামিজুরি, পশ্চিম এলাহাবাদ, উত্তর কাঞ্চননগর, জুনিঘোনা, আব্বাসপাড়া, মাঝের পাড়া, দিঘির পাড়া, কুন্দুপাড়া, কেশুয়া, মোহাম্মদপুর, উত্তর হাশিমপুর, ছৈয়দাবাদ, খুনিয়ার পাড়া, শ্রীমাই, রূপকানিয়া, জলদী, গুনাগরি, কালিপুর, গন্ডামারার, মিরিঞ্জিরতলা, ছনুয়া, সাধনপুর, তৈলারদ্বীপ, বাথুয়া, বারখাইন, চরণদ্বীপ, খরনদ্বীপ, বড় হাতিয়া, চুনতি, পুটিবিলা, উত্তর সুখছড়ি, বাংলাবাজার, মইশামুড়া, খোয়াছপাড়া, বাজালিয়া, কাঞ্চনা, গাটিয়াডাঙ্গা, পুরানগড়, মনেয়াবাদসহ শতাধিক গ্রামের তাদের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে বুধবার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।

এ ছাড়া এ অঞ্চলে বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি; কক্সবাজারের চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার কয়েকটি গ্রামে মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারীরা বুধবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন।

দিনাজপুর

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন দিনাজপুরের বেশ কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিরা। রবিবার সকাল ৭টায় দিনাজপুর চারুবাবুর মোড়ে একটি কমিউনিটি সেন্টারে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন শতাধিক মুসল্লির অংশ নেন।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিনাজপুর বোচাগঞ্জ উপজেলার ছাতইর, বিরলের ভাড়াডাঙ্গি, কাহারোলের জয়নন্দ, বিরামপুরের জোতবানি, চিরিরবন্দর উপজেলার সাইতারা, বিরামপুরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় ৪৪টির অধিক স্থানে আগাম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

ঈদের জামাতে ইমামতি করেন স্থানীয় মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে কোথাও চাঁদ দেখা গেলে এবং একদল মুসলিম চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দিলেই সেই চাঁদের ওপর আমল করা ওয়াজিব হয়ে যায়।  রোজা, সিয়াম, ঈদ সবকিছুতেই এটা হতে পারে। এখন বিশ্বায়নের যুগ, আমরা বিশ্বায়নে বিশ্বাসী। বিশ্বের কোথাও চাঁদ দেখা গেছে, যার কারণে অনেক মুসলিম ঈদ করছেন। সেই সময়ের ভিত্তিতে এবং চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আমরাও ঈদ পালন করছি।’

ফরিদপুর

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় ১০ গ্রামে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে। সকাল সাড়ে ৯টায় এবং ১০টায় ঈদুল ফিতরের তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

জানা যায়, জেলার বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ও রুপাপাত ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের আংশিক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে মিল রেখে একদিন আগে পবিত্র রোজা পালন শুরু করেন। তাই অন্য এলাকার একদিন আগে এই ১০ গ্রামের লোকজন ঈদ উদযাপন করে থাকেন। এ ছাড়া আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা, ইছাপাশাসহ কিছু মানুষ একই সঙ্গে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। একদিন আগে যারা রোজা ও ঈদ উৎসব উদযাপন করেন তারা সবাই চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরীফের মুরিদান।

চাঁদপুর

চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হচ্ছে রবিবার। জেলার সাদ্রা দরবার শরিফের অনুসারীরা প্রায় ৯৫ বছর ধরে আরব দেশগুলোর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সাদ্রাসহ প্রায় ৪০টি গ্রামে ঈদ উদযাপন করে থাকেন। ঈদকে ঘিরে এসব গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।

রবিবার সকাল ৯টায় মাজার ময়দানে ঈদের জামাতের ইমামতি করেন পীর মাওলানা জাকারিয়া আল মাদানী।

এদিকে সকাল সাড়ে ৯টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা মাদ্রাসা ময়দানে। এখানে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের আরেক পীর মো. আরিফ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে আমরা মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখি এবং ঈদ উদযাপন করি। শনিবার চাঁদ দেখা গেছে। তাই আজ আমরা ঈদ উদযাপন করছি।’

সাদ্রা ছাড়াও একদিন আগে ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হলো– হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বড়কুল, অলীপুর, বেলচোঁ, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাসারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট, মতলবের মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলীসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম। এ ছাড়া চাঁদপুরের পাশের নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও শরীয়তপুর জেলার কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইছহাক খানের অনুসারীরা একদিন আগে ঈদ উদযাপন করেন।

জানা গেছে, ১৯২৮ সালে হাজীগঞ্জ রামচন্দ্রপুর মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু স্থানীয়দের অসহযোগিতার মুখে তা ভেস্তে যায়। সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে একদিন আগে ঈদ পালনের উদ্যোগ নেওয়ায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। ওই বছরই নিজ গ্রাম সাদ্রায় ফিরে আসেন তিনি। পরে তিনি দরবার শরীফ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

লক্ষ্মীপুর

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন লক্ষ্মীপুরের ১১ গ্রামের মানুষ। রোববার (৩০মার্চ) সকাল ১০টায় রামগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব নোয়াগাঁও তালিমুল কোরআন নূরানী মাদ্রাসা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করেন শতাধিক মুসল্লি।

এ ছাড়া রামগঞ্জ উপজেলার চারটি এবং রায়পুর উপজেলার একটি মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, বারোঘরিয়া, হোটাটিয়া, শরশৈই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপাসহ ১১টি গ্রামের সহস্রাধিক মানুষ ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছেন। তারা পৃথকভাবে নিজ নিজ এলাকার মসজিদে ঈদের নামাজের আয়োজন করেছেন। সকাল সাড়ে ৭টায় রামগঞ্জ পৌরসভার জাহাঙ্গীর টাওয়ার, ১০টায় পূর্ব বিঘা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এবং পশ্চিম নোয়াগাঁও জামে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।

মাদারীপুর

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন মাদারীপুরের ২৫ গ্রামের মানুষ।রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের তাল্লুক গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। 

জানা গেছে, এই এলাকায় প্রায় দেড়শ বছর আগে থেকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখেন এবং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে আসছেন সুরেশ্বর দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হজরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রহ.) অনুসারীরা।

সাতক্ষীরা

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে সাতক্ষীরার ২০টি গ্রামের মানুষ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। রবিবার সকালে জেলার বিভিন্ন মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

সদর উপজেলার ভাড়ুখালী আহলে সুন্নাত আল জামায়াত জামে মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায় করা হয়। সেখানে ইমামতি করেন মাওলানা মাহবুবুর রহমান। একই সময়ে বাওখোলা পূর্বপাড়া জামে মসজিদেও ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ইমামতি করেন মসজিদের ইমাম মাওলানা মো. মোহাব্বত আলী।

ঈদের নামাজে ইসলামকাটি, গোয়ালচাতর, ভাদড়া, ঘোনা, মিরগিডাঙ্গাসহ প্রায় ২০ গ্রামের মুসল্লিরা অংশ নেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও ঈদের জামাতে শরিক হন।

বাগেরহাট

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে মোংলার সুন্দরবন ইউনিয়নের চটেরহাট বাজারে পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৩০ মার্চ) সকাল ৮টায় চটেরহাট বাজার জামে মসজিদে এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ঈদের জামাতের ইমামতি করেন মাওলানা আব্দুর রহমান। এতে শতাধিক মুসল্লি অংশ নেন।

এ ছাড়া বগুড়া, মৌলভীবাজারসহ কয়েকটি জেলার কিছু এলাকায় ঈদুল ফিতর উদযাপনের খবর পাওয়া গেছে।

 





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত