মার্কিন সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই সিদ্ধান্তের ফলে, এখন থেকে মার্কিন সেনাবাহিনীতে নতুন করে ট্রান্সজেন্ডার সদস্যদের নিয়োগ করা হবে না। এ ছাড়াও, কর্মরত সেনা সদস্যদের মধ্যে যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চান, তাদের সেই সুযোগও দেওয়া হবে না।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) এক্স পোস্টে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। খবর আনাদুলু এজেন্সি।
এর আগে, গত ২৭ জানুয়ারি ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন, যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে ইচ্ছুক যাদের লিঙ্গ পরিচয় বিষয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তাদের নিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়, এখন থেকে বাহিনীতে আর কোনো ট্রান্সজেন্ডার সদস্যকে স্থান দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন এবং এ ক্ষেত্রে ট্রান্সজেন্ডারদের অন্তর্ভুক্তির ফলে বিশাল চিকিৎসা ব্যয় ও অপারেশনাল সমস্যার সৃষ্টি হয়।
তারা দাবি করেছে, ট্রান্সজেন্ডার সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির ফলে বাহিনীর কার্যক্রমে অপ্রত্যাশিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে, যা বাহিনীর কার্যকারিতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
তারও আগে ২০১৭ সালে, প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একইভাবে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে, সেই সময়ে যারা ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন, তাদের বরখাস্ত করা হয়নি এবং তারা বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।
পরবর্তীতে, ২০২১ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ট্রাম্পের এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করল।
এছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডারদের মেয়েদের ক্রীড়া-কার্যক্রমে অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে তিনি স্কুল ও কলেজগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছেন। জানানো হয়েছে, যদি তারা আইন অমান্য করে, তাহলে তাদের ফেডারেল বাজেট দেওয়া হবে না।
বর্তমানে মার্কিন সেনাবাহিনীতে মোট ১৩ লাখ কর্মী রয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার ট্রান্সজেন্ডার সদস্য কর্মরত রয়েছেন। তবে, এই সংখ্যা ১ হাজারেরও কম হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় এই সেনা সদস্যরা কতটুকু প্রভাবিত হবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রতিরক্ষা সচিব জানিয়েছেন, যারা এখন কর্মরত ট্রান্সজেন্ডার সদস্য রয়েছেন, তাদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে এবং তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না।
ট্রান্সজেন্ডারদের নিয়ে নতুন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠন এবং ট্রান্সজেন্ডার অধিকার রক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তীব্র সমালোচনা এসেছে। তারা দাবি করেছেন, এই নিষেধাজ্ঞা ট্রান্সজেন্ডারদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে।
তাদের মতে, ট্রান্সজেন্ডারদের বৈষম্য না করে, তাদের জন্য সমান সুযোগ দেওয়া উচিত। এর ফলে মার্কিন সেনাবাহিনীতে ট্রান্সজেন্ডারদের উপস্থিতি এবং তাদের অধিকার নিয়ে পুনরায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি দেশটির বিভিন্ন অংশে, বিশেষত ট্রান্সজেন্ডারদের মধ্যে, ক্ষোভ এবং হতাশা তৈরি হয়েছে। তারা মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপটি সমাজে আরও বৈষম্য সৃষ্টি করবে। এছাড়াও ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার সুযোগ কেবল সংকুচিত করবে না, বরং তাদের মৌলিক অধিকারও লঙ্ঘিত হবে।
ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য এই নতুন পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে আরও সামাজিক ও রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি হতে পারে। এটি একটি বৃহত্তর প্রশ্ন তৈরি করেছে, যেখানে ট্রান্সজেন্ডারদের সমান অধিকার ও সুযোগের বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় আসবে।