সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের তেইশের ছিলা এলাকায় নতুন করে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে বেগ পেতে হচ্ছে বন বিভাগকে। শনিবার (২২ মার্চ) লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলার মধ্যেই রবিবার (২৩ মার্চ) সকালে এই নতুন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নজরে আসে বন বিভাগের। পানির উৎস কাছাকাছি না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসকে।
বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ফায়ার লাইন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। তবে সারা দিনেও আগুনের এলাকায় পানি ছিটানো সম্ভব হয়নি।
ধানসাগর স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা বিপুলেশ্বর দেবনাথ বলেন, ‘‘নতুন করে লাগা আগুনের ব্যাপ্তি তুলনামূলক বেশি। চারপাশে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে, তবে আগুন কতটা এলাকা জুড়ে ছড়িয়েছে, তা এখনো হিসাব করা হয়নি।’’
তিনি আরো জানান, ‘‘এলাকার পাশের নদীতে জোয়ার ছাড়া পানি থাকে না। তাই পাম্প মেশিন বসাতে দেরি হয়েছে। জোয়ার এলে আমরা পাইপ স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। তবে এখনো আগুনে পানি ছেটাতে পারিনি।’’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান জানান, সন্ধ্যার আগে পাম্প স্থাপন ও পাইপ টানার কাজ শুরু হয়। রাত ৮টার দিকে তিনি বলেন, ‘‘আগুনের এলাকা থেকে পানির উৎস অনেক দূরে। বন বিভাগের সহযোগিতায় আমরা ইতোমধ্যে আড়াই কিলোমিটার পাইপ স্থাপন করেছি। আরও প্রায় আধা কিলোমিটার পাইপ খাটাতে হবে, তারপর আগুনের এলাকায় পানি দেওয়া সম্ভব হবে।’’
রাত সাড়ে ৮টার পর সুন্দরবনের নতুন করে লাগা আগুনের এলাকায় পানি ছিটানো শুরু হয়েছে বলে দাবি করেন সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম। তিনি বলেন, ‘‘বন বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবকরা আগুন নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে ভাটার সময় নদীতে পানি না থাকায় আগুন নেভানোর কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’’
তবে রাত সোয়া ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আবু বক্কর জামান বলেন, ‘‘ভাটার কারণে নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় পাম্প বন্ধ করতে হয়েছে। জোয়ার না এলে পানি সরবরাহ সম্ভব হবে না।’’
শনিবার সকালে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন বনে আগুন লাগে। সেটি নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই রবিবার সকালে পাশের তেইশের ছিলা এলাকায় নতুন করে আগুন দেখা যায়। পরপর দুই দিনে দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন বিভাগ ও পরিবেশবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে ২৭ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, যার বেশিরভাগই পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হয়েছে। প্রতিবারই তদন্ত কমিটি গঠন হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।