অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের মূলনীতি ও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের দাবি জানিয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সচিবকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রবিবার (২৭ অক্টোবর) রেজিস্ট্রি ডাকে নোটিশটি পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।
আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে এবং নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। সাধারণত গণ-অভ্যুথানের পর বিপ্লবী সরকার গঠিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলো জাতির সঙ্গে বেইমানি করে বিপ্লবী সরকার গঠন করতে দেয়নি। ফলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে বর্তমান সংবিধানের অধীনে শপথ নিতে হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারমূলক অন্তর্বর্তী সরকার কখনোই চায়নি। বরং পরোক্ষভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের নামে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়েছে, যারা খুব দ্রুত নির্বাচন দিয়ে তাদের ক্ষমতায় এনে দেবে। যার মাধ্যমে বর্তমানের কোনও কোনও রাজনৈতিক দল নিজেরাই পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট সরকারে রূপান্তরিত হবে এবং বাংলাদেশকে পুনরায় দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করবে।
নোটিশে আরও বলা হয়, বর্তমান রাষ্ট্রপতির নামে শপথ লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণই বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ চাচ্ছে। কিন্তু নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। কারণ বর্তমানে সংসদ নেই এবং সাবেক স্পিকার ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। যদি বর্তমানে বিপ্লবী সরকার থাকতো তাহলে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোনও সমস্যা থাকতো না। কিন্তু বর্তমান সরকার বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে শপথ নেওয়ায় কারণে সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। এক্ষেত্রে সরকারকে সংবিধানের মূলনীতি ও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী উক্ত সমস্যা সমাধান করতে হবে।
নোটিশে বলা হয়, বর্তমানে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ সংক্রান্ত আইনি জটিলতায় আমাদের সংবিধানের মূলনীতি, আইনের ব্যাখ্যা, ডকট্রিন অব নেসেসিটি প্রয়োগ করে দুটি পদ্ধতির যেকোনও একটি প্রয়োগ করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে। পদ্ধতি দুটি হলো:
পদ্ধতি–১: বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৮-এর অধীনে সুপ্রিম কোর্ট রাষ্ট্রের মূলনীতি অনুসরণ করে সংবিধান ব্যাখ্যা করতে পারে। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেল সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টের বিভাগের রিট এখতিয়ারসম্পন্ন যেকোনও মোশন কোর্টে একটি স্যুয়োমোটো রুলের জন্য আবেদন করবেন যেখানে তিনি মহামান্য হাইকোর্টের কাছে সংবিধানের মূলনীতি ব্যাখা করে এবং ডকট্রিন অব নেসেসিটি অনুসরণ করে সংসদের অবর্তমানে কীভাবে অন্তর্বর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রার্থনা করবেন। এক্ষেত্রে হাইকোর্ট সংবিধানের মূলনীতি ব্যাখ্যা করে এবং ডকট্রিন অব নেসেসিটি নীতি অনুসরণ করেন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে হাইকোর্ট নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য কমিটি গঠন করে দিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
এছাড়া রাষ্ট্রপতির অসুস্থতা বা বিদেশে গমনের কারণে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সচিব রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এই মর্মে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন।
পদ্ধতি–২: যদি উপরের পদ্ধতি অনুসরণ করতে গিয়ে হাইকোর্ট স্যুয়োমোটো রুল দিতে অস্বীকৃতি জানায় সেক্ষেত্রে এই দ্বিতীয় পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি সার্চ কমিটি গঠন করবে। এই সার্চ কমিটিতে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুথানে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল থেকে একজন করে প্রতিনিধি নেবেন। ওই সার্চ কমিটি একজন যোগ্য ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য বাছাই করবেন। অতঃপর সরকার সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন।
এক্ষেত্রে নতুন রাষ্ট্রপতি তার অফিসিয়াল কার্যক্রম শুরু করার প্রারম্ভেই তিনি নিজে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবেদন করবেন। এক্ষেত্রে নতুন রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে রেফারেন্স চাইবেন যে সংসদের অবর্তমানে জাতীয় স্বার্থে তার নিয়োগ আইন অনুযায়ী বৈধ কিনা? এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সংবিধানের মূলনীতি, জনস্বার্থ, ডকট্রিন অব নেসেসিটি অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপতির নিয়োগ বৈধ হয়েছে কিনা এই মর্মে সিদ্ধান্ত দেবেন। এক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির অসুস্থতা বা বিদেশে গমনের কারণে বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়ের সচিব রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন এই মর্মে দিকনির্দেশনা দিতে পারেন। ওই দুটি পদ্ধতির যেকোনও একটি প্রয়োগ করে বিদ্যমান রাষ্ট্রপতি নিয়োগ সংক্রান্ত সাংবিধানিক জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
নোটিশে পাওয়ার ৩ দিনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানের মূলনীতি ও আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়েছে।