টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নানির বাড়ি বেড়াতে গিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া মাদ্রাসাশিক্ষার্থী (৯) ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শনিবার (৮ মার্চ) রাতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুপুরে উপজেলার আজগানা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তবে সম্প্রতি ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
অভিযুক্তের নাম ফিরোজ (৪৫)। তিনি উপজেলার আজগানা ইউনিয়নের কুড়িপাড়া গ্রামের রিয়াজ উদ্দিন ওরফে নওশের আলীর ছেলে। তিনি পেশায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক।
এদিকে, এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী ওই শিশু ও তার পরিবার ভয়ে মুখ না খুললেও ঘটনাটি সম্প্রতি জানাজানি হয়। পরে ধামাচাপা দিতে স্থানীয় মাতব্বররা গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে। সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষককে জরিমানা করা হয় দেড় লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯২ হাজার টাকা দিলেও জরিমানার বাকি রয়ে গেছে ৫৮ হাজার টাকা। এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে শনিবার দুপুরে থানা পুলিশ ভুক্তভোগী শিশু এবং তার মাকে থানায় নিয়ে এসে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি অটোরিকশাচালক ফিরোজ শিশুটির নানির বাড়ির পাশের জমিতে সার দিচ্ছিল। এ সময় ওই জমির সঙ্গেই শিশুটি বরই গাছ থেকে বরই কুড়াচ্ছিল। তখন ফিরোজ শিশুটিকে কৌশলে ডেকে নিয়ে একটি টয়লেটের ভেতর নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের কথা কাউকে বললে মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখানো হয় শিশুটিকে। ঘটনার পর বাড়িতে গিয়ে শিশুটি চুপচাপ থাকায় সন্দেহ হয় পরিবারের। পরে বারবার জিজ্ঞেস করায় একপর্যায়ে কান্না করে পুরো ঘটনা মাকে খুলে বলে ওই শিশু। ধীরে ধীরে এ ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনার ধামাচাপা দিতে স্থানীয় আব্দুল মালেক, ইউনূস, বাবলু, নূরুল ইসলামসহ কয়েকজন মাতব্বর ঘটনার সপ্তাহখানেক পর গ্রাম্যসালিশের আয়োজন করে। সালিশে অভিযুক্ত ধর্ষক ফিরোজকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গ্রাম্য মাতাব্বরদের চাপের মুখে সালিশটি মেনে নেয় অসহায় পরিবারটি। তবে জরিমানার টাকাগুলো এখনও ভুক্তভোগী পরিবারকে দেওয়া হয়নি। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ফিরোজ আত্মগোপনে রয়েছে।
শিশুটির মা বলেন, ‘আমার স্বামী সৌদিপ্রবাসী। আমি নিজেও একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করি। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে বাড়িতে বসবাস করছি। ঘটনার কথা কাউকে ভয়ে প্রকাশ করতে পারিনি। আমাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনও অভিভাবক নেই। গ্রামের মাতব্বরদের কারণে সালিশ মেনে নিয়েছি। মেয়ের বাবাও ঘটনা শুনেছেন। আমরা অপরাধীদের বিচার দাবি করছি।’
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযুক্ত ফিরোজকে প্রধান করে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চলমান রয়েছে।’