এক সময় জার্মানির জার্সি গায়ে বিশ্বকাপ জেতা মেসুত ওজিল, এখন তুরস্কের রাজনৈতিক মঞ্চে। চলমান সংকটে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় সামনে এসেছেন ওজিল। খাবার বিতরণ থেকে জনসংযোগ—সর্বত্র দৃশ্যমান ৩৬ বছর বয়সী এই সাবেক মিডফিল্ডার, যার রাজনৈতিক পদক্ষেপ ঘিরে বিভক্ত মতামত।
২০১৪ সালে জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম সদস্য মেসুত ওজিল। সেই ফুটবল সুপারস্টার এখন নিজ শিকড় তুরস্কে, ভিন্ন ভূমিকায়। প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নেতৃত্বাধীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (AKP)-এর নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে রাজনৈতিক জীবনের প্রথম ধাপে পা রেখেছেন তিনি।
বর্তমানে তুরস্ক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এর মধ্যেই ওজিলকে দেখা যাচ্ছে জনতার পাশে—রাস্তা ঘাটে ঘুরে খাবার বিতরণ করছেন, মানুষের সঙ্গে কথা বলছেন। এই দৃশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ঘনিষ্ঠ বৃত্তে, যেটি ‘এ-টিম’ নামে পরিচিত, সেখানেও জায়গা করে নিয়েছেন ওজিল। এরদোয়ানের প্রতি দীর্ঘদিনের আনুগত্য ও ঘনিষ্ঠতা তাকে রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে এনেছে।
তবে বিতর্কও তার পিছু ছাড়েনি। একদিকে অনেকে বলছেন, বিদেশে খেলেও শিকড়ের সঙ্গে থাকা ওজিলের জন্য এটি গর্বের বিষয়। অন্যদিকে, বিরোধী দল ও সমালোচকদের মতে, জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে এরদোয়ান সরকার তাকে সামনে এনে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
দীর্ঘদিনের ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানের সরকার বর্তমানে অর্থনৈতিক মন্দা, উচ্চ দারিদ্র্যের হার (৩৩ শতাংশ), ও বিরোধী রাজনীতিবিদদের দমন করার অভিযোগে প্রশ্নবিদ্ধ। মার্চে ইস্তানবুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করে সরকার, সন্ত্রাস, জালিয়াতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগে। সমালোচকরা বলছেন, এটি আসন্ন ২০২৮ নির্বাচনের পথ পরিস্কার করার ষড়যন্ত্রের অংশ।
এরদোয়ান সম্প্রতি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ও হামাসের পক্ষে কঠোর বিবৃতি দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক মহলে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে ওজিলের জনপ্রিয়তাকে সামনে আনার কৌশল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
মেসুত ওজিল মাঠে বল পাস করতেন নিখুঁতভাবে, এবার সময় এসেছে তার রাজনৈতিক পাসের দিকটি দেখার। তবে এই নতুন ইনিংসে তার ভূমিকা কতটা ইতিবাচক নাকি বিতর্কিত হয়—তা সময়ই বলে দেবে।