রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার (যৌনপল্লি) সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও তাদের মায়েদের জন্মনিবন্ধন নিশ্চিতকরণে অ্যাডভোকেসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার (কেকেএস) বাস্তবায়নে এবং দি ফ্রিডম ফান্ডের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় ‘এনহ্যানসিং প্রটেকশন অব চাইল্ড সেক্স ট্রাফিকিং সারভাইভারস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় কেকেএসের প্রধান কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় শিশুদের জন্মনিবন্ধন ফি ও বিলম্ব ফি মওকুফ করা, দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার শিশু ও মায়েদের জন্য ভ্রাম্যমাণ জন্মনিবন্ধন ইউনিট স্থাপন এবং যে সকল শিশু ও মায়ের জন্মনিবন্ধনের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য নাই তাদের জন্য বিকল্প পন্থার ব্যবস্থা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব, ডেপুটি রেজিস্ট্রার জেনারেল (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। সভায় সভাপতিত্ব করেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান।
সভায় যৌনপল্লির এক মা বলেন, ‘আমার শিশুর কোনও তথ্য ছিল না। আমি আমার শিশুর বাবার তথ্য দিতে না পরায় কেউ সহযোগিতা করে নাই।’
যুগ্ম সচিব তার বক্তব্যে বলেন, ‘মা যে তথ্য দেবে সেই তথ্যের ওপরই জন্মনিবন্ধন করতে হবে। আলোচনা থেকে জানতে পারলাম ১১৩ জন মা এবং ৯ জন শিশুর জন্মনিবন্ধনের কোনও তথ্য নাই। আমি দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে নির্দেশনা দিচ্ছি গোয়ালান্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে কেকেএস কর্তৃক প্রেরিত ২১৩ জন মা এবং ৯ জন শিশুর জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করবেন। আমাদের জন্মনিবন্ধনের বড় জটিলতা হলো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। সকলকে মাথায় রাখতে হবে কোনও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন এর মধ্যে না আসে। যদি কোনও মা সঠিক বাবার তথ্য না দিতে পারেন সেক্ষেত্রে মা যেই পরিচয় দেবে সেই নামেই জন্মনিবন্ধন করতে হবে।’
রাজবাড়ী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস বলেন, ‘কোনও শিশুরই জন্মনিবন্ধনের বাইরে রাখবেন না। চার বছর বয়সের ওপরের শিশুরা যৌনপল্লিতে থাকার কোনও নিয়ম নেই।’ সরকারিভাবে দৌলতদিয়া পূর্বপাড়ার পাশে শিশুদের রাখার কোনও ব্যবস্থা করা যায় কিনা মর্মে যুগ্ম সচিবকে জানান।
কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থার (কেকেএস) নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমি আজ খুব আনন্দিত যে এই শিশুদের জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করতে পারবো। এই জন্য কেকেএসের পক্ষ থেকে যুগ্ম সচিব মহোদয়সহ উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ। আমি মনে করি, সভায় সকলের সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে শিশু ও তাদের মায়েদের জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা নিরসন হবে।’