জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশে-বিদেশে অনেকে জিজ্ঞেস করে, আগামী নির্বাচনে তারা (আওয়ামী লীগ) কি আসবে? আমি বলি, দেশকেই যারা সম্মান করে না, তারা কার কাছে এসে নির্বাচনে ভোট দাবি করবে? যারা জনগণের টাকায় কেনা অস্ত্র এবং গুলি জনগণের বুকের ওপর চাপিয়ে দেয় ক্ষমতায় থাকার জন্য, তারা কার কাছে ভোট চাইবে?’
শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সিলেট নগরের চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উদ্দেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে আরও বলেন, ‘যারা নিরীহ জনগণকে খুন করেছে, তাদের পরিবারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুক, তারা এ ধরনের রাজনীতি আর চায় কি না। এ ধরনের আগ্রাসী দলকে আর রাজনীতিতে দেখতে চায় কি না, তাদের কাছে গিয়ে জানুক। আমাদের কাছে জানার দরকার নেই, আমরা তো বেঁচে আছি। পঙ্গুত্বের কষ্ট নিয়ে যারা বেঁচে আছেন, হাসপাতালের বেডে যারা প্যারালাইজড হয়ে আছেন, তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করুক, তারা কী চান?’
জামায়াত বৈষম্যহীন বাংলাদেশ নিশ্চিত করতে চায় বলে মন্তব্য করে আমির বলেন, ‘এমন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, যে বাংলাদেশে মসজিদ, মন্দির, চার্চ, প্যাগোডা, মঠ কোনও জায়গায় নিরাপত্তার জন্য পাহারা বসানোর প্রয়োজন হবে না। বরং ঘরে-বাইরে নিজেদের ধর্মীয় কাজে, সামাজিক কাজে, পেশাগত কাজে সব জায়গায় একজন নাগরিক পূর্ণ স্বাধীনতা, মর্যাদা ও নিরাপত্তা ভোগ করবে। এ ক্ষেত্রে নারী-পুরুষদের সমান মর্যাদা ও নিরাপত্তা দেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী স্বপ্নের রাষ্ট্র যদি গড়ার সুযোগ পায়, আল্লাহ-কোরআনের ভিত্তিতে সেই রাষ্ট্রে পুরুষের পাশাপাশি আমাদের মা-বোনরা, আমাদের মেয়েরা অত্যন্ত মর্যাদা, গর্ব এবং ইজ্জতের সঙ্গে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন, তারা পাবেন পূর্ণ নিরাপত্তা।’
বাংলাদেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছেন বলে ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই শান্তিকে বিঘ্নিত করার জন্য দফায় দফায় চেষ্টা করা হচ্ছে। ইনশাআল্লাহ আমরা আশাবাদী, একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ গড়তে চাই, আমাদের সন্তানদের আশা পূরণের উপযুক্ত বাংলাদেশ। তাদের প্রধান স্লোগান ছিল, উই ওয়ান্ট জাস্টিজ। আমরা বৈষম্যহীন ন্যায়বিচারপূর্ণ একটা সমাজ চাই। আমরা তাদের কথা দিচ্ছি, আল্লাহ তায়ালার সাহায্য এবং জনগণের ভালোবাসা পেলে আমরা সেই সমাজটি বাংলাদেশ এবং জাতিকে উপহার দেবো। আমরা কথা দিচ্ছি, আমাদের হাত দিয়ে কোনো চাঁদাবাজি হবে না এবং চাঁদাবাজি বরদাশতও করবো না। আমরা কথা দিচ্ছি, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটির ওপরও কারও কোনও দখলবাজি চলবে না এবং চলতে দেবোও না। আমরা কথা দিচ্ছি, সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি অফিসে বসে কেউ ঘুষ খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করবে না এবং দুঃসাহস দেখাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা (ষড়যন্ত্রকারী) দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনকে, গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য দফায় দফায় অনেক কাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা জুডিশিয়াল ক্যু করতে চেয়েছিল, তারা আনসারকাণ্ড ঘটিয়ে ক্যু করতে চেয়েছিল, তারা চাকরিকাণ্ড নিয়ে ক্যু করতে চেয়েছিল। এরপর তারা ইসকনকাণ্ড নিয়ে নামলো; আল্লাহ ওইটাও ব্যর্থ করে দিয়েছেন। শেষমেশ ইসকনের লোকেরা নির্দয়ভাবে একজন আইনজীবীকে খুন করলো প্রকাশ্য দিবালোকে, ত্রিফলা দিয়ে কুপিয়ে কুপিয়ে। এই খুন করে মূলত এ দেশের দেশপ্রেমিক মানুষ, বিশেষ করে মুসলমানদের উসকানি দেওয়া হয়েছিল। আমরা তখন সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুরোধ করেছিলাম, শান্ত থাকুন এবং মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আলহামদুলিল্লাহ, দুটিই হয়েছে। তারা শান্তও থেকেছে, মাঠও নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। এখন গর্তে ঢুকেছে খুনিরা, কিন্তু তাদের বিদেশ থেকে বাতাস দেওয়া হচ্ছে।’
জামায়াত আমির হিন্দুধর্মাবলম্বীদের প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ধন্যবাদ জানাই, এই দেশের, বিশেষ করে হিন্দুধর্মাবলম্বী ভাইদের। তারা তাদের বিবেকের জায়গা থেকে প্রতিবাদ করে বলছেন, আমরা শান্তিতে আছি, তোমরা আমাদের শান্তির ওপর আঘাত দিয়ো না। আমাদের শান্তিতে থাকতে দাও। ভারতকে তারা বলেছেন, আমাদের নিয়ে আর খেলো না। বহু খেলা তোমরা খেলেছো, এখন তোমরা শান্ত হও। আমরা এই দেশের ধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে ভালো আছি, ভালো থাকতে চাই।’
দীর্ঘ দেড় যুগ পর আয়োজিত এ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ফজলুর রহমান ও সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। এ ছাড়া সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাশুক আহমদ যৌথভাবে সভাটি সঞ্চালনা করেন।