Homeদেশের গণমাধ্যমেযানজটে স্বপ্নভঙ্গ অসংখ্য ভর্তিচ্ছুর

যানজটে স্বপ্নভঙ্গ অসংখ্য ভর্তিচ্ছুর


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রথমদিন রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) জীববিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ছাত্রীদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের তীব্র যানজটে আটকে পড়ে অনেক ভর্তিচ্ছু পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়মতো পৌঁছাতে পারেননি। আবার অনেকে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে দিতে পারেননি পরীক্ষা। ফলে ভর্তিযুদ্ধ নামক লড়াইয়ে নামার আগে স্বপ্ন ভেঙ্গেছে অসংখ্য ভর্তিচ্ছুর।

রবিবার সকাল ৯টায় প্রথম শিফটের পরীক্ষা শুরু হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় লেনে সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত প্রায় ৭ কি.মি. তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়৷

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তীব্র যানজটে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অনেকেই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছাতে না পেরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারে নি। আবার অনেকে নির্ধারিত সময়ের ১৫-২০ মিনিট দেরিতে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন।

ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে রওনা দিলেও তীব্র যানজটের কারণে তারা সময়মতো আসতে পারেননি৷ অনেকে বাসে এসে যানজটের কারণে সাভার থেকে নেমে প্রায় ২-৩ কি.মি. রাস্তা হেঁটে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান।

প্রথম শিফটের পরীক্ষা চলাকালে চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে আসা এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, “মহাসড়কে গাড়ির জ্যামের কারণে আমি মেয়েকে নিয়ে আসতে দেরি করে ফেলেছি। ৯টায় পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এখন বাজে ৯টা ৪৫ মিনিট। এ মুহূর্তে কি কোনভাবে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে। কেউ কি কেন সহযোগিতা করতে পারবে এই বিষয়ে?”

এবিএম জহিরুল হক নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর বলেন, “আমার সঙ্গে একটা মেয়ের দেখা হয়েছিল। তার পরীক্ষা দ্বিতীয় শিফটে (১০টা ২৫ মিনিটে) ছিল। কিন্তু যখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটে এসে পৌঁছায়, তখন ১০টা ২৫ বাজে। তার পরীক্ষা ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজে যা মেইন গেইট থেকে বেশ দূরে। এতে একটু হেঁটেই সে হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। তার আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি।” 

আরেক ভর্তিচ্ছু আরিফা খাতুন বলেন, “জ্যামের কারণে বাস ড্রাইভাররা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক আগে নামায় দিয়ে বলেন, ‘আর যাওয়া যাবে না, এটুকু হেঁটে যান।’ কিন্তু হাটতে গিয়ে দেখি, আধাঘণ্টা পার হয়ে গেছে। পরীক্ষার সময় পার হয়ে যাচ্ছিল দেখে, অনেককে দৌড়ে কেন্দ্রে যেতে হয়েছে। আর রাস্তায় যে ধুলোবালি, সবমিলিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার শেষ মানসিক শক্তিটুকুও নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যায় না।”

ভর্তি পরীক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্বে পালনকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী চিশতী এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, “বিগত ৫-৭ বছরে এমন যানজট দেখা যায়নি৷ কতগুলো স্বপ্ন চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেখলাম। এক অভিভাবক আকুতি নিয়ে বলেন, ‘বাবা তোমার হাতে পায়ে ধরি আমার মেয়েকে একটু দিয়ে আসো।’ ১৫ মিনিট দেরি করে আসা এক আপু বলেন, ‘আল্লাহর দোহাই লাগে আমাকে কেউ সাহায্য করেন।’ কেঁদে কেঁদে এক আপু বলেন, ‘আমি কী পরীক্ষা দিতে পারব না ভাইয়া?’”

তিনি বলেন, “একজন শিক্ষার্থী ৫ কিলোমিটার হেঁটে এসে ৩০ মিনিট পর পরীক্ষায় বসতে হয়, সে কী ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারবে? কতো মানুষ আজকে পরীক্ষা দিতে পারেনি, তার ধারণা নেই। অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন আজ গাড়িতে বসেই শেষ হয়ে গেছে।”

জাবির ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, “বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন জেলা সমিতির তাবুগুলোর সামনে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় এক নারী শিক্ষার্থী হন্তদন্ত হয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে মাটিতে পরে যায়। এতে তার পা মচকে যায়। পায়ে আঘাত পাওয়ায় হাঁটতে পারছিলেন না তিনি। ইতোমধ্যে পঞ্চম শিফটের পরীক্ষা শুরুর প্রায় ২০ মিনিট পার হয়েছে। তিনি জানান, যানজটের কারণে পৌঁছাতে দেরি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমি তখনই তাকে বাইকে করে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে আসি। তার অবস্থা বিবেচনা করে তাকে পরীক্ষায় বসতে সাহায্য করেন কেন্দ্রের দায়িত্বরত শিক্ষকরা। তবুও, যানজটের কারণে ২৮ মিনিট পরে তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হলো, এর দায় কে নেবে?”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরাফাত হাসান সিদ্দিকী নিশান ফেসবুকে লিখেছেন, “মানুষগুলোর কান্না এখনো কানে বাজছে। স্বপ্নকে চুরমার হতে দেখা যে কতটা কষ্টের, তা খুব ভালো করেই জানি। ঘটনাটা আজকের, জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হলো। অনেক মানুষ আসছে যাচ্ছে, রাস্তায় জ্যাম ও বাড়ছে।  একজনের কথায় উল্লেখ করি। সে ঢাকা থেকে আসছে, তার পরীক্ষা ৩:১৫ তে ছিল। সে বাসা থেকে বের হয়েছে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় হাতে নিয়ে। কিন্তু জ্যামে তার আসতে আসতে ৩:০৫ বেজে গেছে।”

তিনি লেখেন, “এখন বাইরের মানুষ সে এমএইচ গেট দেখে সেটাতে নেমেছে জ্যাম থেকে বাঁচতে। পরীক্ষার সময় হয়ে যাচ্ছে। তার সেন্টার দেখতেই দেখি তা জাবি স্কুল এন্ড কলেজে। এদিকে কোনো রিক্সা নাই কিচ্ছু নাই, সে অঝরে কাঁদছে তার সব শেষ হয়ে গেল। সে আর পরীক্ষা দিতে পারবে না। ঠিক সেই  সময় আমাদের প্রশাসন ব্যস্ত ক্যাফেতে বসা কিছু স্টল তুলতে (যেগুলোর জন্য পরিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা হবে না)। এদিকে একের পর এক স্বপ্ন চুরমার হচ্ছে। কারন তারা পৌছাতেই পারছে না। আবার এখানে কোনো হেল্প ডেস্ক ও নাই যে তারা ডিরেকশান দেবে কোনদিকে তাদের যেতে হবে।”

তিনি আরো লেখেন, “প্রশাসনের কোন ভুরুক্ষেপই নেই। আজ অটোরিক্সা যদি থাকত তাহলে চোখের সামনে এত মানুষকে কাঁদতে দেখতে হত না। আবার জাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সেন্টারটা সবচেয়ে দূরে ক্যাম্পাস থেকে বিছিন্ন বলা যায়। এটা শুধু একজনের কথা বললাম। এমন অনেক পরীক্ষার্থীকে আজ কাঁদতে দেখেছি।”

তিনি আক্ষেপ করে লেখেন, “মানুষের স্বপ্নগুলো নিয়ে খেলা বন্ধ করুন। তাদের ক্যাম্পাসে আনার জন্যই যত কর্মযজ্ঞ, তাহলে তাদের সুবিধাটাই ভাবুন। অন্তত ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে অটোরিক্সা চালু করুন। এমএইচ গেটে হেল্পডেস্ক বসান।”

তীব্র যানজট নিরসন নিয়ে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সওগাতুল আলম বলেন, “আজ ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে সাভার থেকে নবীনগর পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ডিপ্লয় করেছিলাম। তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করছেন। আগামীকাল থেকে কিভাবে আরো কার্যকরভাবে যানজট নিরসন করা যায়, সে ব্যাপারে আমাদের সভা ডাকা হয়েছে। আগামীকাল থেকে মহাসড়কে সেনাবাহিনী উপস্থিত থাকবে।”

যানজটের ফলে কতজন পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সচিব ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা বলেন, “আমার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে তীব্র যানজটের কারণ বিবেচনা করে অনেক পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পরেও পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরো বলেন, “এক পরীক্ষার্থী অনেক দেরিতে এসেছিলেন। তিনি তার অভিভাবকসহ আমার সঙ্গে দেখা করে পরবর্তী শিফটে পরীক্ষা দেওয়ার আবেদন জানান। কিন্তু এক শিফটের পরিক্ষার্থীর আরেক শিফটে পরীক্ষা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এজন্য সেই পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেননি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “আমরা ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগেই পুলিশ প্রশাসন এবং হাইওয়ে পুলিশকে যানজট নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জানিয়েছিলাম। আজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিতিতে সমন্বিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, কাল থেকে মহাসড়কে কোন প্রকার পার্কিং বরদাস্ত করা হবে না।”

তিনি বলেন, “হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি মিলিটারি পুলিশ, আনসার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করবে। আশা করি আগামীকাল থেকে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।”





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত