শক্তি উৎপাদনের পাশাপাশি প্রোটিন সংশ্লেষণের জন্য ম্যাগনেসিয়াম জরুরি। আমাদের পেশী এবং স্নায়ু কীভাবে কাজ করে তাও নিয়ন্ত্রণ করে এই খনিজ উপাদান। এটি হাড় মজবুত রাখে, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে এবং রক্তে শর্করাকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য খনিজ ম্যাগনেসিয়াম সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিন।
- ম্যাগনেসিয়াম শরীরের ৬০০টিরও বেশি এনজাইমেটিক প্রতিক্রিয়ার জন্য কোফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। শক্তি উত্পাদন, প্রোটিন সংশ্লেষণ, পেশী কার্যকলাপের পাশাপাশি অগণিত কাজে সহায়তা করে খনিজটি।খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে, অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে নতুন প্রোটিন তৈরি করতে এবং ডিএনএ এবং আরএনএ সংশ্লেষণ ও মেরামতে সহায়তার জন্য এটি প্রয়োজন। ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা সর্বোত্তম স্তরে না থাকলে এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলো দুর্বল হতে পারে।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর প্রতিদিন প্রায় ৩১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন এবং ৩০ বছর বয়সের পরে প্রয়োজন ৩২০ মিলিগ্রাম। গর্ভবতী নারীদের অতিরিক্ত ৪০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন। ৩১ বছরের কম বয়সী প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের প্রয়োজন ৪০০ মিলিগ্রাম এবং ৩১ বছরের পরে দরকার ৪২০ মিলিগ্রাম। শিশুদের বয়স এবং লিঙ্গের উপর নির্ভর করে ৩০ থেকে ৪১০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন হতে পারে।
- স্নায়ুতন্ত্রের উপর এর প্রভাব রয়েছে। ফলে মেজাজ স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ম্যাগনেসিয়াম অপরিহার্য। বর্ধিত উদ্বেগ, বিরক্তি এবং বিষণ্নতা সবই ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির ফলে হয়। সেরোটোনিন মেজাজের সাথে জড়িত মস্তিষ্কের একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা ম্যাগনেসিয়াম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
- যদিও ম্যাগনেসিয়াম পেশী এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের সাথে জড়িত এটা আমরা কমবেশি অনেকেই জানি। তবে এটি কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাগনেসিয়াম হৃৎপিণ্ডের পেশীর সংকোচনের উপর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নিয়মিত হার্টবিট নিশ্চিত করে। এটি রক্তনালীর প্রসারণ ঘটিয়ে রক্তচাপের উপরও প্রভাব ফেলে, যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ এড়ানো যায়। ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে রোগীদের হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে পড়ে। এমনকি হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ায় এর ঘাটতি।
- ম্যাগনেসিয়ামের অন্যতম প্রধান কাজ হলো মাইগ্রেন প্রতিরোধ। দীর্ঘস্থায়ী মাইগ্রেনের রোগীদের সাধারণত শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কম থাকে। এটি মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু রাসায়নিক পদার্থকে আটকে দেয় যেগুলো মাইগ্রেনের সময় ব্যথার কারণ।
- ইনসুলিন সংবেদনশীলতা এবং গ্লুকোজ বিপাকের জন্য ম্যাগনেসিয়াম অপরিহার্য। এটি মানবদেহকে রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে। ম্যাগনেসিয়াম মাত্রা কমে গেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- আপনি যদি সুস্থ থাকেন, তাহলে আপনার কিডনি খাবার থেকে পাওয়া অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম বের করে দেয়। তারপরেও শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় ম্যাগনেসিয়াম বাড়তি হয়ে গেলে অত্যধিক ক্র্যাম্প বা বমি বমি ভাব হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কখনোই সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম গ্রহণ করবেন না।
- ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর সাথে একত্রে কাজ করে ম্যাগনেসিয়াম। কম ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা হাড়ের ঘনত্বে প্রভাব ফেলে এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ম্যাগনেসিয়াম ক্যালসিয়াম শোষণ এবং বিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে । ফলে যখন এর মাত্রা অপর্যাপ্ত হয়, তখন হাড় গঠনে ক্যালসিয়াম কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হয় না। এই ভারসাম্যহীনতা হাড়কে দুর্বল করে দিতে পারে।
তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া