মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব ‘অযৌক্তিক’ কোটা বাতিল করে আজকের মধ্যে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনঃপ্রকাশের আল্টিমেটাম দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ অন্যান্য মেডিক্যালের শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ সমাবেশে এই আল্টিমেটাম দেন তারা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা; আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ; মেডিক্যালে কোটা কেন, প্রশাসন জবাব চাই; ৪০ পেয়ে চান্স হয়, ৭৩ কেন বাদ হয়; আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’সহ নানা স্লোগান দেন।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে প্রফেসর ডা. মেজর (অব) আব্দুল ওহাব বলেন, ‘গতকাল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় ৪০ বা ৪১ পেয়ে অনেকে চান্স পেয়েছেন অথচ এর ডাবল মার্ক পেয়েও অনেকে চান্স পাননি, এটা কি বৈষম্য না? স্বৈরাচারের লোকেরা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে আর তাদের কুকীর্তির প্রকাশ হলো গতকালের রেজাল্ট।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা যেহেতু রাজপথে নামতে শিখেছো, সেহেতু রাজপথ থেকেই তোমাকে অধিকার আদায় করে নিতে হবে।’ এছাড়াও আজকের মধ্যে সব ধরনের কোটার বিলুপ্তি ও ফল পুনঃপ্রকাশ করতে হবে বলে দাবির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করেন তিনি।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী দোহা বলেন, ‘বৈষম্য বাতিল চেয়ে, কোটার সংস্কার চেয়ে একটি সফল আন্দোলনের পরও মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণের কোনও দরকারই ছিল না। যেখানে পাশ নম্বরই ৪০ সেখানে ৩৭ বা ৩৮ পেয়ে কীভাবে কেউ মেডিক্যালে পড়তে পারে। আমরা আজকেত মধ্যে এই বৈষম্যের সমাপ্তি দেখতে চাই।’
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলেন, ‘আগে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বহাল থাকলেও সেখানে কাট মার্কের চেয়ে এক থেকে দুই মার্কের কম পেলে কোটায় চান্স পেতো, কিন্তু এ বছর নাতি-নাতনি কোটায় কাট মার্কের চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ নম্বর কম পেয়েও সরকারি মেডিক্যালে চান্স পেয়েছে, যা আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সব ধরনের কোটার বিলুপ্তি চাই। আজকের মধ্যে কোটা বৈষম্য বাতিল করে পুনরায় ফলাফল প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি।’
মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ‘২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি মেডিক্যালে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক কোটা চালু রয়েছে। অনেকে ৭২ নম্বর পেয়েও চান্স পাননি অথচ অনেকে ৪০ পেয়েও চান্স পেয়েছেন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পোষ্য কোটাসহ অযৌক্তিক কিছু কোটা রয়ে গেছে। আমরা চাই, অতি দ্রুত যেন মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফল পুনঃপ্রকাশ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা থেকে সব ধরনের অযৌক্তিক কোটা বিলুপ্ত করতে হবে।’
কবি জসিম উদদীন হলের শিক্ষার্থী নুরুল গণি সগীর বলেন, ‘২৪ এর রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি, এখনই আমরা পুনরায় বৈষম্যমূলক নীতির বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এত রক্তের পরও আমাদের আবার মাঠে নামতে হচ্ছে।’
এ সময় তিনি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনাদের ডাকে আমাদের হাজার হাজার ভাই আহত ও নিহত হয়েছেন। তাদের যে দাবি ছিল, সেই দাবি পূরণ করতেই আপনাদের আমরা উপদেষ্টা বানিয়েছি, আপনারা যদি সেই শিক্ষার্থীদের ভাষা না বোঝেন তাহলে আপনাদের সেখানে থাকার দরকার নেই। আপনারা ওখানে বসে থাকার পরও কেন আজ আমাদের কোটা নিরসনের দাবিতে রাস্তায় নামতে হচ্ছে?’
গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকালে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর থেকে প্রকাশ করা হয় এমবিবিএস পরীক্ষার ফল।