জমে উঠেছে ধলেশ্বরী নদীর তীরে মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুর এলাকায় তরমুজের হাট। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার তরমুজের পসরা বসে এখানকার আড়তগুলোতে। নদী ও সড়কপথে তরমুজ আসে এই হাটে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এখানে আড়াই কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রলার ও ট্রাকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা থেকে তরমুজ আসছে মুক্তারপুরের আড়তে। তরমুজে সয়লাব ধলেশ্বরীর তীরের এই পাইকারি হাট। বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সকাল থেকে জমে উঠছে বেচাকেনা। গরম ও রমজান কেন্দ্র করে বেড়েছে মৌসুমি এই ফলের চাহিদা। বিভিন্ন আকার অনুযায়ী প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এবার তরমুজের দাম বেড়েছে। গতবারে যে তরমুজ কিনেছেন ৩০০ টাকায় এবার তা ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
চাষিরা বলছেন, এ বছর তরমুজের ফলন ভালো হলেও সার, কীটনাশক, শ্রমিকমজুরি ও পরিবহন খরচ বেশি পড়ায় বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে তা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই আছে।
দাম যেমন বেশি, চাহিদাও বেশ
দিঘীরপাড় ইউনিয়ন থেকে তরমুজ কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দাম যেমন বেশি, চাহিদাও বেশ। কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। আড়তদার ও পাইকাররাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। প্রতি বছর ঝড়বৃষ্টিতে অনেক তরমুজ নষ্ট হয়। এবার তা হয়নি। তবে আমাদের মতো যারা এখান থেকে কিনে নিয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি করেন, তাদের সীমিত লাভ হচ্ছে।’
এবার তরমুজের দাম বেশি উল্লেখ করে গজারিয়া উপজেলার হোসেন্দী এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী মো. জামাল শেখ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছর যেটি কিনেছিলাম ৮০-৯০ টাকায়, এবার সেটি ১২০-১৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যেটি ৩৫০ টাকায় কিনেছিলাম এবার ৪০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। যেমন কেনা তেমন আমাদের বিক্রি। গাড়ি ভাড়া দিয়ে ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। তবে এবার তরমুজের মান ভালো।’
একই কথা বলেছেন টঙ্গীবাড়ীর খুচরা ব্যবসায়ী মো. সেলিম। তিনি বলেন, ‘গত বছর কম দাম হওয়ায় মানুষ স্বস্তিতে কিনতে পেরেছিল। এবার হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ দাম একটু বেশি। কৃষকরা বেশি লাভ পাচ্ছেন। আমাদেরও ৮০-১০০ টাকা বেশি দামে কিনে একইভাবে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে রমজানের কারণে বিক্রি ভালো।’
ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা
পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে এই হাটে তরমুজ বিক্রি করতে এসেছেন কৃষক মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার মোটামুটি দাম ভালো। কিন্তু সার ও কীটনাশকের দাম গতবারের চেয়ে বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। পরিবহন খরচও বেড়েছে। তাই একটু বেশি দামে বিক্রি করত হচ্ছে।’
ভোলা থেকে ট্রাকে করে তরমুজ নিয়ে এই হাটে এসেছেন মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘এবার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু চাষাবাদে খরচ বেশি হয়েছে। এক কানি জমিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গড়ে চার হাজার পিস তরমুজ পেয়েছি। গত বছর ভোলা থেকে ট্রাকে করে তরমুজ আনতে ৩০ হাজার টাকায় লেগেছিল, এবার ৪৫ হাজার টাকা লেগেছে। এজন্য বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। ৯-১০ কেজির তরমুজের শ ২১ থেকে ২৩ হাজার টাকায় আর ছোটগুলোর শ ছয়-সাত হাজার টাকায় বিক্রি করতে পেরেছি।’
যা বলছেন আড়তদাররা
মুক্তারপুরের আড়তদার মায়ের দোয়া ফল ভান্ডারের মালিক মো. মিনহাজ গাজী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন পটুয়াখালী ও ভোলা থেকে আসছে তরমুজ। তবে পটুয়াখালীর তরমুজ প্রায় শেষের দিকে। ভোলারগুলোর আসতে শুরু করেছে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার মান ভালো। খুব সুস্বাদু। কৃষকদের কাছ থেকে কিনে আমরা বড় তরমুজের পিস ৩৫০-৪০০, মাঝারি ২০০-২৫০ এবং ছোট ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করছি। প্রতিদিন মুক্তারপুর হাটে প্রায় আড়াই কোটি টাকার বিক্রি হয়। বিভিন্ন জেলার পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে নিয়ে যান।’
বাবুল ফল ভান্ডারের মালিক মো. বাবু দেওয়ান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মুক্তাপুর পুরাতন ফেরিঘাট হাটটি ঐতিহ্যবাহী। মৌসুমি ফলের দাম ভালো পাওয়া যায়। বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন। তবে গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজ বেশি আসছে। আট-নয় কেজির ১০০ তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ হাজার টাকা। প্রতিদিন ১০-১২ ট্রলার তরমুজ আসে। একেকটিতে ১০-১২ হাজার থাকে। ট্রাক আসে অন্তত ৫০টি। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টার মধ্যে পাইকারিতে তরমুজ বিক্রি শেষ হয়ে যায়। সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে খুচরা বেচাকেনা। একটি ট্রাকের তরমুজের দাম হয় আট থেকে ১০ লাখ টাকা এবং একটি ট্রলারে থাকে প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকার তরমুজ। সবমিলিয়ে এবার বেচাকেনা জমে উঠেছে। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার বেচাকেনা হচ্ছে। সপ্তাহখানেক পর আরও বাড়বে বেচাকেনা।’