Homeদেশের গণমাধ্যমেমার্কিন শুল্ক পর্যালোচনায় অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে বৈঠক চলছে

মার্কিন শুল্ক পর্যালোচনায় অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে বৈঠক চলছে


যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন করে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এই শুল্ক আরোপের বিষয়ে পর্যালোচনা করতে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে।

রোববার (৬ এপ্রিল) বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই বৈঠক শুরু হয়।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্ব এই বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব এবং কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতা উপস্থিত রয়েছেন।

গত বুধবার (২ এপ্রিল) ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত ২টা) হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৩৭ শতাংশ করার ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যেখানে বাংলাদেশি পণ্যে এতদিন গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।

হোয়াইট হাউস প্রকাশিত চার্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ মার্কিন পণ্যের ওপর ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। তাই বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ ‘ডিসকাউন্টেড রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ ধার্য করা হয়েছে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তানের ওপর ২৯ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৬ শতাংশ, চীনের ওপর ৩৪ শতাংশ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ওপর ২০ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৪৯ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৪ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, তাইওয়ানে ৩২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩২ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডে ৩১ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫ শতাংশ, জাপানে ২৪ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, ইসরায়েলে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১০ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্ক, ব্রাজিল, চিলি এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১০ শতাংশ করে শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বলেছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বন্ধুসুলভ নয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, নিঃসন্দেহে এই ঘটনার অর্থনৈতিক প্রভাব অনুভূত হবে। এই ঘটনার প্রতিশোধ নেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে চীন। অর্থাৎ ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কের জবাবে তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিলেন তা বিশ্বনেতাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাংলাদেশের পক্ষে। আমদানির তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক বেশি। অবশ্য রপ্তানির বেশিরভাগই তৈরি পোশাকের ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, যার মধ্যে বেশিরভাগই মৌলিক পণ্য। অন্যদিকে, বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লোহা, ইস্পাত, খনিজ জ্বালানি, তুলা, তেলবীজ ও নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর- এসব পণ্য রপ্তানি করে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ১০ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার এবং দেশ থেকে আমদানি ছিল ২ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬০১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ইস্পাত আমদানি করেছে। তারপরে খনিজ জ্বালানি ৫৯৫ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার, তুলা ৩৬১ মিলিয়ন ডলার, তেলবীজ ৩৪১ মিলিয়ন ডলার ও নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টর আমদানি করেছে ১১১ মিলিয়ন ডলারের।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ছিল ৯৭০১ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য, আমদানি ২৩৪৪ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ১০৪১৭ দশমিক ৭২ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২৮২৫ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ৬৯৭৪ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২২৬৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৮৩২ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ২১২৬ দশমিক ১০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৬৮৭৬ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭৭৩ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৫৯৮৩ দশমিক ৩১ মিলিয়ন ডলার, আমদানি ১৭০৪ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বেশিরভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের ৭ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। বাকিটা এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, চামড়ার জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস ও বিভিন্ন কৃষিপণ্য থেকে।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত