দিল্লির একটি আদালত ভারতের বিখ্যাত শিল্পী মকবুল ফিদা হুসাইনের দুটি বিতর্কিত চিত্রকর্ম জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চিত্রকর্মগুলো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। সোমবার (২১ জানুয়ারি) দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ কোর্ট পুলিশকে চিত্রকর্মগুলো জব্দ করার অনুমতি দেয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, দিল্লি আর্ট গ্যালারিতে প্রদর্শিত ওই চিত্রকর্ম দুটি হিন্দু দেব-দেবীদের নগ্ন রূপে চিত্রিত করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে।
দিল্লি আর্ট গ্যালারিতে ২৬ অক্টোবর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই শিল্পীর ১০০টিরও বেশি চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হচ্ছিলো। এক বিবৃতিতে গ্যালারিটি জানায়, তারা আইনি প্রক্রিয়ার পক্ষ নয় এবং বিষয়টি নিয়ে আইনি পরামর্শ নিচ্ছে।
আইনজীবী অমিতা সচদেবা ৪ ডিসেম্বর চিত্রকর্ম দুটি গ্যালারিতে দেখে ছবি তোলেন এবং পূর্ববর্তী অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ৯ ডিসেম্বর দিল্লি পুলিশের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অমিতা বলেন, ১০ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে গ্যালারিতে গেলে দেখতে পান চিত্রকর্ম দুটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। গ্যালারি কর্মকর্তারা তখন দাবি করেন, তারা কখনোই চিত্রকর্মগুলো প্রদর্শন করেননি।
অমিতা সচদেবা আদালতে সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষণের আবেদন করেন। পুলিশ তদন্ত শেষে জানায়, প্রদর্শনীটি ব্যক্তিগত স্থানে আয়োজন করা হয়েছিল এবং এটি শুধু শিল্পীর মৌলিক কাজ প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ছিল।
মকবুল ফিদা হুসাইনকে ‘ভারতের পিকাসো’ বলা হতো। তবে তার চিত্রকর্ম বহুবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ২০০৬ সালে ‘মাদার ইন্ডিয়া’ চিত্রকর্মের জন্য তাকে অশ্লীলতার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। ওই চিত্রকর্মে এক নগ্ন নারীকে ভারতের মানচিত্রের রূপে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
বিতর্কের মুখে হুসাইন দেশ ছেড়ে লন্ডনে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন এবং ২০১১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
২০০৮ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হুসাইনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। আদালত বলে, হুসাইনের চিত্রকর্ম ভারতীয় প্রতীক ও ইতিহাসে প্রচলিত নগ্নতার ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
তারা আরও বলেন, এমন অনেক বিষয়বস্তু, ফটোগ্রাফ ও প্রকাশনা রয়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধেও কি মামলা করা হবে? যদি না দেখতে চান, তবে তা না দেখলেই হয়। এটি শিল্প।
বহু শিল্পী ও সমালোচক মনে করেন, ভারতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অক্টোবরে বোম্বে হাইকোর্ট এফএন সাউজা ও আকবর পাদামসির শিল্পকর্ম ‘অশ্লীল’ বলে কাস্টমস বিভাগের জব্দের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে। আদালত রায় দেয়, প্রতিটি নগ্ন চিত্রকর্ম অশ্লীল নয়।
হুসাইনের বিরুদ্ধে বিতর্ক তার শিল্পকর্মের প্রাসঙ্গিকতাকে নতুনভাবে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। তবে, এ ঘটনায় ভারতে শিল্প ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চলমান চাপের বিষয়টি আরও প্রকাশ পেয়েছে।