Homeদেশের গণমাধ্যমেভিজিএফের চাল বিতরণে বিএনপির নেতারা, ৫০০ জনের চাল আত্মসাতের অভিযোগ

ভিজিএফের চাল বিতরণে বিএনপির নেতারা, ৫০০ জনের চাল আত্মসাতের অভিযোগ


রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভার ভিজিএফের চাল বিতরণের দায়িত্ব পেয়েছে বিএনপি। তবে বিতরণ শুরুর পর বিএনপিরই এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, অন্তত ৫০০ জনের চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। যদিও পৌর প্রশাসক বলছেন, চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। এক গ্রুপের লোক চাল পাওয়ায় অন্য গ্রুপ এমন অভিযোগ তুলছে।

নওহাটা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদ উপলক্ষে ৪ হাজার ৬২১ জনের জন্য মাথাপিছু ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ আসে। পৌরসভার একজন কর্মকর্তার কাছে থাকা তালিকায় দেখা যায়, পৌরসভা ৬০৮ জনের বরাদ্দ নিজেদের কাছে রাখে বিতরণের জন্য। আর জামায়াতে ইসলামীর নামে ৮৪৫টি, পৌর বিএনপির নামে ২ হাজার ৮৩১টি এবং ছাত্রদের অনূকুলে ৩৩৭টি কার্ড রাখা হয়। তবে পৌর বিএনপিই ছাত্রদের নামে থাকা কার্ডগুলোও নেয়। অর্থাৎ পৌর বিএনপি মোট ৩ হাজার ১৬৮টি কার্ড বিতরণের দায়িত্ব পায়।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের অনেকেই এসে অভিযোগ তোলেন যে, তাদের নামে পৌর বিএনপির পক্ষ থেকে কার্ড দেওয়া হলেও চাল দেওয়া হচ্ছে না। চাল নিতে গেলে তাদের জানানো হচ্ছে এই কার্ডের চাল আগের দিনই বিতরণ হয়ে গেছে। এ সময় তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান।

পৌরসভার বাঘাটা মহল্লার বাসিন্দা কামাল আলী বলেন, ‘সোমবার রাত ৯টায় আমার বাবা শামসুল ইসলামের নামে কার্ড দিয়ে আসা হয়েছে। এখন চাল নিতে এলে বলছে এই চাল সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরের আগেই বিতরণ হয়ে গেছে। এই চাল কে তুলে নিয়েছে সেটা আমি জানি না।’

মহানন্দখালী মহল্লার বাসিন্দা এবাদত উল্লাহ সরকার বলেন, ‘সোমবার থাইকা আমি ঘুরছি। আমার চাইল বেইচে খায়্যা লিয়েছে বিএনপির নেতারা। আপনারা (সাংবাদিকরা) বিচার করেন, কইরে আমাক চাইলড্যা বাহির কইরে দেন। আমি গরিব মানুষ, আমার চাইলড্যাও বেইচে খাওয়া লাগবি ক্যান?’

এদিকে অনেককে চাল পেতে না দেখে পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীনসহ তার অনুসারীরা অভিযোগ তোলেন, চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিকের পক্ষে তার কর্মী মো. রক্সি চাল বিতরণের দায়িত্বে ছিলেন। রক্সি চাল সরিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ তোলেন বিএনপির জয়নালের পক্ষের লোকজন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিএনপিকর্মী রক্সিকে মারধরও করা হয়। পরে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন রক্সি।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রক্সিকে চাল বিতরণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক। রক্সি ৫০০ থেকে ৬০০ মানুষের চাল আত্মসাৎ করেছে। ১ নম্বর ওয়ার্ডের এসব মানুষ চাল পায়নি। রক্সি বেচে খেয়েছে।’

এসময় জয়নাল আবেদীন একটি কাগজে একটি স্বীকারোক্তি লেখা দেখান। এতে থাকা স্বাক্ষরটি রক্সির বলে তিনি দাবি করেন। ওই কাগজে লেখা আছে, ‘আমি ভিজিএফের চাল বিতরণের দায়িত্বে ছিলাম। ভুলক্রমে ১ নম্বর ওয়ার্ডের চাল বিতরণে অনিয়ম হয়। এই দায় সম্পূর্ণ আমার। তাই চাল না পাওয়া ব্যক্তিদের রোষানলে পড়ি এবং আঘাতপ্রাপ্ত হই। পৌরসভার হাবিব ভাইয়ের অফিসে ভুল স্বীকার করে ১ নম্বর ওয়ার্ডের সকল চাল দেওয়ার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে স্বীকারোক্তি দিচ্ছি।’ এই কাগজটিতে সাক্ষী হিসেবে দুজন নারীর স্বাক্ষরও আছে।

তবে এমন স্বীকারোক্তি দেননি বলে দাবি করেছেন রক্সি। তিনি বলেন, ‘জয়নাল আবেদীন ও তার লোকজন আমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই চাল আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মারধর করেছে। আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি, থানায় মামলা করব। এ জন্য এই কাগজ জয়নাল নিজে নিজে বানিয়েছে। স্বাক্ষর আমার না।’ 

আর জয়নালের দাবি, অন্তত ২০ জনের সামনে রক্সি এতে সই করেছেন।

জানতে চাইলে পৌর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘পৌরসভা আমাদের সহযোগিতা চেয়েছিল। আমাদের ৩ হাজার ১৬৮টি কার্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমি তালিকা দিয়েছিলাম ৩ হাজার ২০০ জনের। ৩২ জনের তালিকা বেশি দেওয়ায় পৌরসভা থেকে আপত্তি জানানো হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, পৌরসভার জন্য যে ৬০৮টি কার্ড আছে, সেখান থেকে অথবা সব ওয়ার্ড থেকে কয়েকটা করে কার্ড কমিয়ে যেন এই ৩২ জনকে চাল দেওয়া হয়, কিন্তু তারা সেটি করেনি। ফলে এই ৩২ জন চাল পায়নি। আত্মসাতের অভিযোগ সঠিক না। এই ৩২ জনকে আমি নিজের পকেট থেকে চাল কিনে দেবো।’

নওহাটা পৌরসভার প্রশাসক পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ দাবি করেন, বিএনপিকে চাল বিতরণের কোনো কার্ড দেওয়া হয়নি। তবে বিতরণের ক্ষেত্রে এলাকার গরিব মানুষের চেনার জন্য বিএনপির সহযোগিতা নেওয়া হয়েছে। চাল আত্মসাতের ঘটনা ঘটেনি। 

তিনি বলেন, ‘আমার পছন্দের লোক না পেয়ে অন্যের পছন্দের লোক চাল পেলে বলবে চাল আত্মসাৎ হয়েছে। এখানেই তেমন ঘটনাই ঘটেছে।’

চাল বিতরণের সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বিএনপিকর্মী রক্সিকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে আমি গিয়েছিলাম। একটু উত্তেজনা ছিল। এ জন্য পুলিশ রাখা ছিল। মারামারির কথা আমাকে কেউ বলেনি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে এবং ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত