ভারতে উড়িষ্যা রাজ্যের ভুবনেশ্বরে বিদেশি নারীর ঊরুতে স্থানীয় এক দেবতার ট্যাটু আঁকানো ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে এক ট্যাটু শিল্পীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টিকে ধর্ম অবমাননার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং এরই মধ্যে এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ওই ট্যাটু পারলারের মালিকের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত মালিক ৩৩ বছর বয়সী রকি রঞ্জন বিসোই।
পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, তার পার্লারের ২৫ বছর বয়সী শিল্পী অশ্বিনী কুমার ইতালীয় ওই নারীর অনুরোধে ট্যাটুটি এঁকেছেন। অবশ্য সংবাদমাধ্যমগুলোতে ওই বিদেশি নারীর নাম ও বয়স প্রকাশ করা হয়নি।
এর আগে রকি তার হোয়াটসঅ্যাপ স্ট্যাটাসে ওই নারী ও ট্যাটুর একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন। পরে সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে তিনি পোস্টটি সরিয়ে ফেলেন।
এ অবস্থায় রকির নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন নিজেকে সমাজকর্মী দাবি করা এক ব্যক্তি। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, এক বিদেশি নারীর ঊরুতে ভগবান জগন্নাথের ট্যাটু আঁকা হয়েছে, এটি অত্যন্ত আপত্তিকর।
জগন্নাথ হলেন উড়িষ্যার পুরীতে অবস্থিত বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান দেবতা। এই মন্দির হিন্দুদের কাছে অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান।
অভিযোগে আরও বলা হয়, এই ট্যাটুটি আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে ও আমরা এর জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাই।
জানা গেছে, অভিযুক্ত নারী উড়িষ্যার কান্ধমাল অঞ্চলে এক এনজিওতে কাজ করেন। তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং জানিয়েছেন, তিনি ভগবান জগন্নাথের একনিষ্ঠ ভক্ত। দেবতাকে অবমাননা করার কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না।
অভিযুক্ত নারী তার ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমি কোনো অসম্মান করতে চাইনি। আমি প্রতিদিন মন্দিরে যাই ও আমি সত্যিকারের ভক্ত। আমি ভুল করেছি ও এজন্য আমি দুঃখিত।
তিনি আরও বলেন, আমি চেয়েছিলাম এটি এমন স্থানে থাকুক যা দেখা যাবে না। আমি সমস্যা তৈরি করতে চাইনি। ট্যাটুটি আমি এটি সরিয়ে ফেলবো। আমার ভুলের জন্য দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা বিশ্ব রঞ্জন সেনাপতি বলেছেন, আমরা ওই নারীকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ ও সতর্ক করবো। কারণ আমাদের ধর্মীয় অনুভূতি সম্পর্কে হয়তো তার কোনো ধারণা নেই।
পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, গত ১ মার্চ ওই নারী ট্যাটু পারলারে গিয়েছিলেন ও রকির নির্দেশনায় অশ্বিনী কুমার তার ঊরুতে ট্যাটুটি আঁকেন।
বিতর্ক ও প্রতিবাদের মধ্যেই পার্লার মালিক রকি ও অভিযুক্ত বিদেশি নারী পৃথকভাবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ক্ষমা চেয়েছেন। রকি বলেছেন, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ আমাদের স্টুডিওতে ট্যাটুটি করা হয়েছিল। শিল্পীর পক্ষ থেকেও আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
‘ইতালীয় ওই নারী আমাদের স্টুডিওতে এসে বলেছিলেন, তিনি ভগবান জগন্নাথের ভক্ত ও তার ঊরুতে ট্যাটুটি করাতে চান। কারণ তার এনজিওতে দেখা যায় শরীরের এমন স্থানে ট্যাটু রাখা নিষিদ্ধ।’
সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট
এসএএইচ