Homeদেশের গণমাধ্যমেভারতের সঙ্গে কোনও অসম চুক্তি চায় না বাংলাদেশ: আনু মুহাম্মদ

ভারতের সঙ্গে কোনও অসম চুক্তি চায় না বাংলাদেশ: আনু মুহাম্মদ


‘বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত যদি ট্রানজিট ব্যবহার করে তাহলে ভারতের মধ্য দিয়েও বাংলাদেশের ট্রানজিট ব্যবহার থাকতে হবে। ভারতের কোনও অসম চুক্তি বাংলাদেশ চায় না’, বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘সর্বজনকথা’র আয়োজনে ‘বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য: স্বরূপ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন।

আনু মুহাম্মদ বলেন, ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে, যদি আধিপত্যের সুনির্দিষ্ট বিষয়কে পাশ কাটিয়ে অন্য দিকে মনোযোগ সরিয়ে দেওয়ার প্রবণতা থাকে। ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য হিন্দু-মুসলমান বিষয় না। পুরো দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে সংহতি স্থাপনের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে ভারতের আধিপত্যকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই সরকারের প্রয়োজন সামরিক, বেসামরিক সব চুক্তি জনগণের কাছে প্রকাশ করা। সেসব চুক্তির মধ্যে যেগুলো জনস্বার্থবিরোধী, সেগুলো বাতিল করা। কিন্তু এই সরকারের বিভিন্ন মাধ্যমে শুনতে পাই, যে, চুক্তি বাতিল করা যাবে না। পুরনো চুক্তি ও প্রকল্প থাকবে। কিন্তু আমরা একটি নতুন বাংলাদেশে প্রবেশ করবো তা হতে পারে না। একইসঙ্গে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়াতে গুরুত্বারোপ করেন আনু মুহাম্মদ।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত রাষ্ট্র তার সেই সময়ের কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ভারতের মানুষ সহমর্মিতা নিয়ে সেই সময় বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমরা অবশ্যই সেই সহযোগিতার কথা স্মরণ করবো। সেইসঙ্গে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের বিরোধিতা আমরা করবো। শেখ হাসিনার আমলে শর্তহীনভাবে আত্মসমপর্ণ করার কারণ শেখ হাসিনার দরকার ছিল নির্বাচন ছাড়া চিরস্থায়ী ক্ষমতা তৈরি।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক আরও বলেন, ভারত প্রসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আছে। একটা বৃহৎ রাষ্ট্রের পাশে একটা রাষ্ট্র যে স্বাধীনভাবে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, বিভিন্ন সময়ে তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে ভারত রাষ্ট্র। এইটাই মূল সমস্যা। এই আধিপত্য থেকে বের হতে হলে আধিপত্যের সুনির্দিষ্ট বিষয়গুলো জানতে হবে এবং জনমত তৈরি করতে হবে।

গবেষক মাহা মির্জার সঞ্চালনায় সেমিনারের আরও বক্তব্য রাখেন প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান।

বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্যের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, যে সমঝোতার মধ্য দিয়ে ভারত রাষ্ট্র এবং ভারতে কতিপয় ব্যক্তির পুঁজির স্বার্থ পূরণ হচ্ছে— সেসব চুক্তি ও সমঝোতা বাতিল করা দরকার। ট্রানজিট চুক্তি, রামপাল চুক্তি, বিদ্যুৎ চুক্তিসহ বিভিন্ন চুক্তি পুনর্বিবেচনা এবং সীমান্তে হত্যা নিয়ে বহুপাক্ষীয় ফোরামে যাবার প্রস্তাব দেন তিনি।

মোশাহিদা সুলতানা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভারত নির্ভরতার স্বরূপ তুলে ধরেন। তিনি বিদ্যুৎ খাতের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন- বহরম্পুর-পাবনা সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, সূর্যমনি- কুমিল্লা সঞ্চাল লাইন, আদানির ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রিলায়েন্স এলএনজি-ভিত্তিক মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতা ও উৎপাদন এবং এই প্রকল্পগুলোর জাতীয় স্বার্থের বিরোধগুলো তুলে ধরেন।

সেইসঙ্গে জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প যেমন- ইন্ডিয়া ও বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপ লাইনের মাধ্যমে পরিশোধিত তেল আমদানি, এলএনজি আমদানির আর্থিক লাভ-ক্ষতি এবং এগুলোর কৌশলগত ঝুঁকি আলোচনা করে সব প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান।

অধ্যাপক তানজিমউদ্দীন খান বলেন, ভারতের সব চেয়ে বড় সংবেদনশীলতার জায়গা তার সেভেন সিস্টার। যার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।

তিনি আরও বলেন, তিস্তাচুক্তির ক্ষেত্রে বারবার রাজ্য বনাম কেন্দ্রের যে ঠেলাঠেলি তা অনেকটাই রাজনৈতিক। তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী। তাই তিস্তাচুক্তি করার সব এখতিয়ার আছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। তাই তিনি দ্রুততম সময়ে তিস্তাচুক্তি সম্পাদন করার দাবি জানান। তিনি ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি জনসমক্ষে উন্মোচনের দাবি করেন।





Source link

এই বিষয়ের আরো সংবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

এই বিষয়ে সর্বাধিক পঠিত