ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় তিনগুণ বরাদ্দ করেছে চীন। ২০২৫ সালের জন্য দেশটির প্রতিরক্ষা বাজেট ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৭৯ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকদের মতে, চীনের প্রকৃত সামরিক ব্যয় ঘোষিত বাজেটের চেয়েও ৪০-৫০ শতাংশ বেশি হতে পারে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। নতুন বাজেটে স্থল, নৌ, আকাশ, পরমাণু, মহাকাশ ও সাইবার নিরাপত্তায় ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন সামরিক উত্তেজনা
চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধির ঘোষণার একদিন আগেই দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, তারা যেকোনো ফ্রন্টে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধে প্রস্তুত। চীনের এই অবস্থানের জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেঠ বলেছেন, ‘আমরাও প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র শান্তি বজায় রাখতে চায়, তবে প্রয়োজনে যুদ্ধে অংশ নিতেও পিছপা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘চীন অত্যন্ত দ্রুতগতিতে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে এবং উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যেতে চায়। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তির পক্ষে, তবে সেই শান্তি শক্তির মাধ্যমেই বজায় রাখা সম্ভব।’
ভারতের তুলনায় চীনের প্রতিরক্ষা বাজেট
বিশ্লেষকদের মতে, চীনের প্রকৃত প্রতিরক্ষা ব্যয় সরকারি ঘোষণার চেয়েও বেশি হতে পারে। সরকারি হিসাবে এটি বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেট, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের (৯০০ বিলিয়ন ডলার) পরেই অবস্থান করছে।
ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে চীনের এই বিপুল সামরিক বাজেট ভারতের জন্যও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, চীনের সামরিক সম্প্রসারণ দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্য
চীনের সামরিক নীতির মূল লক্ষ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করা, তাইওয়ানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বজায় রাখা ও প্রযুক্তিগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। বিশেষ করে, চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি, মহাকাশ যুদ্ধ ও পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে বিশেষ জোর দিচ্ছে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উত্তেজনা এবং প্রতিযোগিতা ভবিষ্যতে এশিয়া ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াল, বিবিসি।