বরিশালে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিয়ে লুটপাট ও মালিকের স্ত্রীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মহানগর বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে। তিনি মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারের শ্বশুর।
সিটি করপোরেশন থেকে চালানো উচ্ছেদ অভিযানে তিনি শ্রমিক দিয়ে সাহায্য করেছেন দাবি করলেও, সিটি করপোরেশন বলছে ভিন্ন কথা।
শুক্রবার (২১ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিটি করপোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের ধান গবেষণা সড়কের একতা লেনে এই ঘটনা ঘটে। এসময় প্রতিষ্ঠান মালিকের স্ত্রীকে মারধর করা হয়। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কৃত ২৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে একদল ব্যক্তি এসে আক্কেল আলীর সম্পত্তিতে নির্মিত গুদাম ঘরের দক্ষিণ পাশের দেওয়াল ভাঙতে শুরু করেন। তারা দেওয়ালের একাংশ ভেঙে গুদাম ঘরে ঢুকে বিভিন্ন মালামাল নিয়ে যান। খবর পেয়ে আক্কেল আলীর স্ত্রী আকলিমা বেগম বুলবুলি ঘটনাস্থলে এলে সংঘবদ্ধ লোকজন তাকে মারধর করেন।
বুলবুলি বেগম বলেন, খবর পেয়ে আমি ধান গবেষণা সড়কে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে আসি। এসে দেখি ফিরোজ কমিশনার দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের গুদাম ঘর ভাঙছে। গুদাম কেন ভাঙছে জানতে চাইলেই লোকজন লেলিয়ে দেন আমাকে মারধর করতে। তারা আমার বুকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেয়। ফিরোজ কমিশনার আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙেছে আবার আমাকে মারধরও করেছে। আমি দুইবার স্ট্রোক করা রোগী। ওদের মারধরে ভেবেছিলাম ঘটনাস্থলেই মারা যাবো। পরে কয়েকজন এগিয়ে এসে আমাকে রক্ষা করে এবং পুলিশ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
আহতের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক হিরণ বলেন, ৫ আগস্টের পর ফিরোজ কমিশনার আমাদের কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। তিনি সরাসরি জানিয়েছেন, টাকা না দিলে আমাদের সবকিছু মাটিতে মিশিয়ে দেবেন। এমনকি আমার বাবার কবরস্থান ভেঙে ক্লাবঘর বানানোর হুমকি দেন। তার কথায় রাজি না হওয়ায় শুক্রবার রাতে ফিরোজ আহমেদের নেতৃত্বে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারী রবিউল কবির স্বপন, তার ছেলে শাওন, নগরীর ২৪নং ওয়ার্ড ছাত্রদলের আহ্বায়ক রাকিব লোকজন নিয়ে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেওয়াল ভেঙে গুঁড়িয়ে মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, তারা আমার বৃদ্ধা মাকে মারধর করে আটকে রাখেন। পরে পুলিশ গিয়ে উদ্ধার করেন। তাকে প্রথমে বরিশাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেছেন। মা কিছুটা সুস্থ হলে থানায় অভিযোগ দেবো।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ফিরোজ আহমেদ বলেন, এলাকার মানুষের অনেক দিনের দাবি ছিল একতা লেনটি প্রশস্ত করার। কিন্তু আক্কেল আলীর গুদাম ঘরের জন্য সড়ক প্রশস্ত করা যাচ্ছিল না। সিটি করপোরেশন থেকে রাস্তার জমি দখল করে রাখা দোকানটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কাজের জন্য আমরা শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। আক্কেল আলীর ছেলেরা এসে মারধর করে শ্রমিকদের ধরে নিয়ে গেছে।
ওই ওয়ার্ডের সাবেক সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সেলিনা বেগম বলেন, আক্কেল আলীর পরিবার তাদের জমি ছাড়াও আরও বেশি জমি দখলে রেখেছিল। সেটা উচ্ছেদে সিটি করপোরেশন অনেকবার নোটিশ দিয়েছে। সবশেষ শুক্রবার সাবেক কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক দিয়ে আক্কেল আলীদের দোকানের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালটি ভেঙে দেন। এসময় আক্কেল আলীর স্ত্রী এসে ফিরোজ কমিশনারকে থাপ্পড় মারেন। এতে জনতা উত্তেজিত হয়ে উঠলে মারধরের হাত থেকে তাকে আমি রক্ষা করার সময় নিজেও আহত হয়েছি।
তবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, সিটি করপোরেশন কয়েকদিন ধরেই উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রেখেছে। সাধারণত রাতে সিটি করপোরেশন কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায় না। শুক্রবার ২৪নং ওয়ার্ডে আমরা কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালাইনি, যেখানে সেখানে কারো ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের দেওয়াল ভাঙার প্রশ্নই ওঠে না।
এ ব্যাপারে মেট্রোপলিটন কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ধান গবেষণা সড়কে জমি নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে একজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দেওয়াল ভাঙার খবর শুনেছি। তবে এখনো থানায় কোনো পক্ষের লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে ফিরোজ আহম্মেদকে ২০২৩ সালের ৩ জুন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে লিখিতভাবে আজীবন বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারপর থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চাঙ্গা হয়ে ওঠেন ফিরোজ আহম্মেদ। আওয়ামী লীগের পক্ষ হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে সকল প্রোগ্রামে অংশ নিতেন তিনি।
শাওন খান/এফএ/এমএস