ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম পেরিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) আবার গড়াবে রাজধানী ঢাকায়। দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগটি শেষ রেখার দিকে যত ছুটছে ততই বাড়ছে ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধ নিয়ে সংকটের খবর।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বোমা ফেটেছে চিটাগং কিংসের দেশি ক্রিকেটার পারভেজ হোসেন ইমনের বেতন না পাওয়ার খবরে। বিপিএল খেলে তিনি এখন পর্যন্ত একটি টাকাও পাননি। দুই-দুইবার ব্যাংক গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে তাকে।
চিটাগং কিংসের মালিক সামির কাদের চৌধুরীর সঙ্গে রাইজিংবিডি ডটকমের কথা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সাফ বলেছেন, ইমনের টাকা আটকে রাখা হয়েছে।
মোবাইল ফোনে রাইজিংবিডি ডটকমকে সামির কাদের বলেন, “ও আমাদের এখান থেকে দুই-তিন দিনের ছুটি নিয়ে গেছে। ওর পেমেন্ট দেওয়া হয়নি, এটাও আমি বলছি। একটা ব্যক্তিগত বিষয়ে ওর পেমেন্ট আটকে রেখেছি। ওর সাথে আলোচনার ব্যাপার আছে। বাকিটা সে কেন আসেনি, আপনারা ওকে জিজ্ঞেস করেন।”
সেই কারণ কী? জানতে চাইলে উল্টো সামরিক কাদের বলছেন, এতে ক্রিকেটারের সম্মানহানি হবে। নির্দিষ্ট কোনো কারণের কথা খোলাসা করতে চাননি তিনি।
এ বিষয়ে সামির কাদের বলেছেন, “বিষয়টা আমার আগে প্লেয়ারের সাথে আলোচনা করতে হবে। আচরণবিধি, শৃংখলাভঙ্গ যেকোনো বিষয় হতে পারে।”
“ইমন বলেছে ‘সবাই পেমেন্ট পেয়েছে, আমি কেন পেলাম না?’ আমি তখন বললাম, নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। পেমেন্ট দিতে কোনো আপত্তি নেই, বোর্ডের সঙ্গে আলাপ আছে, আপনার সঙ্গে আলাপ আছে। অবশ্যই আমি পেমেন্ট দেব,” যোগ করেন সামির কাদের।
কয়েকটি গণমাধ্যমের খবরে এসেছে বিপিএলের বাকি ম্যাচ খেলতে ইমন আর ঢাকায় ফিরবেন না। সামির কাদের বলছেন, ইমনের কাছে জিজ্ঞাসা করলে এমন সিদ্ধান্তের কথা অস্বীকার করেছেন তিনি।
সামির কাদের বলছেন, “ও (ইমন) আমার কাছে অস্বীকার করে যাচ্ছে। সে বলেছে এমন কিছু (গণমাধ্যমে) বলেনি, কাল আসবে ঢাকায়, সরাসরি কথা বলবে।”
বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়ার জন্য ইমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে রাইজিংবিডি ডটকম। তবে কোনো সাড়া দেননি তিনি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করেছেন, “ফ্র্যাঞ্চাইজির (চিটাগং কিংস) সঙ্গে কোনো ঝামেলা হয়নি।”
“লম্বা গ্যাপ থাকায় দুই দিনের ছুটিতে আছি, কোচ-ম্যানেজারের সাথে কথা বলে ছুটি নিয়েছি। টিম ছেড়ে চলে গিয়েছি- এমন কথার কোনো ভিত্তি নেই, এমনটা কোথাও বলিনি। দেখা হবে মাঠে।”
ইমন যখন এই স্ট্যাটাস দিচ্ছেন, তখন পানি অনেক দূর গড়িয়ে গেছে; সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে চিটাগং কিংস তাকে একটি কানাকড়িও পারিশ্রমিক দেয়নি। তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনাও চলছে।
অবশ্য চিটাগং কিংসের কাছে ইমনের কত টাকা পাওনা, সেসব বিষয়ে তথ্য দেননি তিনি।
বিপিএল শুরুর আগেই ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর নয়-ছয় চলতে থাকে। গ্যারান্টি মানি ৮ কোটি থেকে দফায় দফায় কমিয়ে ৩ কোটিতে আনা হলেও সাড়া দেয়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। টুর্নামেন্ট মাঝপথে না আসতেই বিষয়টি মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; ভুগতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের পাওনা পরিশোধের ইস্যুতে।
ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর গড়িমসি দেখে বিপিএল শুরুর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে খেলোয়াড়দের পাওনা-দেনা নিয়ে ভবিষ্যৎতের সম্ভাব্য সংকটের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদের কাছে। তখন তিনি বলেছিলেন, “কোনো সমস্যা হলে বিসিবি-ফ্র্যাঞ্চাইজি বুঝবে।”
ফারুক আহমেদ একই সঙ্গে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যানও। তার সেই িবোঝাপড়ার আশ্বাস কথাতেই সীমাবদ্ধ থেকে গেল।
বিসিবি-ফ্র্যাঞ্চাইজি বোঝাপড়া করার আগেই শুরু হয়ে যায় জটিলতা। চট্টগ্রাম পর্বের শুরুতে দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা পাওনার দাবিতে অনুশীলন বয়কট করেন। তখন আর ঢাকায় বসে থাকতে পারেননি; বন্দরগরীতে ছুটে যেতে হয় ফারুক আহমেদকে।
চট্টগ্রামে বসেই গ্যারান্টি চেক আর ২৫ শতাংশ নগদ নিয়ে রাজশাহীর ক্রিকেটারদের সমস্যা দূর করার পথে হাঁটেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এই চেয়ারম্যান। অবশ্য তখন আবার সেই প্রশ্ন সামনে আসায় বলাবলি হয়, বিপিএলের শুরুতেই ব্যাংক গ্যারান্টি বুঝে নিলে এমন জটিলতা হতো না।
দুর্বার রাজশাহীর খেলোয়াড়দের ওই সংকটের মধ্যেই জানা গিয়েছিল, চিটাগং কিংসেরও কয়েকজন ক্রিকেটারের চেক বাউন্স হয়েছে। অবশ্য পরে সেসব ঠিক হলেও ইমনকেই শুধু কোনো টাকাকড়ি দেননি সামির কাদের চৌধুরী, যাকে তিনি ব্যক্তিগত কারণ হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।