ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় গ্রেফতার আসামির মধ্যে দুই জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ সময় একজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নওরীন করিম তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। একই আদালতে একজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর হয়। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জবানবন্দি দেওয়া আসামিরা হলেন- শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে সবুজ (৩০) ও ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শরীফুজ্জামান (২৮)। রিমান্ডে নেওয়া আসামির নাম শহিদুল ইসলাম ওরফে মহিদুল মুহিত (২৯)। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) রাতে গ্রেফতারের পর শনিবার দুপুরে ডাকাতদলের তিন সদস্যকে টাঙ্গাইল আদালতে পাঠায় পুলিশ। এর মধ্যে সবুজ ও শরীফুজ্জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রাজি হয়। শহিদুল জবানবন্দি না দেওয়ায় পুলিশ তার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নওরীন করিম শুনানি শেষ পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে সন্ধ্যায় অন্য দুই জনের জবানবন্দি আদালতের বিচারক লিপিবদ্ধ করেন।
এর আগে, শুক্রবার সকালে বাসের যাত্রী ওমর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এদিকে, দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে মির্জাপুর থানার এএসআই আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে মির্জাপুর থানা থেকে টাঙ্গাইলের পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়। এ ছাড়াও নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে প্রত্যাহার (ক্লোজড) করা হয়েছে। পরে তাকে জেলা পুলিশ সদরদফতরে সংযুক্ত হতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইউনিক রোড রয়েলস পরিবহনের একটি (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১) বাস ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীর নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় বাসটিতে ৩০ থেকে ৩৫ যাত্রী ছিলেন। পরে রাত ১২টার দিকে হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে ও হেমায়েতপুর থেকে আরও ১০ থেকে ১২ যাত্রী নিয়ে বাসটি পুনরায় রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা করে। বাসটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন চন্দ্রা বাইপাসে পৌঁছালে চা বিরতির জন্য থামে। সেখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিট চা বিরতির সময় চন্দ্রা বাইপাস থেকে আরও তিন থেকে চার জন নতুন যাত্রী নিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশে রওনা করে বাসটি।
বাসটি ওই দিন রাত দেড়টার দিকে কালিয়াকৈরের হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রমের সময় বাসে থানা ৮ থেকে ৯ জন যাত্রীবেশে ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দেখিয়ে জিম্মি করে ফেলে। এ সময় বাসচালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে পেছনের সিটে নিয়ে বসায়। তাদের মধ্যে একজন সদস্য বাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে রওনা হয়। পরে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপাড়া সাকিনের ফুটওভার ব্রিজের কাছে পৌঁছে ডাকাতরা লুণ্ঠন শুরু করে।
এ সময় যাত্রীদের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও রূপাসহ সব মালামাল ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা গাড়িটি দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়ায় গিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। এভাবেই প্রায় তিন ঘণ্টা যাত্রীদের মালামাল লুণ্ঠন ও নারীদের শ্লীলতাহানির পর আশুলিয়ার নন্দন পার্ক এলাকায় নেমে যায়। পরে চালক গাড়ি নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে গেলে গাড়িতে থাকা যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানালে কিছুক্ষণের মধ্যে টহল পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়। টহল পুলিশ মির্জাপুর থানায় বিষয়টি জানানোর পরামর্শ দেন। তারা মির্জাপুর থানায় সেবা না পেয়ে নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় গিয়ে জানান। বিষয়টি ওই এলাকায় সংগঠিত না হওয়ায় পুলিশ চালক, বাসের সুপারভাইজার ও সহকারীকে আটক করে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করে। পরে তারা ওই দিনই জামিনে মুক্তি পান।